শিরোনামঃ-

» সৌদি প্রবাসী’র প্রতারনার শিকার ৭ম শ্রেণির ছাত্রী এখন সন্তানের ‘মা’

প্রকাশিত: ২২. নভেম্বর. ২০১৬ | মঙ্গলবার

কানাইঘাট প্রতিনিধি:: সিলেটের কানাইঘাট দিঘীরপার পূর্ব ইউপির দর্পনগর পশ্চিম পূর্ব কোনাগ্রামের হত দরিদ্র এবাদুর রহমানের মেয়ে কানাইঘাট সড়কের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী মারজানা বেগম (১৩)। নবজাতক সন্তান নিয়ে ন্যায় বিচারের আশায় প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘোরছে তার পরিবার।

জানা যায়, একই গ্রামের প্রতিবেশী সৌদি প্রবাসী বাবুল আহমদ দ্বারা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে জোরপূর্বকভাবে ধর্ষণ ও পরে একাধিকবার দৈহিক মেলামেশার ফলে কিশোরী মারজানা বেগম এর গর্ভে জন্ম নেওয়া ঔরষজাত নবজাতক সন্তানের পিতৃ পরিচয় ও বিয়ের স্বীকৃতির দাবীতে আদালতে মামলা দায়ের করেছে তার পরিবার।

অসহায় মারজানা বেগমের মা হুসনা বেগম (৪৮) বলেন, তার মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দৈহিক মেলামেশার ঘটনায় জন্ম নেওয়া নবজাতক সন্তানের জন্মদাতা একই গ্রামের মৃত জামাল উদ্দিনের পুত্র সৌদি প্রবাসী বিবাহিত মো. বাবুল আহমদ (৩৫) এবং মারজানাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের ঘটনায় বাবুল আহমদের ভাই দুলু মিয়া (৪৫), ফারুক মিয়া (৩১), প্রবাসী বাবুল আহমদের স্ত্রী সিফা বেগম (২৭) কে আসামী করে গত ২৫ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতের মামলা নং- ৫৬৯/১৬ইং দায়ের করেন।

বিজ্ঞ আদালত দরখাস্ত মামলাটি এফআইআর গণ্য করে আসামীদের গ্রেফতার ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কানাইঘাট থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবিরকে নির্দেশ প্রদান করেন। আদলতের নির্দেশে থানায় মামলাটি এফ আই আর করা হয়। থানার মামলা নং- ০৮, তাং- ১০/১১/২০১৬ইং।

গত শনিবার থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবির সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং মারাজানার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে সবধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করেন।

ভিকটিম মারজানা বেগমকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে গত রবিবার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত-৫ এ হাজির করলে বিজ্ঞ আদালত মারজানা বেগমের ২২ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

এদিকে দরিদ্র পরবারের মেয়ে ৭ম শেণির ছাত্রী দৈহিক সম্পর্কের ফলে সন্তান জন্ম নেওয়ায় এ নবজাতকের পিতৃত্ব দাবী করে প্রবাসী বাবুল আহমদ ও তার ২ ভাইকে আসামী করায় মারজানার পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে আসামীপক্ষের লোকজন।

সরেজমিনে গত সোমবার স্থানীয় সাংবাদিকরা মারজানা বেগমের বাড়ীতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে আসামীপক্ষের লোকজন কর্তৃক মামলার বাদী মারজানা বেগমের মা হোসনা বেগম, পিতা এবাদুর রহমান সহ তার পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি, সামাজিকভাবে গ্রাম্য কতিপয় মাতব্বরগণ কর্তৃক সমাজচ্যুত ও অকালে সন্তান জন্ম দেওয়া মারজানা বেগম ও তার স্কুল পড়ুয়া তৃতীয় শ্রেণীর বোন সহ পরিবারের সদস্যদের সাথে কু-রুচিপূর্ণ কথাবার্তা ও আচরণ করছে মামলার আসামী ফারুক আহমদ, দুলু মিয়া ও প্রবাসীর স্ত্রী সিফা বেগম এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগে জানা যায়, পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় দরিদ্র পরিবারের মেয়ে মারজানা বেগম প্রতিবেশী সৌদি প্রবাসী বাবুল আহমদের বাড়ীতে থেকে গৃহের কাজকর্ম ও পাশাপাশি প্রবাসী নিয়মিতভাবে লেখাপড়া করে আসছিল।

বাবুল আহমদ সৌদি আরবে থেকে ২ বছর পর পর ছুটি নিয়ে দেশে নিজ বাড়ীতে আসত। তার ২টি সন্তানও রয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারী মাসে বাবুল আহমদ প্রবাস থেকে ছুটি নিয়ে নিজ বাড়ীতে আসার পর থেকে তার গৃহে বসবাসরত সম্পর্কে আত্মীয় ৭ম শ্রেণির ছাত্রী কিশোরী মারজানা (১৩) কে তার স্ত্রী সিফা বেগমের অগোচরে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখাত।

সে মারজানাকে বলতো তাকে বিয়ে করলে, তার নামে ব্যাংকে একাউন্ট খুলে টাকা রাখবে, স্বর্ণ দিবে এসব কথাবার্তা বলে মারজানা বেগমকে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করলে সে প্রবাসী বাবুল আহমদের স্ত্রী সিফা বেগমকে ঘটনাটি খুলে বললে সিফা বেগম মারজানাকে ধমক দিয়ে বলে এসব কথাবার্তা তুই আর কখনও বলবি না বলে মারজানাকে শাষানো হতো।

