শিরোনামঃ-

» সিলেটে ‘নন্দিতা’ ছাড়া বন্ধ হয়ে গেছে বাকি সব সিনেমা হল

প্রকাশিত: ২৮. জানুয়ারি. ২০১৭ | শনিবার

রায়হান উদ্দিন নয়ন (বিশেষ প্রতিনিধি): সিলেটে একের পর এক সিনেমা হল ভেঙ্গে গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন।

বিপনীবিতান আর অট্টালিকার ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে সিলেটের ‍বিনোদন কেন্দ্র ’সিনেমাপাড়া’ সমূহ।সেই সাথে কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে সিলেটের ‍সিনেমা ঐতিহ্য ও।

ভারতীয় চ্যানেল আর প্রযুক্তির দাপটে সিলেটে ৯টি সিনেমা হলের মধ্যে একে একে হারিয়ে গেছে ৬টি হল। কোনরকম টিকে থাকা ৩টি হল ও এখন লাইফ সাপোর্টে আছে। সেগুলো ও হারিয়ে যাবে যেকোন সময় এমন আশংকা করছেন সিলেটের সুশিল সমাজ।

তবে সিলেটে ভালো ছবির দর্শক কমেনি বরং বেড়েছে বলে দাবী তাদের।

সিলেটে ৯টি সিনেমা হলের মধ্যে বর্তমানে কোনরকম টিকে আছে ৩টি সিনেমা হল।টিকে থাকা সিনেমা হল গুলো হলো নন্দিতা, বিজিবি ও সৈনিক অডিটোরিয়াম সিনেমা হল। এগুলোর মধ্যে কেবল নন্দিতা সিনেমা হলটি-ই শহরের ভেতরে এবং বাকি ২টি শহরের বাহিরে অবস্থিত। নামমাএ টিকে থাকা এই হলগুলোর অবস্থা ও নাজুক। মান্দাতার আমলের আসন আর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে তাদের ব্যবসা।

সিলেটের সিনেমা শিল্পের এই বেহাল অবস্থার বিষয়ে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমেদ মিশু বলেন, আমাদের সিনেমা হলগুলো ছিল সিলেটের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। হলকেন্দ্রিক ভালো পরিবেশের অভাবে দর্শকরা হলবিমূখ হয়ে পড়েছেন।

তিনি বলেন, সিলেটে টিকে থাকা সিনেমা হলগুলোকে যদি ঢেলে সাজানো যায় এবং সেগুলোকে যদি আধুনিকায়ন করে ভালো পরিবেশে ফিরিয়ে আনা যায় তাহলে আবার দর্শকরা হলমূখী হবে।

তিনি আরো বলেন সিলেটে একটি আধুনিক সিনেপ্লেক্স করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু আমলাতান্ত্র্রিক জটিলতার কারণে তা হচ্ছে না।

সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত ক্ষোভের সাথে বলেন-আমরা সিলেটের সংস্কৃতিমনা ও সিনেমাপ্রেমীদের জন্য দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু একশ্রেণীর সিনেমা বিদ্বেষী ও স্বার্থান্বেষী সিনেমা ব্যবসায়ীদের কারণে আজ সিলেটের সিনেমা প্রেমীরা বঞ্চিত হচ্ছেন ভালো পরিবেশে সিনেমা দেখা থেকে।

সিলেটে সিনেমা হলগুলো বন্ধের পেছনে সিনেমাপ্রেমী উদ্যোক্তাদের উদাসীনতাকেই তিনি দায়ী করে বলেন সিলেটে এখন ও ভালো সিনেমার দর্শক রয়েছেন। কিন্তু সুষ্টু পরিবেশ আর সংস্কৃতিবান্ধব উদ্যোগের অভাবে তা আলোর মূখ দেখছেনা।

তিনি আরো বলেন, মাঝে মধ্যে ভালো কিছু সিনেমা সিলেটের কিছু অডিটোরিয়ামে দেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সেটাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে একটি সিনেমা হল মালিকের অভিযোগের কারণে।

