শিরোনামঃ-

» মাদ্রাসার ৪টি পাঠ্যবইয়ের ২৫১টি স্থানে আপত্তি ইফা’র

প্রকাশিত: ০৩. আগস্ট. ২০১৬ | বুধবার

সিলেট বাংলা নিউজ ইসলামিক ডেস্কঃ মাদ্রাসার প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর চারটি পাঠ্যবইয়ের ২৫১ স্থানে আপত্তি দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)। সংস্থাটির মতে, পাঠ্যবইয়ে ভুল তথ্য সংযোজন করা হয়েছে। এসব ভুল কোরআন-হাদিস, ইসলামী মতাদর্শ ও জাতীয় চেতনার পরিপন্থী। ভুলগুলো জঙ্গিবাদ বিস্তারে সহায়ক হবে। তবে মাদ্রাসা বোর্ড ইফার অধিকাংশ আপত্তির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) মাধ্যমিকের ১১টি পাঠ্যবইয়ে সংশোধনী আনছে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর বই নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। মাদ্রাসা এবং স্কুলের ১৫টি বই পর্যালোচনা শেষে নতুন রূপে তৈরি করা হবে। শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালে সংশোধিত বই হাতে পাবে।

ইফা’র আপত্তি ও বই পর্যালোচনা প্রসঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম ছায়েফউল্যা যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার’ কমিটির পঞ্চম সভা থেকে মাদ্রাসার পাঠ্যপুস্তকে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়ে বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়। এর মধ্যে পাঠ্যপুস্তকের যেসব বিষয় কোরআন, হাদিস, দেশের সংবিধান ও জাতীয় চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক সেগুলো বাদ দিতে বলা হয়।

একই সঙ্গে বিশেষ রাজনৈতিক দল সম্পর্কে লেখা প্রবন্ধ বা রচনা পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত না করার নির্দেশ দেয়া হয়। চেয়ারম্যান বলেন, এ সভায় ইফা মহাপরিচালক আলিয়া মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা নামে একটি গবেষণামূলক বই উপস্থাপন করেন। এতে চারটি পাঠ্যবইয়ে ভুলত্র“টির বিষয় নজরে আনেন। পাশাপাশি এগুলো সংশোধন এবং ক্ষেত্রবিশেষ বাদ দিতে বলা হয়। চেয়ারম্যান বলেন, অপ্রাসঙ্গিক বিষয় বাদ দেয়ার জন্য আমাদের ৯টি কমিটি কাজ করছে। পাশাপাশি ইফা চিহ্নিত ভুলগুলোর বিষয়ে ৫ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

একাধিক সূত্র জানায়, কোরআন বইয়ে প্রথম শ্রেণীতে ৪টি, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৫টি, তৃতীয় শ্রেণীতে ৭টি, চতুর্থ শ্রেণীতে ১১টি, পঞ্চম শ্রেণীতে ১৩টি, ষষ্ঠ শ্রেণীতে ৮টি, সপ্তম শ্রেণীতে ৯টি, অষ্টম শ্রেণীতে ৮টি এবং নবম-দশম শ্রেণীতে ২২টি জায়গায় আপত্তি দিয়েছে ইফা। নবম-দশম শ্রেণীতে হাদিস বিষয়ে ৭টি ভুল আছে। ফিকাহ বিষয়ে প্রথম থেকে দশম শ্রেণীতে ১৪টি জায়গায় আপত্তি দেয়া হয়েছে। প্রথম থেকে দশম শ্রেণীতে আরবি সাহিত্য বিষয়ে আপত্তি সবচেয়ে বেশি, ১৪৩টি। এর মধ্যে নবম-দশম শ্রেণীর বইয়েই আছে ৩৮টি।

তবে বোর্ডের বিশেষজ্ঞ কমিটি ইফা’র অধিকাংশ আপত্তির সঙ্গে একমত নয়। ইফার আপত্তির ওপর কাজ শেষে এ কমিটি ৩৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে ২৫১টি আপত্তির ওপর দফাওয়ারি জবাব দেয়া হয়েছে। জবাবে বলা হয়, ‘ইফার গবেষক দল এমন কিছু ভুল আছে বলে রিপোর্ট দিয়েছে, মূলত তা কোনো ভুলই নয়। আবার এমন স্থানে ভুলের কথা বলেছে সেখানে সে শব্দের কোনো অস্তিত্ব নেই। আবার এমন কিছু উসকানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছে, যার কোনো বাস্তবতা নেই। অনেক স্থানে ভুল ধরিয়ে নিজেরাই ভুল করেছে। যার কোনোটাই কাম্য নয়।

মাদ্রাসা বোর্ডের প্রকাশনা নিয়ন্ত্রক মো. শাহজাহান যুগান্তরকে বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশিত আপত্তি আমাদের বইয়ের লেখক ও সম্পাদকরা নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করেছেন। তারা বেশির ভাগ বিষয়ের সঙ্গে একমত নন। আমাদের পাঠানো প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়েছে। ইফা যেসব বিষয়ে সঠিক পরামর্শ দিয়েছে, ২০১৮ সালের পাঠ্যবইয়ে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ কর্মকর্তা আরও বলেন, পাঠ্যবই আর সাধারণ বই লেখা এক বিষয় নয়।

পাঠ্যবই রচনাকালে শিক্ষার্থীর বয়স, সারা দেশের শিক্ষার্থীর সাধারণ অবস্থা, ক্লাসরুমে পাঠদান, শিক্ষকের পরামর্শ, শিক্ষকদের মান ইত্যাদি বিবেচনায় নিতে হবে। শুধু ইফা’র সুপারিশ নয়, গোটা পাঠ্যবই আমরা সাধারণ মূল্যায়ন করছি। এ লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে এর আগে ৮টি বিশেষজ্ঞ এবং একটি তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইসলামী এবং আরবি বিষয়ের এসব বই যৌক্তিক মূল্যায়নের জন্য ৬ মাসের একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। অক্টোবর নাগাদ কমিটিগুলো কাজ শেষ করবে। এরপর পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তিত ডামি প্রণয়ন করে সিডিতে তা এনসিটিবির কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫১৪ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930