বিগত ২০ মার্চ প্রবাসী বাবুল আহমদ তার পাকা গৃহের একটি কক্ষে একা ঘুমন্ত অবস্থায় গভীর রাতে তার স্ত্রীর অগোচরে মারজানা বেগমের কক্ষে প্রবেশ করে তার হাত-পা বেঁধে মুখে ওড়না পেঁচিয়ে প্রবাসী বাবুল আহমদ কিশোরী মারজানা বেগমকে জোরপূর্বকভাবে ধর্ষণ করে।

এরপর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার মারজানার সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলে বাবুল আহমদ। দৈহিক সম্পর্কের ফলে মারজানা বেগম অন্তঃসত্বা হয়ে পড়লে কিশোরী মেয়েটি তার পেটে ব্যাথা করছে বলে ঘটনাটি একাধিকবার তাদের জানায়।

তখন বাবুল আহমদ ও তার স্ত্রী সিফা বেগম বলে, ‘এটি পেট ব্যাথা ছাড়া আর কিছু নয়’ এটি মারজানাকে বুঝায়।

এভাবে দৈহিক সম্পর্কের একপর্যায়ে মারজানা ৫ মাসের অন্তঃসত্তা হয়ে পড়লে সে ঘটনাটি জেনে তার মা হোসনা বেগম ও বাবা এবাদুর রহমানকে জানালে তারা গ্রামের মুরব্বীয়ানদের কাছে বিচারপ্রার্থী হন।

গ্রামের কতিপয় মাতব্বররা বিষয়টি সমাধান করে দেবেন বলে কালক্ষেপন করতে থাকেন। এরই ফাঁকে মারজানা বেগমের ইজ্জত হরনকারী প্রবাসী বাবুল আহমদ গত সেপ্টেম্বর মাসের ১ম সপ্তাহে সবার অগোচরে সৌদি আরবে পালিয়ে যায়।

বাবুল আহমদের পরিবারের সদস্যরা অন্তঃসত্বা মারজানাকে বাবুল আহমদের সাথে বিয়ে দিবেন বলে আশ্বস্থ করে ঘটনাটি কাউকে আর না বলার জন্য তার পরিবারের সদস্যদের বলেন।

গত ২০ অক্টোবর বাবুল আহমদের গৃহে বসবাসরত মারজানা বেগমের প্রসব ব্যাথা উঠলে তাকে গর্ভপাতের ঔষধ জোরপূর্বক খাওয়ার জন্য বাবুল আহমদের ভাই ফারুক আহমদ, দুলু মিয়া ও বাবুল আহমদের স্ত্রী সিফা বেগম অনেক চেষ্টা করে।

সে ঔষধ খেতে অস্বীকৃতি জানালে বেধড়ক মারধর এবং গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য উপর্যুপরি পেটে লাথি মারলে মারজানা বেগম গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঐদিন তার নিজ বাড়ীতে সাড়ে ৬ মাসের একটি অসুস্থ নবজাতক শিশু ছেলের জন্ম দেয়।

গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মারজানা বেগম ও তার নবজাতক সন্তানকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ২১ অক্টোবর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ তাকে ও তার শিশুকে সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও.সি.সি ওয়ার্ডে প্রেরণ করেন।

সেখানে বেশ কয়েকদিন মারজানা চিকিৎসাধীন ছিল। সামাজিকভাবে নবজাতক সন্তানের ঔরষজাত পিতার অধিকার ও বিয়ের স্বীকৃতির দাবীতে সমূহ অভিযোগ এনে প্রবাসী বাবুল আহমদ ও তার ২ ভাই, স্ত্রী’কে আসামী করে মামলা দায়ের করেন তার মা হোসনা বেগম।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন কাজল এবং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা হলে তারা বলেন, অবুঝ কিশোরী মারজানা বেগমের এ ঘটনার জন্য প্রবাসী বাবুল আহমদকে দায়ী করে বলেন, সে মারজানার এ সর্বনাশ করেছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।

সে যেন ন্যায় বিচার ও তার সন্তানের পিতার স্বীকৃতি পায় এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের কাছে জোরদাবী জানাচ্ছি। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, প্রবাসী বাবুল আহমদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নারী গঠিত বহু অভিযোগ রয়েছে।

তার ভাই দুলু মিয়া ৩টি বিয়ে করেছে, ফারুক আহমদ ২টি বিয়ে করেছে। দুলু মিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে নারী নির্যাতনের মামলা রয়েছে।

মামলার আসামী দুলু মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার প্রবাসী ভাই বাবুল আহমদের বাড়ীতে থেকে সংসারের কাজকর্ম ও লেখাপড়া করত।

তার ভাই মারজানার সন্তানের পিতা হলে তার বিচার হউক, কিন্তু সে প্রবাসে রয়েছে।

আমি বা আমার ভাই ফারুক মিয়া সম্পূর্ণভাবে নির্দোশ। আমরা মারজানার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছি না।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫৮৮ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930