শিরোনামঃ-

» গোয়েন্দা তথ্যের পরও হামলা ঠেকানো যায়নি

প্রকাশিত: ২১. জুলাই. ২০১৬ | বৃহস্পতিবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ স্পষ্ট গোয়েন্দা তথ্য থাকার পরও রাজধানীসহ দেশের বেশ কয়েকটি হামলা ঠেকাতে পারেনি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে যে কোনও হামলার পর দেশের গোয়েন্দা সংস্থার দিকে অনেকেই আঙুল তুলতো। তবে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের পরও হামলা ঠেকাতে না পারায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর মহররমের রাতে রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসেনী দালানের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিতে হ্যান্ডগ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই সাজ্জাদ হোসেন সাঞ্জু নামে এক কিশোর নিহত এবং শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু আহত হন। পরে হাসপাতালে জামাল উদ্দিন নামে আরেকজন মারা যান। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। পরে মামলাটির তদন্ত শেষে ডিবি পুলিশ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

পুলিশ জানিয়েছে, হোসেনী দালানের হামলার বিষয়ে পুলিশের কাছে আগাম গোয়েন্দা তথ্য ছিল। পুলিশও তাজিয়া মিছিল না বের করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছিল। তবে তারপরও শেষরাতে তাজিয়া মিছিল বের করার প্রস্তুতি নেন অনুসারীরা। এসময় হাতে তৈরি গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।

পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা থাকার পরও এই হামলায় হতবাক হয় দেশ। ৪০ বছরের ইতিহাসে এধরনের ঘটনা এই প্রথম।

এছাড়াও গত ৪ মাসে ৭টি জঙ্গি হামলার মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে পুলিশের কাছে আগাম তথ্য ছিল। বিশেষ করে রাজশাহীর বাঘমারায় আহমদিয়া মসজিদে বোমা হামলা ও বগুড়ায় শিয়া মসজিদে হামলার আগেই কর্তৃপক্ষ পুলিশের কাছ থেকে তথ্য পেলেও তারা দায়িত্বে অবহেলা করেছে।

রাজশাহী জেলায় চারটি আহমদিয়া মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় মসজিদ রাজশাহী শহরের রানিবাজার এলাকায়। ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা হামলা করতে পারে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ এই মসজিদে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। বাঘমারা আহমদিয়া মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, পুলিশ তাদের সতর্ক করেছিল।

বিশেষ করে অপরিচিতদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়। কিন্তু পুলিশ ওই মসজিদের নিরাপত্তায় কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তবে ঠিকই এক অপরিচিত ব্যক্তি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালান।

অক্টোবরে ঢাকার হোসেনী দালানে শিয়াপন্থীদের ওপর হামলার পরপরই পুলিশ বগুড়ার শিবগঞ্জের শিয়া মসজিদ কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে। পুলিশ নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করেছিল, তবে তা ছিল মাত্র এক সপ্তাহের জন্য।

মসজিদ থেকে পুলিশ প্রত্যাহারের সময় পুলিশ মসজিদ কর্তৃপক্ষকে ৩টি পরামর্শ দিয়েছিল। প্রথমত, মসজিদ প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা; দ্বিতীয়ত, নামাজের সময় মসজিদের গেটে অন্তত দুজনকে পাহারায় রাখা এবং তৃতীয়ত, অপরিচিত কেউ মসজিদে আসলে জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্য সংগ্রহ করা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যখন মসজিদে হামলা হয় তখন মাত্র ৬০ ওয়াটের একটি বাল্ব মসজিদ প্রাঙ্গণে জ্বলছিল। কর্তৃপক্ষ কখনোই নামাজের সময় মসজিদের বাইরে পাহারায় কাউকে বসায়নি। যেদিন মসজিদে হামলা হয়, সেদিন অপরিচিত কাউকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। পুলিশ জানায়, হামলার দিন এলাকায় ৩ জন অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখা গেছে। পরে তারাই গুলিবর্ষণ করেন।

মসজিদের সেক্রেটারি মোজাফফর হোসেন বলেন, পুলিশ আমাদের সতর্ক করেছিল, এটা সত্য। কিন্তু আমরা নিরাপত্তার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেইনি। কারণ, আমাদের মনে হয়েছিল মসজিদে হামলার মতো ঘৃণ্য কাজ কেউ অন্তত করবেন না।

সর্বশেষ ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় আগাম তথ্য দিয়েছিল একটি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। পুলিশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই তথ্যের কথা ইতোমধ্যে স্বীকারও করেছেন। তবে তারপরও এই হামলা ঠেকাতে পারেননি তারা।

অপরদিকে, শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলার তথ্য ছিল পুলিশের কাছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণও করে পুলিশ। ঈদগাহের চারদিকের সড়কের আধামাইলের ভেতরে কয়েকটি চেকপোস্ট বসানো হয়। তারপরও হামলা ঠেকাতে পারেনি পুলিশ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রবিবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, শোলাকিয়ার ঈদগাহের এবং গুলশানের হামলার তথ্য আমাদের কাছে ছিল। আমরা সব জানি।

তারপর তার এই বক্তব্যের সমালোচনা হয়। এর পরদিন তিনি তার বক্তেব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল। তবে কোথায়, কখন হামলা হবে সে বিষয়ে তথ্য ছিল না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক নির্বাচন কমিশনার বি. জে. (অব.) সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিক-কে বলেন, এতদিন সাধারণ মানুষ ভাবতো গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা।

কিন্তু এখন দেখছি, সমস্যা অন্য কোথাও। গোয়েন্দা তথ্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গুরুত্ব সহকারে নেয়নি বলেই হয়ত এই হামলা হয়েছে। তা না হলে তো হওয়ার কথা নয়।

হামলার তথ্য থাকলেও স্থানের তথ্য ছিল না- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, সারা বিশ্বের গোয়েন্দা তথ্য এমনই হয়। হামলা হতে পারে এটাই বড় তথ্য। কখন হবে, কোথায় হবে এটা গোয়েন্দা তথ্যে নাও থাকতে পারে। শুধু হামলার তথ্য থাকলেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা দরকার। এমনও হতে পারে, তথ্য পাওয়ার পর হামলা নাও হতে পারে। তারপরও সবাইকে প্রস্তুতি রাখতে হবে।

এ বিষয়ে পুলিশ সদরদফতরের ডিআইজি (অপরাধ) হুমায়ুন কবীর বলেন, ওই রকমের তথ্য ছিল না। যদি নির্দিষ্ট স্থান নিদিষ্ট সময়ের উল্লেখ থাকতো তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেতো। বিষয়টি ঠেকানো যেতো। এটা একটা ‘অ্যাজামশন’ ছিল।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪৯৩ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930