শিরোনামঃ-

» আজ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভ দীপাবলি বা আলোর ‍উৎসব

প্রকাশিত: ২৯. অক্টোবর. ২০১৬ | শনিবার

সিলেট বাংলা নিউজ নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আজ শুভ দীপাবলি বা আলোর উৎসব। অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ শক্তির বিজয়ের প্রতীক শুভ  দেওয়ালি বা দীপাবলি। বিশ্বের হিন্দু, শিখ ও জৈনধর্মাবলম্বীরা আজ সন্ধ্যায় সহস্র প্রদীপ জ্বালিয়ে শুভ দীপাবলি উৎসব উদযাপন করবে।

এ ছাড়া হিন্দুধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্যামাপূজা বা কালীপূজাও অনুষ্ঠিত হবে আজ। মূলত দীপাবলি উৎসবের মাধ্যমে সুখ, শান্তি, জ্ঞান ও সম্পদ দেওয়ার জন্য এই সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। প্রাচীন প্রথা অনুসারে দীপাবলির সন্ধ্যায় তেল দিয়ে সহস্র মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়।

এখনো অনেক স্থানে এই প্রথা চালু আছে। তবে বর্তমানে শহরাঞ্চলে অনেকে তেলের প্রদীপের পরিবর্তে মোমবাতি ব্যবহার করেন। হেমন্ত প্রকৃতি নতুন সাজে সজ্জিত।শিউলিঝরা প্রভাতে চড়া রোদে সামান্য ঘাম, রাতে একটু শীতের আমেজ, নবান্নের আগমন, নতুন ধানের ম-ম গন্ধ। অন্যদিকে বাঙালি হিন্দুদের উৎসবের মৌসুম।

পরপর দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজা, কালীপূজা। মা কালীকে নিয়ে এ দেশে যে বিশেষ উৎসবটি ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে সেটি দেওয়ালি বা দীপাবলি উৎসব। বাংলার গ্রামগঞ্জে শহরে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে এই উৎসব পালিত হয় বলে এ উৎসবের মাঝে আলাদা মাদকতা ছড়িয়ে থাকে।

হিন্দুমতে, দীপান্বিতা অমাবস্যার প্রধান আরাধ্য দেবী হলেন দক্ষিণা কালী। কালী করলাবন্দনা, মুক্তকেশী, মহামেঘের মতো তার বর্ণ। মুখে বিকশিত দন্তপঙ্‌ক্তি। দুই অধরপ্রাপ্ত বেয়ে পড়ছে রক্তধারা।

গলায় মুক্তমালা, কর্ণে শিশুশবের কর্ণ ভূষণ। মা কালীর চার হাত। বাঁদিকে উপরের হাতে রক্তমাখা খোপানসী খড়গ, নিচের হাতের সদচ্ছন্দ মুন্ড। ডানদিকের হাতে দুটিতে অভয় ও বর।মহাদেবের বুকে পা রেখে দেবী যেন নৃত্য করছেন।

আপাতদৃষ্টিতে মা কালী ভীষণ ভয়ংকরী। ভক্তের দৃষ্টিতে তিনি সর্বময় সর্বঙ্গলা সুন্দরী। তিনি মাধুর্যময়ী, মহাবিদ্যা, মহাশক্তি। মা কালী তার জীবনের প্রেরণা, কর্মে শক্তি বিপদের আশ্রয়। মা

শক্তির আরাধনার পরিসমাপ্তিতে দীপাবলির দীপশিখায় চারদিক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল আলোয়।  শ্যামাপূজা বা কালীপূজার পরেই ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। সব দিক দিয়ে বিচার করলে এই উৎসবটিকে বাঙালি হিন্দুর শ্রেষ্ঠ সামাজিক অনুষ্ঠান বলা যেতে পারে। শুভদিনের পরম পবিত্র লগ্নে ভাই-বোনের মধুর সম্পর্কের পুনঃ নবীকরণ করে নেওয়া হয়

