শিরোনামঃ-

» ৩ ছিনতাইকারী গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দর স্টেশন

প্রকাশিত: ১২. মার্চ. ২০১৭ | রবিবার

ডেস্ক সংবাদঃ রাজধানীর বিমানবন্দর স্টেশনকে ঘিরে তিন ছিনতাইকারী গ্রুপ সক্রিয়। এ গ্রুপের ছিনতাইকারীরা প্রতিনিয়ত রাজধানীতে আসা যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা ও মালামাল লুট করে। ছিনতাই গ্রুপের পাশাপাশি এ এলাকায় অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ও টানা পার্টির রয়েছে দৌরাত্ম্য।

দিনে রাতে এ অপরাধী চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আর রাত হলে অপরাধী চক্রের সঙ্গে যোগ হয় ভাসমান পতিতা। সব মিলিয়ে রাজধানীর গুরুত্বের দিক থেকে দ্বিতীয় এই স্টেশন যেন অপরাধী চক্রের অভয়ারণ্য।

সরেজমিন বিমানবন্দর এলাকা ঘুরে স্থানীয় ও ভুক্তভোগী লোকজেনর সঙ্গে কথা বলে এ সকল তথ্য জানা গেছে।

স্টেশনে দেখা গেছে কিছু যাত্রী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। আর কিছু ভাসমান লোক রাতে এখানেই ঘুমান। উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর যাওয়ার জন্য ঢাকা কলেজের ছাত্র শাকিলের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি বলেন, বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে তারা দিনাজপুর স্বপ্নপুরী যাচ্ছেন। তার আসতে দেরি হওয়াতে বন্ধুরা চলে গেছেন। তিনি ভোরের ট্রেনে যাবেন।

শাকিল জানান, তার কাছে বড় ব্যাগ থাকার কারণে স্টেশনে আসার পরপরই দুই তিন ব্যক্তি পিছু নেয়। তিনি বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ভয়ে বিশ্রামাগারে আশ্রয় নেন। পরে ব্যাগটি বিশ্রামাগারে রেখে বাহির হওয়ার পর দেখেন লোকগুলো নেই।

তিনি মনে করেন, লোকগুলো ছিনতাইকারী। দ্রুত বিশ্রামাগারে না গেলে হয়তো তারা তার ব্যাগ নিয়ে চলে যেত।

ময়মনসিংহ যাওয়ার যাত্রী ইকবাল হোসেন। কথা হয় তার সঙ্গেও। তিনি  বলেন, রাতে স্টেশনের নিরাপত্তা বলতে কিছুই থাকে না। এখানে মাদকসেবী, ভাসমান পতিতা ও ছিনতাইকারীরা প্রকাশ্যই ঘোরাফেরা করে। পুলিশের সঙ্গে যোগসাজেশ করে তারা নানা অপকর্ম করছে।

শনিবার সকালে ধূমকেতু ট্রেনে রাজশাহী যাওয়ার আরেক যাত্রী সুকমন বেগম। তিনি বলেন, রাতে ট্রেন আছে বলে স্টেশনে আসেন। কিন্তু এসে জানতে পারেন রাতে ট্রেন নেই। বাধ্য হয়ে স্টেশনে রাত কাটাচ্ছেন।

তিনি জানান, তার নিকট দুটি ব্যাগ থাকার কারণে বার বার দু’তিনটা লোক ঘুরোফেরা করে যাচ্ছে। ভয়ে তিনি ট্রেনের এক নিরাপত্তা কর্মীকে জানান।

স্টেশনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখা যায় দুজন নিরাপত্তাকর্মী হাঁটাহাঁটি করছেন। এরা হলেন নায়েক বিল্লাল হোসেন ও তোফাজ্জল হোসেন।

নায়েক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, এতবড় স্টেশন আর রাতে আমরা ২/৪ জন ডিউটি করছি। এখন আমরা দুজন রয়েছে। বাকি দুজন রেস্টে। তারপরও আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাই।

তিনি বলেন, গভীর রাতে যখন যাত্রীরা ট্রেন থেকে নামে। তখন অনেক সময় আমরা নিষেধ করি বাইরে যেতে। ভেতরে বা বিশ্রামাগারে থাকলে কোনো সমস্যা হয় না। লোকবল সমস্যার কারণে যাত্রীদের আমরা পুরোপুরি সেবা দিতে পারি না। তবে লোকজন বাড়লে তখন সেবা দেয়া সম্ভব।

তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমরা তো সব সময় এক জায়গায় থাকি না। অনেক সময় হাঁটাহাঁটি করতে হয়। তখন কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কিছু করা যায় না। তবে সামনাসামনি কিছু ঘটে না বলে তিনি জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুরো স্টেশনকে ঘিরে তিনটি ছিনতাইকারী গ্রুপ রয়েছে। এরা হলো ইকবাল (১) গ্রুপ, ইকবাল (২) গ্রুপ এবং রাসেল গ্রুপ। এই গ্রুপের সদস্যরা স্টেশনের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। ট্রেন আসার পর তারা টার্গেট করে। আর টার্গেট ব্যক্তির পিছু নিয়ে কখনো আগ্নেয়াস্ত্র কখনো দেশি সাধারণ অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায়।

স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সম্প্রতি এক প্রবাসী ব্যক্তির টাকা ও মালামাল লুটের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, এসব গ্রুপই অজ্ঞান, মলম, টানা পার্টি এবং ভাসমান পতিতাদের নিয়ন্ত্রণ করে। পুলিশকে ম্যানেজ করে তাদের অপকর্ম করার কারণে অনেকে ভয়ে কিছু বলে না। দিন দিন তাদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে।

রেলওয়ে পুলিশের কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, রেলওয়ে পুলিশের জনবল সঙ্কট। এ কারণে আমরা সঠিকভাবে সবকিছু করতে পারি না। তারপরও সীমাবদ্ধতা নিয়ে আমরা আমাদের সাধ্যমত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।

তিনি বলেন, স্টেশনের ভেতর সাধারণত এসব হয় না। এগুলো স্টেশনের বাইরে হয়ে থাকে। আমাদের পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশ সতর্ক থাকলে এগুলো সহজেই কমানো যায়।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৩১৫ বার

Share Button

Callender

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30