শিরোনামঃ-

» জিম্মি উদ্ধার অভিযান শেষ, রেস্তোরা ঘিরে আছে সেনা বাহিনী

প্রকাশিত: ০২. জুলাই. ২০১৬ | শনিবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জিম্মি উদ্ধারে অভিযান শেষ। পুরো রেস্তোরাঁটি এখন সেনাসদস্যরা ঘিরে রেখেছে।

অভিযান শেষে সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় তার গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ান এক ভারতীয় দম্পতি।

তারা আইজিপির কাছে জিম্মি হয়ে থাকা তার মেয়ের খবর জানতে চান। এ সময় একজন প্রতিবেদক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওই প্রতিবেদক জানান, ওই ভারতীয় দম্পতি আইজিপিকে প্রশ্ন করেন কতজন উদ্ধার হয়েছে, তাদের কার কি অবস্থা।

জবাবে আইজিপি বলেন, এ বিষয়ে পরে জানানো হবে। এ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোট ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। বাকিদের বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

অভিযান শেষে ওই রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে আসা একজন কর্মকর্তা বলেন, ভেতরে ৫/৬ জনকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সাদা পোশাক পরা ওরা সম্ভবত ওই রেস্তোরাঁর কর্মী। তিনি রেস্তোরাঁর ভেতরে কয়েকজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছেন।

জিম্মি উদ্ধারে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার পরপর সেনাবাহিনী, সোয়াত, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবির সমন্বয়ে অভিযান শুরু হয়। অভিযান শুরুর পর মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা যায়। ৪৫ মিনিটের মাথায় সকাল ৮টা ১৬ মিনিটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে। অভিযানের সময় সেখানে সেনাবাহিনীর প্রধান, নৌ বাহিনীর প্রধানও উপস্থিত ছিলেন।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অভিযানে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, ভেতরে ৫ জন মারা গেছে। ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২ জন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। জীবিত উদ্ধার হওয়াদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে। নিহত ও উদ্ধার করা ব্যক্তিদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি।

ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকা প্রতিবেদকেরা জানান, উদ্ধার অভিযানের একপর্যায়ে ওই রেস্তোরাঁয় সাতটি অ্যাম্বুলেন্স নেওয়া হয়। সেগুলোতে অনেককে সরিয়ে আনা হয়। এদিকে অভিযান শুরুর আগে আইএসের (ইসলামিক স্টেট) কথিত বার্তা সংস্থা আমাক নিউজ ওই রেস্তোরাঁর ভেতরে তাদের হাতে নিহত কয়েকজনের রক্তাক্ত ছবি প্রকাশ করে। আমাক নিউজের সেসব ছবি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ টুইটারে প্রকাশ করে অভিযান শুরুর প্রায় আধা ঘণ্টা আগে।

ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা প্রতিবেদকেরা জানান, সাড়ে ৭টার পরপর সোয়াতের একটি দল একটি অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে ওই রেস্তোরাঁ দিকে এগোতে থাকে। এর পর পর কয়েক দিক থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সমন্বিত অভিযান শুরু করে।

এর আগে শুক্রবার মধ্য রাত থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুতিতে নিতে শুরু করেন। ভোর ৫টার দিকেই তাদের প্রস্তুতি শেষ হয়। পরে আশপাশে অবস্থান নেওয়া সংবাদকর্মীদের পুলিশ নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দেয়। শনিবার সকাল ৬টার দিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। সকাল ৭টায় ৭টি সাঁজোয়া যানসহ সেনাবাহিনীর একটি দল ওই এলাকায় অবস্থান নেয়।

এর আগে শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশানের ৭৯ নম্বরের আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ৮ থেকে ১০ জন যুবক অতর্কিত হামলা চালায়। এরপর তারা ওই রেস্তোরাঁয় থাকা লোকজনকে জিম্মি করে। জিম্মিদের মধ্যে অন্তত ২০ জন বিদেশি নাগরিকসহ ৩০-৩৫ জন আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপর থেকে পুরো ৪ কিলোমিটার এলাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রাখে।

আর্টিজান বেকারি নামের ওই রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার কিছুক্ষণ পর পুলিশের অগ্রগামী দলের ২ কর্মকর্তা জঙ্গিদের গুলি ও বোমায় নিহত হন। আহত হন অন্তত ৪০ জন পুলিশ সদস্য। নিহত ২ পুলিশ কর্মকর্তা হলেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন।

গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতাল সূত্র জানায়, ওই হাসপাতালে মোট ৩৬ জন আহত ব্যক্তিকে নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ২ জন মারা গেছেন। এখন ভর্তি আছেন ২৪ জন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

জঙ্গি হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

এই ধরনের অতর্কিত হামলা চালিয়ে মানুষজনকে জিম্মি করার ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জিম্মিদের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪৭৬ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930