শিরোনামঃ-

» আকাশ জুড়ে গাছ!

প্রকাশিত: ২১. জুলাই. ২০১৬ | বৃহস্পতিবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ ‘প্রতিবেশি মাঠে গেল বর্ষায় দেখেছি সবুজ, এই বর্ষায় সে মাঠে উঠছে বাড়ি গম্বুজ’।

কথাগুলো পশ্চিমবাংলার গায়ক কবির সুমনের শহরে বৃষ্টি গানটি থেকে নেয়া। বাস্তবিক চিত্রপটও যেহেতু সাহিত্যের উপজীব্য তাই নতুন আর বলে দেবার প্রয়োজন হয় না, আমাদের চর্তুপাশ থেকে ক্রমশ সবুজ কমে যাচ্চে। সবুজের সমাহারের স্থান দখল করে অক্সিজেন হঠিয়ে চলে আসছে কার্বন ডাই অক্সাইড। শহর থেকে শুরু করে গ্রামে পর্যন্ত এখন আর আগের মতো বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়া যাচ্ছে না।

সব জায়গাতেই অগুনতি মানুষের ভিড় আর বৃক্ষ নিধন করে নতুন নতুন দালান বানানোর পায়তারা। আমাদের সমাজের বাস্তবতা আজ এমন জায়গায় এসে ঠেকেছে যে, অধিক জনসংখ্যার চাপ সামলাতে আমাদের বৃক্ষ নিধনের দিকে যেতেই হচ্ছে।

কিন্তু তাই বলে কি মানুষ হেরে যাবে শুষ্কতার হলদেটে রংয়ের কাছে। মানুষ হারতে জানে না, পৃথিবীর ইতিহাস মানেই মানুষের জয়ের ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসকে আরও এগিয়ে নিতেই মানুষ বৃক্ষ রোপনে নতুন নতুন পন্থার দিকে আগাচ্ছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের মানুষরা বিভিন্ন কায়দায় গাছেদের বাঁচিয়ে রাখার যে চেষ্টা করছে না তা নয়। হয়তো সেই চেষ্টাটা এখনও বৃহদাকারে শুরু হয়নি, কিন্তু অল্প পরিসরে হলেও অনেকেই শহুরে বনায়নের দিকে নজর দিচ্ছে।

আগামীতে নিজেদের শহরগুলোকে সবুজ রাখার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন প্রকল্প চালু করার চেষ্টা করে যাচ্ছে আমেরিকা। প্রকল্প পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শহরের কিছু নতুন জায়গা নির্ধারণ করা হয় যেখানে খুব সহজেই গাছ লাগানো যাবে এবং তাতে পরিবেশ ভালোও থাকবে।

ইতালির মিলান শহরের বাসিন্দা ও প্রকৌশলী স্টেফানো বোরেই নিজ শহরের এবং পৃথিবীর স্বার্থে গ্রহন করেছিলেন এক চমৎকার পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে একটি টাওয়ারকে বেছে নেন নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য। স্থানীয় একটি ১১৬ মিটার উচু দালানকে বেছে নেন তিনি।

আর মজার বিষয় হলো, ওই পুরো দালানটিতে ৮০০’র বেশি গাছ লাগান তিনি এবং দালানে থাকা ব্যলকনিগুলোতেও প্রায় ১৪ হাজার গাছ লাগানো হয়। গাছ লাগানোর পর পুরো দালানের দৃশ্যপটই যেন পরিবর্তনে হয় না শুধু, পাশাপাশি একটা স্নিগ্ধ ও শীতল পরিবেশ বিরাজ করে সারাক্ষন। ২০১৪ সালে ওই পরিকল্পনাটি করেছিলেন স্টেফানো।

‘জীব বৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখা আমাদের শহুরে সমাজের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্চ। আমাদের প্রকল্পে ১০০’র অধিক বৃক্ষের প্রজাতি লাগানো হয় এবং শুধু তাই নয় ওই বৃক্ষগুলোতে কমপক্ষে বিশ ধরনের পাখি এসে বাসা বাধবে।

কারণ ওই পাখিগুলো কিছু বিশেষ বৃক্ষের শাখাতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।’ স্টেফানোর এই যুগান্তকারী প্রকল্পের কারণে ২০১৫ সালের বেস্ট টল বিল্ডিং ওয়ার্ল্ডওয়াইড নামে একটি পুরষ্কারও তিনি পান। পরবর্তী কাজের ক্ষেত্র হিসেবে স্টেফানো ও তার দল ঠিক করে রেখেছেন সুইজারল্যান্ডকে। তবে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতেও এমন কাজ করা ইচ্ছে আছে স্টেফানোর।

শুধু স্টেফানোই নয়, শহরে নগরে বসবাসরত প্রত্যেকেরই উচিত যতদ্রুত সম্ভব মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য গাছেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা। গাছেদের অস্তিত্ব না টিকলে আমাদের অস্তিত্বও হুমকির মুখে পরবে।

যুগের চাহিদা হিসেবে শিল্পায়ন বন্ধ করা না গেলেও, এর মাঝেই কিভাবে মানুষ তার সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে প্রকৃতির বৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে পারে সেদিকে আজ বিশ্বের সকলেরই নজর দেয়া উচিত। যুদ্ধ আর সংঘাতে আজ মানুষ ভুলতে বসেছে তার নিজেকে, গাছেদের স্নিগ্ধ পরশে আর অগুনতি ফুলের সৌরভে মানুষ ফিরে আসুক সেই মানুষের কাছেই বৃক্ষকে সঙ্গী করে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫২৬ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930