শিরোনামঃ-

» বেতন দেড় লাখ, তবুও তিনি চুরিতে মশগুল

প্রকাশিত: ২৯. আগস্ট. ২০১৬ | সোমবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ বরগুনার বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রোকন উজ্জামান। মাস গেলে তিনি বেতন পান ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। সর্বশেষ পে স্কেল অনুযায়ী বৈধ অন্যান্য ভাতাসহ তাঁর মাসিক পারিশ্রমিক দাঁড়ায় দেড় লাখ টাকা। তার পরও তিনি চুরিতে মশগুল। করেন গাড়ির তেল চুরি। কখনো ঝোপঝাড় ও ডালপালা পরিষ্কারের নামে, আবার কখনো ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে ভুয়া ভাউচারে আত্মসাৎ করেন লাখ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছরের জানুয়ারিতে বরগুনাবাসীর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য একটি ডিজেলচালিত নতুন গাড়ি বরাদ্দ দেয় কর্তৃপক্ষ। সেই গাড়িতে চরেন নির্বাহী প্রকৌশলী। প্রায়ই তিনি ওই গাড়ি হাঁকিয়ে পটুয়াখালীর সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় যান প্রমোদভ্রমণে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরগুনার বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, রোকন উজ্জামান চলেন ডিজেলচালিত নতুন গাড়িতে। অথচ বিল করেন পেট্রলচালিত পুরনো গাড়ির।

রবিবার সকালে বরগুনার বিদ্যুৎ বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, পেট্রলচালিত পুরনো গাড়িটি অযত্ন-অবহেলায় বিকল অবস্থায় পড়ে আছে খোলা আকাশের নিচে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘গাড়িচালক আবদুস সালামের সঙ্গে যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে তেল চুরি করে যাচ্ছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। যা অফিসের বিল-ভাউচার নিরীক্ষা করলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে।’

বরগুনার অগ্রণী ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাড়িচালক আবদুস সালাম ও তাঁর ছেলেমেয়ের নামে ৪টি ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) রয়েছে। প্রতি মাসে সেখানে প্রায় ২০ হাজার টাকা জমা দেন তিনি। ১৫ হাজার টাকা বেতনের একজন গাড়িচালকের পক্ষে ২০ হাজার টাকার ডিপিএস জমা দেওয়ার বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগের গাড়ির তেল চুরির উত্কৃষ্ট প্রমাণ বলে মন্তব্য করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎ বিভাগের ওই কর্মকর্তা।

07

তিনি আরো বলেন, ‘ডিজেলচালিত একটি গাড়ির জন্য প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার তেল কিছুতেই লাগার কথা না।’

গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন সংযোগ নিতে প্রকৌশলী ঘুষ নেন ৫ শ টাকা। থ্রি ফেইজের সংযোগের জন্য তাঁর নির্ধারিত ঘুষ ১০ হাজার টাকা। বিভিন্ন ট্রান্সফরমারের আর্থিং স্থাপনে ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে তিনি অর্থ আত্মসাৎ করেন অর্ধেক ভাগে।

দাপ্তরিক নোটশিটে টাকা ছাড়া স্বাক্ষর করেন না। নতুন সংযোগের ফাইলে টাকার বিনিময়ে যতটা দ্রুত স্বাক্ষর করেন, ততটাই বিলম্ব করেন অন্য কাজে। বিলের তারিখ পরিবর্তন, মিটার পরিবর্তন, সংযোগ বিচ্ছিন্নের ফি জমা দেওয়া ইত্যাদি কাগজে তাঁর স্বাক্ষর নিতে দিনের পর দিন ঘুরতে হয় গ্রাহকদের।

বিদ্যুৎ বিভাগের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, স্থানীয় একটি হোটেল মালিকের সঙ্গে রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলীর সখ্য। প্রায় রাতে ওই হোটেলে রাত যাপন করেন তিনি। সম্প্রতি ওই হোটেল মালিকের বাগানবাড়ি বরগুনার মনসাতলী গ্রামে রাত্রিযাপনকালে স্থানীয় এক কিশোরীকে ঘিরে রোকনুজ্জামানের অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ ওঠে।

প্রভাবশালী ওই হোটেল ব্যবসায়ীর ছত্রচ্ছায়ায় পরে তা মীমাংসা হয়। বরগুনার আমতলার পাড়ের বাসিন্দা হস্তরেখাবিদ মাহমুদ আব্বাস জানান, তাঁর বাড়ির একটি সংযোগের জন্য ২ মাস ঘুরেছেন বিদ্যুৎ বিভাগে। ১০ হাজার টাকা না দেওয়ায় সংযোগ পাননি।

ক্রোক এলাকার মোস্তফা সরদার জানান, তাঁর বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে বিদ্যুৎ বিভাগ সাত হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। একই এলাকার বাসিন্দা করিম মাস্টার ও মাসুম বিল্লাহ জানান, সরকার নির্ধারিত সংযোগ ফির তুলনায় ৩/৪ গুণ টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হয়েছে।

শহীদ স্মৃতি সড়কের বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমার সংযোগ নিতে প্রায় ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছি বিদ্যুৎ বিভাগকে।’

বিদ্যুৎ সংযোগে বাড়তি ফি আদায়সহ সব অনিয়মের বিষয়ে প্রকৌশলী রোকন উজ্জামান বলেন, ‘এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।’ তবে গাড়ির তেলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন ভুলবশত পেট্রলের বিল করা হয়েছিল।

তবে এখন আর তা করা হচ্ছে না।’ এ বিষয়ে বরগুনা-১ (সদর, আমতলী ও তালতলী) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ‘নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উজ্জামানের নানা অনিয়মের কথা শুনেছি। জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের প্রধান হিসেবে তার আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করব।’

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪৩৬ বার

Share Button

Callender

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30