প্রতিবছর। শৈশবের হারিয়ে হাওয়া মধুর স্মৃতিগুলো যেন এই দিনটিতে বড় বেশি করে মনে পড়ে যায়। ভাই-বোনের স্নেহ ভালোবাসার সম্পর্কের প্রকাশ ভাইফোঁটার আচার অনুষ্ঠানটি মন কেড়ে নেয়। একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চিরন্তন আবেগ অনুভূতিই জীবন্ত হয়ে ওঠে। কার্তিক মাসের শুক্লা পক্ষে দ্বিতীয় তিথিতে বোন তার ভাইকে পরম যত্নসহকারে একটি সুন্দর আসনে বসান। শিশির ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে হাতের ৩ আঙুলের সাহায্যে বোন তার ভাইয়ের কপালে ধুয়ে দেয়।

এই কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে একইভাবে চন্দন তিলক এঁকে দিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করে-ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়লো কাটা। যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই ভাইফোঁটা। হেমন্তের পবিত্র শিশির দিয়ে বোন তার ভাইয়ের সব অশুভ অমঙ্গল ও অকল্যাণকর শক্তিকে ধুয়ে দেয়। সুগন্ধি চন্দন তিলক ললাটে এঁকে দিয়ে এনে দেয় সৌভাগ্যের পরশমণি।

তারই সঙ্গে অমরত্বের প্রতীক দুর্বা আর ধনের প্রতীক ধান দিয়ে প্রার্থনা বা আশীর্বাদ করে ভাইয়ের সব কল্যাণের জন্য। অন্যদিকে ভাই বোনকে আশীর্বাদ বা তার মঙ্গল কামনা করে।

ভাই-বোনের এই আকুতিতেই তো ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন গ্রন্থে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। ভবিষ্যৎ পুরাণে বলা হয়েছে, যমী (যমুনা) তার ভাই যমকে কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে নিজ গৃহে এনে পূজা করে ভোজনে আপ্যায়িত করেছিলেন।জনশ্রুতি আছে সেই থেকেই ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার উৎসব পালন হয়ে আসছে।

অন্যদিকে ১৩৩৬ খ্রিষ্টাব্দে আচার্য্য সবানন্দ সুরীর পুঁথির শেষ শ্লোকে বলা হয় মহাবীরের জীবনবাসন হলে রাজা নন্দী বর্ধন বোনের শোক নিবারণের জন্য বোনকে বুঝিয়ে আদর যত্ন করে আপ্যায়ন করেছিলেন।

দীপাবলির উৎসবের মধ্যে মা কালীর আরাধনায় মৃত্যুর অধিপতি যমের বিতাড়ন ও অশুভ শক্তিকে প্রতিরোধ অন্যদিকে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া যমের দুয়ারে কাঁটা দিয়ে ভাইয়ের দীর্ঘায়ু ও সৌভাগ্য কামনা করা হয়।

রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সহস্র প্রদীপ জ্বালানো হবে।সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরের দিঘিরপাড়জুড়ে সন্ধ্যায় ৫ সহস্রাধিক প্রদীপ জ্বালানো হবে।

এই মন্দিরে ফানুস ওড়ানো ও ঘণ্টাব্যাপী আতশবাজি পোড়ানো হবে।রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির ও শ্মশানে আজ মধ্যরাতে শক্তির প্রতীক শ্যামাপূজা বা কালীপূজা করা হবে। বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরে রাত ১২টা এক মিনিটে কালীপূজা শুরু হবে। পূজার হোম, যজ্ঞ ও অঞ্জলি দেওয়া শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হবে।

এ ছাড়া রাজধানীর জগন্নাথ হল, রমনা কালীমন্দির, বনগ্রাম রোডের রাধাগোবিন্দ জিউ ঠাকুর মন্দির, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসহ পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, শাঁখারীবাজারের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে রীতি অনুযায়ী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ১৭১১ বার

Share Button

Callender

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30