শিরোনামঃ-

» নগরীতে অসহনীয় তীব্র যানজট; নিরসনের কোন উদ্যোগ নেই

প্রকাশিত: ১২. ফেব্রুয়ারি. ২০১৭ | রবিবার

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ অবৈধ পার্কিং, ফুটপাত দখল, অদক্ষ চালক, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থা আর সিসিকের অভিভাবকহীনতার কারণে সিলেট নগরীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানজটের কারণে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নগরবাসী। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থী এবং অফিস পাড়ার লোকদের যানজটের কবলে পড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করতে হচ্ছে।

বিশেষ করে পর্যাপ্ত ট্রাফিক সদস্য না থাকার কারণেই যানজটের সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যানজট নিরসনে কার্যকরী কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না কর্তৃপক্ষ। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী নগরবাসীর।

নগরীর ব্যস্ততম এলাকা জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, লামাবাজার এবং আম্বরখানা পয়েন্টে প্রতিদিন দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে। এসব এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী লোকদেরকে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়।

সরেজমিন এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে যানজটের করুণ দৃশ্য। বিশেষ করে জিন্দাবাজার পয়েন্টে যানজট অন্যরকম ভোগান্তি দেয় নগরবাসীকে। ওয়ানওয়ে রোড হওয়া সত্বেও শুকরিয়া মার্কেটের সামনে মোটর সাইকেলের কারণে সবসময় যানজট থেকে। কেনাকাটা করতে আসা লোকজনদের হেঁটে যাওয়ারও উপক্রম নেই।

বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। উভয় দিক থেকে মোটর সাইকেল ও বাইসাইকেল এসে মুখোমুখি অবস্থান নেয়ায় সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজট। জিন্দাবাজার পয়েন্টে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ এই যানজট নিরসনে তেমন উদ্যোগ নেয় না বলে অভিভোগ ভুক্তভোগীদের।

জিন্দাবাজার পয়েন্টে একাধিক ট্রাফিক পুলিশ, সার্জেন্ট এবং পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলেও এখানকার যানজট নিরসনে তারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেন। এমনটি দাভী করেছেন জিন্দাবাজার বিপনী বিতানের ব্যবসায়ী কামাল আহমদ।

তিনি বলেন, জিন্দাবাজার এলাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন কেনাকাটা করতে অসংখ্য মানুষ এখানে আসেন। বড় বড় বিপনী বিতানগুলোও জিন্দাবাজারে অবস্থিত। অনেক প্রবাসী সপরিবারে এখানে কেনাকাটা করতে আসেন। অথচ এখানকার যানজটের কারণে দীর্ঘ সময় আটকা পড়তে হয় ক্রেতাদের। রাস্তা পারাপারেও সুযোগ থাকে না। মহিলা ও শিশুরা ভয় পেয়ে যায়। অনেকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। জিন্দাবাজার পয়েন্টের যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন শুকরিয়া মার্কেটের ব্যবসায়ী রুমন আহমদ।

আম্বরখানা এলাকায় বিকেল ৫টা থেকে অনেকটা ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করে। পাথর বালু বোঝাই ট্রাক চলাচল শুরু হওয়ার পর সীমাহীন যানজটের পাশাপাশি এই এলাকা দিয়ে চলাচল করতে মানুষ ভয় পায়। প্রায় সময়ই ট্রাকের ধাক্কায় এখানে প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে। তেমুখী থেকে আম্বরখানা এবং আম্বরখানা থেকে চৌকিদেখী পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আম্বরখানা এলাকা দিয়ে বিকেল ৫টার পরিবর্তে রাত ১০টা থেকে ট্রাক চলাচলের জন্য দীর্ঘদিন থেকে দাবী জানিয়ে আসছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এই দাবীতে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে বহুবার। তবুও উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

সূর্যোদয় যুব সংঘের সভাপতি মোঃ হাসান তালুকদার সোহেল বলেন, ট্রাক চলাচলের সূচী পরিবর্তন না করলে আমরা তীব্র আন্দোলনের ডাক দেব। কারণ শুধু যানজট নয়, বেপরোয়া ট্রাক অনেক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

নগরীর লামাবাজার এলাকায় যানজট নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন যানজটে পড়ে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীদের ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করতে হয়। লামাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী বকুল আহমেদ জানান, যানজট এখানে নিয়মিত ব্যাপার। লামাবাজার পয়েন্টে দু’জন ট্রাফিক পুলিশ নিয়মিত দায়িত্ব পালন করলেও এখানকার যানজট নিরসনে তাদেরকে হিমশিম খেতে হয়।

এদিকে ভুক্তভোগীদের মতে নগরীতে তীব্র যানজটের অন্যতম কারণ হচ্ছে ফুটপাত দখল, অবৈধ পার্কিং, অদক্ষ চালক, রেজিষ্ট্রেশনবিহীন রিকশা এবং অপর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ। নগরীর বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার ও আম্বরখানাসহ প্রায় সবগুলো এলাকার ফুটপাত এখন হকারদের দখলে। ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসলেও পুলিশ কিংবা সিসিকের কোন মাথাব্যথা নেই। যত্রতত্র অবৈধ পার্কিং থাকলেও এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) নিকোলিন চাকমা বলেন, যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমি নিজে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে থাকি। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের জনবল অনেক কম। যে কারণে সবগুলো পয়েন্টে পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যকে রাখা যায় না। সৃষ্ট পদের বিপরীতে লোকবল নিয়োগ হলে সিলেট নগরীর যানজট পুরোপুরি কমে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

নিকোলিন চাকমা আরো বলেন, জিন্দাবাজার পয়েন্টে প্রতিদিন অগণিত মানুষ কেনাকাটা করতে আসে। এখানে যানবাহন চলাচলে সর্বোচ্চ নজরদারী থাকে। কিন্তু উভয়দিক থেকে মোটরসাইকেল আরোহীরা এলোমেলো যাতায়াত করেন। যে কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। এখানে নিজেদের সচেতনতার প্রয়োজন। জনগণ সচেতন হলে যানজট নিরসন সম্ভব।

আম্বরখানা পয়েন্ট দিয়ে বিকেল ৫টা থেকে ট্রাক চলাচলের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তেমুখী থেকে যে সকল খালি ট্রাক আসে এগুলো সন্ধ্যে ৭ টা থেকে চলাচল করে। অপরদিকে কোম্পানীগঞ্জ থেকে পাথর ও বালু বোঝাই ট্রাকগুলো সন্ধ্যা ৬টা থেকে চলাচল করে। তবে নগরীর যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪২১ বার

Share Button

Callender

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30