শিরোনামঃ-

» দেখার আনন্দে না ছোঁয়ার কষ্ট

প্রকাশিত: ০১. নভেম্বর. ২০১৬ | মঙ্গলবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ একই বংশ বা সম্প্রদায়ের মানুষ। কেউ আত্মীয়। আবার কেউ প্রতিবেশী। কিন্তু সীমান্ত তাদের ২ দেশের বাসিন্দা করে দিয়েছে। তাই দীর্ঘদিন ধরে প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা নেই।

সেই মুখ গতকাল রবিবার দেখে আপ্লুত হয়েছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বালিয়াদীঘি ও পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার গরমোহলী সীমান্তের প্রায় ১০ হাজার মানুষ।

কিন্তু ১০ ফুট প্রস্থের কাঁটাতার তাদের মিলতে দেয়নি। প্রিয়জনকে না ছুঁতে পারার কষ্টে কেঁদেছে অনেকে। অনেকে প্রিয়জনের মুখটা বারবার খুঁজেও পায়নি। কাঁটাতারের বেড়া এপার-ওপার মানুষের বেগ দমাতে পারলেও কমাতে পারেনি আবেগ।

গত শনিবার ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্যামাপূজা। দুই পারের মানুষের কাঁটাতারের বেড়ার দুই পার থেকে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় রবিবার ভোর থেকে জড়ো হতে থাকে তারা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) সদস্যরা ভোর থেকে হিমশিম খান এসব মানুষকে সামলাতে। প্রথম দিকে তাদের কাঁটাতারের কাছাকাছি ঘেঁষতে দেয়নি সীমান্তরক্ষীরা। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নজরদারি শিথিল করায় মানুষজন কাঁটাতারের কাছে ভিড়েছে।

চাঁদপুর থেকে আসা পূর্ণিমা রানী বলেন, ‘এপারের যেমন অনেকের আত্মীয়স্বজন ওপারে আছে, তেমনি ওপারের অনেকের আত্মীয়স্বজন এপারে আছে। কয়েক হাজার মানুষ সকাল থেকে অপেক্ষা করতে থাকে ওপারের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য। শেষে দুপুর ১২টার পর বিজিবি সদয় হলে আমার মতো অনেকের সুযোগ হয় স্বজনদের দেখার।’

চাঁপাইবাবগঞ্জের সুনিল বলেন, ‘৫ বছর পর এসেছি স্বজনদের সঙ্গে দেখা ও কুশল বিনিময়ের জন্য। ১০-১২ জন স্বজনের সঙ্গে বেড়ার ওপার থেকে দেখা ও কথা হয়েছে। সামান্য কিছু উপহার বিনিময় হয়েছে কাঁটাতারের ওপর দিয়ে।’

গোমস্তাপুরের বাবলু ঘোষ বলেন, ‘ভারতে আমাদের ৬০-৭০ জন আত্মীয় বাস করে। দীর্ঘদিন তাদের সঙ্গে দেখা হয় না। কেউ মারা গেলে জটিলতার কারণে দেখতেও যেতে পারি না। আজ (রবিবার) দেখা হলো, কথা হলো। কুশল ও সামান্য উপহার বিনিময় হলো।’

তিনি আরো বলেন, ‘পাসপোর্ট ছাড়াই একটি বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ২ পারের মানুষ সহজে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারে। ভারত-বাংলাদেশ উদ্যোগ নিয়ে কম সময়ের জন্য হলেও এমন পদ্ধতি চালু করতে পারে। তাহলে ২ পারের মানুষ উপকৃত হতো।’

উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রায় ২৮ কিলোমিটার ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের আগে ২ পারের মানুষের যাতায়াত ছিল নির্বিঘ্ন। এপার-ওপারে হয় বিয়ে। ২ পারে বাড়ে স্বজনদের সংখ্যা। বেড়া নির্মাণ হলেও ২ পারের মানুষদের বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়নি। তাই ২ পারের লোকজন স্বজনদের একপলক দেখার জন্য এ দিনের অপেক্ষা করে সারা বছর।

শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রতিবছর এই দিনে ২ দেশের নাগরিকরা এভাবে দেখা-সাক্ষাতের চেষ্টা করে। কখনো কখনো বিজিবি-বিএসএফের কড়াকড়ির কারণে দেখা-সাক্ষাৎ হয় না।

যেহেতু উভয় দেশের নাগরিকদের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে, সে কারণে সরকারি উদ্যোগে টোকেনের মাধ্যমে বছরে অন্তত একবার দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া উচিত।’

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৩৮৮ বার

Share Button

Callender

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30