শিরোনামঃ-

» স্মার্টকার্ড বিতরণে ভোগান্তির ‘শঙ্কা’ খোদ ইসি কর্মকর্তাদের

প্রকাশিত: ২২. সেপ্টেম্বর. ২০১৬ | বৃহস্পতিবার

সিলেট বাংলা নিউজ প্রযুক্তি ডেস্কঃ নাগরিকের হাতে কদিন পরেই উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) তুলে দিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। পরের দিন ৩ অক্টোবর থেকেই এটি বিতরণ কার্যক্রম শুরু করতে চায় সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠান। তবে সুষ্ঠু পরিকল্পনা না করায় স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন খোদ ইসি কর্মকর্তারাই।

আগামী ৩ অক্টোবর থেকে নাগরিকদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার কাজ শুরু করার কথা থাকলেও কীভাবে এটি নাগরিকের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে, তার কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা হয়নি। কমিশন মূলত বর্তমানে ২ অক্টোবর উদ্বোধন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে।

ইসি সূত্রে জানা যায়, ২ অক্টোবর উদ্বোধন অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করতে ২১টি উপকমিটি গঠন করেছে ইসি। কিন্তু এসব কমিটিতে থাকা বেশির ভাগ কর্মকর্তা তাঁদের দায়িত্ব সম্পর্কে জানেন না।

সূত্র জানায়, উদ্বোধন অনুষ্ঠান সফলভাবে আয়োজনের জন্য সার্বিক কার্যক্রম অগ্রগতি নিয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যালোচনা সভা করে ইসি।

ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম সভায় সভাপতিত্ব করেন। এ সময় তিনি উদ্বোধন অনুষ্ঠানের জন্য গঠিত কমিটির কাছে সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে অধিকাংশ কর্মকর্তাই তাঁদের দায়িত্ব সম্পর্কে জানেন না বলে উল্লেখ করেন।

সূত্র আরো জানায়, যাঁরা মাঠ পর্যায়ে এই কার্ড বিতরণ করবেন, তাঁদের সঙ্গে এখনো সমন্বয় করা হয়নি। আর বিতরণ কর্মসূচি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তা এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি ইসি। এমনকি যে কমিটিতে তাঁদের নাম রয়েছে, সে বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না।

শুধু কাগজে-কলমে কমিটিতে রয়েছেন। এ ছাড়া সভায় ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও ঢাকার থানা কর্মকর্তারা কার্ড বিতরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকটা হতাশা প্রকাশ করেছেন।

কর্মকর্তাদের মতে, ৩ অক্টোবর থেকে ভোটারদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু নাগরিকদের ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়ার পাশাপাশি কীভাবে কার্ড বিতরণ করা হবে, সেই কর্মপরিকল্পনার কথা এখনো জানেন না ইসির মাঠ কর্মকর্তারা।

মাঠ কর্মকর্তারা বলছেন, কার্ড বিতরণের কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে। শত শত মানুষ কার্ডের জন্য লাইনে দাঁড়াবেন। তখন একজন নাগরিকের ১০ আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি, পুরাতন কার্ড জমা নেওয়ার ও নতুন কার্ড খুঁজে পেতে দীর্ঘ সময় লাগবে।

এই কার্ড নিতে এলে নাগরিকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তখন এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির শঙ্কাও রয়েছে। এ ছাড়া বিতরণের জন্য পর্যাপ্ত লোকবলও লাগবে। কিন্তু ভোটার তালিকা প্রকল্পের কর্মকর্তা এসব বিষয় নিয়ে ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়ও করছেন না।

এ বিষয়ে একাধিক থানা নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, কার্ড বিতরণ নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু ভোটার তালিকা প্রকল্প থেকে কোনো পরিকল্পনা দেওয়া হয়নি। হঠাৎ করে লাইনে যখন শত শত লোক কার্ড নিয়ে দাঁড়াবে, তখন কী হবে? একটা কার্ড খুঁজে পেতেই অনেক সময় লাগবে।

আবার নাগরিকের ১০ আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি, পুরাতন কার্ড জমা নেওয়ার ব্যাপার তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে কার্ড বিতরণ নিয়ে এখনই সঠিক পরিকল্পনা হাতে না নিলে সাধারণ মানুষের তোপের মুখে পড়তে হবে তাদের।

তবে তাঁরা এও বলেন, আগে থেকেই সঠিক পরিকল্পনা ও জনবল দিলে তাঁরা এ বিতরণের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন। এনআইডি নম্বরের আগে জন্মসাল লেখা থাকত, তাই এটি বিতরণের সময় সাল ধরে করলে সহজ হতো;

কিন্তু এখন ১০ ডিজিটের কার্ড বিতরণের সময় কার্ড খুঁজে পেতে কোনো সমস্যা হবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ঢাকা সিটিসহ  প্রত্যেকটি জেলার ভোটার তালিকা ধরে এটি বিতরণ করা হবে।

তাই কোনো সমস্যা হবে না। যেমন ঢাকার ২ সিটিতে ৯৭টি ওয়ার্ড আছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ক্যাম্প করা হবে। আর কবে কোন ওয়ার্ডে এটি দেওয়া হবে, তা আগেই সেই ওয়ার্ডে জানিয়ে দেওয়া হবে।

ইসি সচিবের বক্তব্যের বিষয়ে একাধিক জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, এ বিষয়ে তাঁদের কিছু জানা নেই। ইসি সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৪ জানুয়ারি ১৮ মাসের মধ্যে ৯০ মিলিয়ন (নয় কোটি) স্মার্টকার্ড তৈরি করে দেওয়ার জন্য ফ্রান্সের ‘অবার্থার টেকনোলজিস’ নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে ইসি।

চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের জুনে নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড দেওয়ার কথা ছিল ইসির। কিন্তু সময়মতো না দিতে পারার আশঙ্কা ইসি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ব্যয় না বাড়ানোর শর্তে এ প্রকল্পে আরো ১৮ মাস সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নেয়।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ১০ কোটি ভোটারের মধ্যে মোটামুটি নয় কোটির হাতে লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) রয়েছে।

প্রথম থেকে এ সেবা বিনামূল্যে দেওয়া হলেও গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ফি নেওয়া শুরু করে কমিশন। ইসি ২০০৭ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন কার্যক্রম শুরু করে। দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। এদের মধ্যে প্রায় ৯ কোটি নাগরিকের হাতে লেমিনেটেড এনআইডি রয়েছে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫৩১ বার

Share Button

Callender

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30