তিনি বলেন, সিলেটে প্রচুর অলস টাকা পড়ে আছে অনেকের কাছে। তারা ব্যক্তি পর্যায়ে ‘মাল্টিপ্লেক্স মূভি থিয়েটার’ এর মত সিনেমা হল করার উদ্যোগ নিয়ে আসলে এবং এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি থাকলে আবার ফিরে আসবে সিনেমার সেই স্বর্ণযুগ।

ধংস হয়ে যাওয়া ৬টি সিনেমা হলের মধ্যে বন্দরবাজারের ঐতিহ্যবাহী রংমহল সিনেমা হল ভেঙে নির্মান করা হয়েছে রংমহল টাওয়ার নামে বহুতল বিপণিবিতান। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে বন্দরবাজারের অপর সিনেমা হল ’লালকুঠি’।

এছাড়া ’সিনেমাপাড়া’ খ্যাত নগরীর তালতলায় পাশাপাশি থাকা নন্দিতা,অবকাশ ও দিলশাদ এই তিনটি সিনেমা হলের মধ্যে বছর তিনেক আগে ভেঙে ফেলা হয়েছে অবকাশ সিনেমা হলটি। সেখানে গড়ে উঠেছে ’জননী হাটবাজার’ নামের সুপারসপ।

অপর সিনেমা হল দিলশাদ এ ঝুলছে ’বিক্রয় হইবে’ লেখা সাইনবোর্ড। কেবল কোনরকম উকি দিয়ে আছে শহরের ভেতরের একমাএ ’নন্দিতা সিনেমা হলটি।এছাড়া কদমতলী কাকলী সিনেমা হল ভেঙে এপার্টমেন্ট তৈরীর কাজ চলছে। বাগবাড়িস্থ মণিকা সিনেমা হলটি বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। সেখানে ও এপার্টমেন্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ ব্যাপারে সদ্য ভেঙে ফেলা তালতলা কাকলী সিনেমা হলের মালিক তৌফিক বক্স লিপন বলেন, ১৯৮৬ সালে নির্মাণ হওয়ার পর থেকে আমরা একটানা দীর্ঘদিন সফলভাবে ব্যবসা চালিয়ে গেলেও গত কয়েক বছরের লোকসানের কারণে আমরা এই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হই। এখন এখানে সিনেমা হল ভেঙে বিপণীবিতান ও এপার্টমেন্ট করার কাজ চলছে।

রংমহল সিনেমা হল ভেঙে গড়ে উঠা ’রংমহল টাওয়ারের’ উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়েজ আহমদ দৌলত বলেন, আমরা পটল বাবু নামক এক ব্যক্তির কাছ থেকে জায়গাটি ক্রয় করে এখানে টাওয়ার নির্মাণ করেছি আমরা।

যিনি রংমহল সিনেমা হলের মালিক ছিলেন। টাওয়ার নির্মানের সময় আমরা রংমহল নামটি আর পরিবর্তন করিনি। টাওয়ারের টপ ফ্লোরে সিনেমা হলটিকে নতুন আঙিকে পুণরায় করার কোন সুযোগ বা পরিকল্পনা আছে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটেলাইটের এই যুগে এখন আর এই ব্যবসা জমবে না। তাছাড়া সিনেমা হল করার ব্যাপারে আমাদের কোন পরিকল্পনা নেই।

সিলেট শহরের একমাএ টিকে থাকা নন্দিতা সিনেমা হলের মালিক জহির লস্কর ধন মিয়া জানান, সিলেটে নন্দিতা সিনেমা হল চালু হয় ১৯৮৬ সালে। আমরা বর্তমানে কোনরকম পেটেভাতে টিকে আছি। ভালো ছবি তৈরী না হলে সেটিও বন্ধ করে দিতে হবে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ২৪৪২ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930