শিরোনামঃ-

» গণ আদালতেই বিচার হবে এসব জঙ্গিবাদ ও উসকানিদাতাদের

প্রকাশিত: ১১. জানুয়ারি. ২০১৭ | বুধবার

ডেস্ক সংবাদ:: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা মানুষ হত্যা করে এবং যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানায়, তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। তারা সন্ত্রাসী-জঙ্গি। জঙ্গিদেরও তারা উসকে দিচ্ছে। বাংলার জনগণ একদিন তাদের বিচার করবে। গণ-আদালতে এদের বিচার হবে।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে এসব কথা বলেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছেন। এতিমের নামে টাকা এসেছে। মামলায় হাজিরা দিতে যান। ১ দিন যান তো ১০ দিন যান না, পালিয়ে বেড়ান। ব্যাপারটা কী?

এতেই তো ধরা পড়ে যায় যে চোরের মন পুলিশ পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে রাজনীতি শিখতে হবে, গণতন্ত্র শিখতে হবে, সেটা বাংলাদেশের মানুষ কোনভাবে মেনে নেবে না।

আজকে দেশের মানুষ শান্তিতে আছে, স্বস্তিতে আছে। দেশের মানুষ সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখে। মানুষ যখন ভালো থাকে, তখন তাঁর অন্তরে জ্বালা সৃষ্টি হয়। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্যের।’

২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের নামে সহিংসতার কঠোর সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তারা কী করেছে? মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। বিএনপির নেত্রী আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন, মানুষ হত্যা করেছেন। তিনি নির্বাচন করতে দেবেন না, নিজেও করবেন না। তারপর হত্যা শুরু করেন।’

বক্তব্যের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে দেশের মানুষের উচ্ছ্বাস, আবেগের কথা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। বরাবরের মতোই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।

১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ঘরে ফেরার অপেক্ষায় তিনি সহ পরিবারের সদস্যদের কীভাবে সময় কেটেছে, সে কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুর সরকার ও তাঁর নিজের দুবারের সরকারের সাফল্যের বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত।

২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। দারিদ্র্যের হার কমাব।

সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করব। প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখবে। বাংলাদেশের মানুষ খাদ্যনিরাপত্তা পাবে, পুষ্টি পাবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল হয়, তার ব্যবস্থা করে দেব। প্রতিটি গ্রামই একটি নগর হিসেবে গড়ে উঠবে।’

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে কখনো কোনো সন্ত্রাসের স্থান হবে না।

তার জন্য এ দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ; মসজিদের ইমামসহ শিক্ষক, অভিভাবক সকলের কাছে আমি আহ্বান জানাই, সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ পথে যেন কেউ না যায়, এর জন্য সেইভাবেই মানুষকে শিক্ষা দিতে হবে, তারা যেন শান্তির পথে থাকে।’

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম, সৌহার্দ্যের ধর্ম, ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। ইসলাম কখনো মানুষ হত্যা শেখায় না। বিচার করবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। শেষ বিচার তাঁর হাতে। ইসলামে আত্মহত্যা মহাপাপ। অথচ আজকে যারা ধর্মের নামে সন্ত্রাস করছে অথবা আত্মঘাতী হচ্ছে, যারা মনে করে আত্মঘাতী হয়ে বেহেশতে চলে যাবে, তারা কখনো বেহেশতে যাবে না, দোজখে যাবে। ইসলাম কখনো আত্মঘাতী হওয়া, মানুষ খুন করা কখনো প্রশ্রয় দেয় না।’

জনসভা শুরু হয় বেলা আড়াইটার দিকে। আর সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঞ্চে আসেন সাড়ে তিনটায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা আসতে শুরু করেন ১১টার পর থেকেই। বিশেষ করে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে ট্রাক-বাস ভরে মানুষকে জনসভায় আসতে দেখা যায়।

তাঁদের সঙ্গে ঢাকঢোল ছিল। আগত ব্যক্তিদের অনেকে লাল-সবুজের ক্যাপ ও টি-শার্ট পরেন। অনেকের মাথায় দেখা যায় ব্যান্ড। ব্যানার-ফেস্টুনে ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা। মিছিলগুলোতে ‘আজকের এই দিনে মুজিব তোমায় মনে পড়ে’ এ স্লোগান বেশি শোনা যায়।

দূরদূরান্ত থেকে ট্রাক-বাসে করে শাহবাগ, রমনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেত ও কাঁটাবন এলাকায় নামেন নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকে ব্যানার-ফেস্টুন হাতে মিছিল করে জনসভাস্থলে যান তাঁরা। ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মূল সড়ক ধরে আসে মিছিল। বেলা দুইটার আগেই সভার জন্য স্থাপন করা প্যান্ডেল ভরে যায়। আগত লোকজন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের সড়কে অবস্থান নেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশের সড়ক ধরে মিছিল ও আগত ব্যক্তিদের বহন করা যানবাহন বিভিন্ন সড়কে রেখে দেওয়ার কারণে স্বাভাবিক যান চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশও বিভিন্ন সড়কে যান নিয়ন্ত্রণ করে। এর প্রভাবে ঢাকার মধ্যাঞ্চলে ব্যাপক যানজট হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা তল্লাশি করা হয় আগত ব্যক্তিদের। ফলে অনেকেই প্রবেশ করতে না পেরে আশপাশের সড়কে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে উদ্যানের বাইরে ব্যাপক মানুষের সমাগম হয়।

জনসভায় সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এমন জায়গায় এগিয়ে যাব, যেখানে থাকবে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা।’ শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ২০১৮ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ঘাতকেরা অর্থনৈতিক মুক্তি দেওয়ার সময় দেয়নি। অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর কন্যা দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে চলেছেন। আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বেগম জিয়া, ২০১৯ সালের নির্বাচনে আপনাকে আসতেই হবে। আপনি হারায় যাচ্ছেন, তলায় যাচ্ছেন। নয়তো আরও তলায় যাবেন। কেউ ঠিকানা খুঁজে পাবে না।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। আমরা নির্বাচনে ভয় পাই না। এবার আমরা একা লড়াই করতে চাই না। খালেদা জিয়ার সঙ্গে নির্বাচনের মাঠে ও রাজপথে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে লড়াই করতে চাই।’ জনসভায় আরও বক্তব্য দেন সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন প্রমুখ। সমাবেশের সূচনা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভা পরিচালনা করেন দপ্তর সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪১২ বার

Share Button

Callender

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30