শিরোনামঃ-

» ফেল থেকে পাস ৪১৯, জিপিএ-৫ বাড়ল ১৮৫

প্রকাশিত: ১৮. সেপ্টেম্বর. ২০১৬ | রবিবার

সিলেট বাংলা নিউজ প্রতিবেদক মো. আজিজুর রহমানঃ চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের ফল শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) প্রকাশ হয়েছে। বিভিন্ন বোর্ড থেকে আলাদাভাবে প্রকাশিত ফল ৬টি বোর্ডের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে।

 

এসব বোর্ডের আগের ফলাফলে ফেল করা মোট ৪১৯ জন পরীক্ষার্থী পুনঃনিরীক্ষণে পাস করেছে। আর নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮৫ জন।

৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডসহ ১০ বোর্ডে এবার প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে বলে জানা গেছে। পুনর্নিরীক্ষণে প্রত্যেকের ফলই আগের তুলনায় ভালো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৯ জন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে। এই বোর্ডে নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১১৫ জন এবং ফেল করা থেকে পাস করেছে ২০৪ জন পরীক্ষার্থী।

 

তবে প্রশ্ন থেকে যায়, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে এমন কেন হয় ? আর এর জন্য প্রশ্ন উঠছে শিক্ষা বোর্ডের অবহেলা এবং শিক্ষকদের উদাসীনতাকে নিয়ে। এদের কারণে প্রতি বছরই হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভুল ফল মূল্যায়নের শিকার হচ্ছে। প্রথম দফায় অনেকে ফেল বা কম জিপিএ পাচ্ছে। পরে ফল পুনঃনিরীক্ষায় ফেল থেকে পাস করছে, জিপিএ-৫ পাচ্ছে এমন নজির আছে।

অন্যদিকে পরীক্ষা না দিয়েও আছে পাসের দৃষ্টান্ত। এছাড়া পরীক্ষার হলে ভুল প্রশ্ন বিতরণ, ব্যবহারিক পরীক্ষায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে নম্বর কম-বেশি দেয়ার ঘটনাও ঘটছে।

 

অভিযোগ ওঠেছে, এ ধরনের প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তা এবং কিছু শিক্ষক জড়িত। পরীক্ষা শেষে খাতা বণ্টনের সময় অনেক ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে থাকেন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তারা। কম যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষককে অধিক পরিমাণে খাতা দেয়া হয়।

যোগ্য শিক্ষকদের অনেকেই বোর্ডের পরীক্ষক হতে পারেন না। উত্তরপত্র (পরীক্ষার খাতা) মূল্যায়নের জন্য সময় দেয়া হয় মাত্র ২ সপ্তাহ। এ সময়ের মধ্যে তিনশ’ খাতা ভালোভাবে দেখা সম্ভব।
কিন্তু দেয়া হয় ছয়শ’ থেকে ৭ শ’ খাতা। অভিযোগ আছে, সময় স্বল্পতার অজুহাতে পরীক্ষকরা অন্য ছাত্র বা পরিবারের সদস্যদের দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করিয়ে থাকেন। নম্বর যোগ করার সময় মনোযোগ দেয়া হয় না। এতে পরিসংখ্যানগত ভুল বাড়ছে। এতে রেজাল্ট পাল্টে যাচ্ছে।
অমনোযোগিতার কারণে কোনো বিষয়ে প্রাপ্ত ৮৬ নম্বর, ৬৮ হিসেবে রেজাল্ট শিটে ওঠছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার অনেকেই ফেল করছে। ফল পুনঃনিরীক্ষায় গিয়ে এসব ভুল ধরা পড়ছে। পাল্টে যাচ্ছে ফলাফল। কিন্তু যারা আবেদন করে না, তারা সুবিচার বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে।

 

পরীক্ষা ও ফলকেন্দ্রিক এসব ঘটনার কারণে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। ভুক্তভোগী ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে এসব নিয়ে ক্ষোভ আছে। কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক কোনো পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে ভুলভ্রান্তির অন্যতম কারণ হচ্ছে তাড়াহুড়ো করে খাতা দেখা। কয়েক বছর ধরে যথাসময়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফল ঘোষণা করে সরকারি মহল থেকে কৃতিত্ব নেয়ার চেষ্টা চলে। এটা করতে গিয়ে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
নাম প্রকাশ না করে একাধিক পরীক্ষক জানিয়েছেন, খাতা মূল্যায়ন করতে খুব কম সময় দেয়া হয়। রাজধানীর একটি কলেজের শিক্ষক বলেন, বোর্ড থেকে দেয়া খাতা ১৪ দিনের মধ্যে জমা দিতে হয়।
এই সময়ে সর্বোচ্চ ৩০০ খাতা ঠিকমতো মূল্যায়ন সম্ভব। কিন্তু ৫০০ থেকে ৭০০ খাতা দেয়া হয়। এতেই ভুলের ঘটনা ঘটে থাকে, অনেক ক্ষেত্রে সঠিক মূল্যায়নও হয় না। এর খেসারত দিতে হয় শিক্ষার্থীদের।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, পরীক্ষার সঙ্গে একজন শিক্ষার্থীর সারা জীবনের সুখ-দুঃখ জড়িত। অবহেলা বা উদাসীনতার সঙ্গে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজ করা ঘোরতর অন্যায়। অনেক ভুলকে ‘মানবিক’ হিসেবে দেখা যায়।
কিন্তু কিছু ভুল ক্ষমার অযোগ্য। আমরা কঠিন ভুলের ক্ষেত্রে কঠোর হব। এবারের পুনঃনিরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থীর ফল উন্নয়ন হয়েছে, তাদের কেস পর্যালোচনা করে দায়-দায়িত্ব নিরূপণ শেষে উপযুক্ত শাস্তির জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠাব।

 

তিনি জানান, এ বোর্ডে এবার ৪১ হাজার ১৫১ জন ফল চ্যালেঞ্জ করে। তারা সর্বমোট ১ লাখ ২৬ হাজার ৪৩২টি উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করে। আবেদনকারীদের মধ্যে ১০০৯ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১৫ জন। ফেল থেকে পাস করেছে ২০৪ জন।

 

মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম ছায়েফউল্যা জানান, মোট ১২ হাজার ২৪৮ জন ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করে। তাদের মধ্যে ১০৫ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। ফেল থেকে পাস করেছে ৫৩ জন। গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে ৩৯ জনের। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ জন।

 

সিলেট বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছে ২৩ জন। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ জন এবং ফল পরিবর্তন হয়েছে ৭১ জনের।

 

বরিশাল বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছে ৩০ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ জন।

 

কুমিল্লা বোর্ডে নতুন করে ২৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ফেল থেকে পাস করেছে ৭০ জন।

 

যশোর বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৯ জন ও ফেল থেকে পাস করেছে ৩৯ জন পরীক্ষার্থী।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪৮৩ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930