শিরোনামঃ-

» ৩৬৫ দিন সময় চান আরিফুল হক চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৪. এপ্রিল. ২০১৭ | মঙ্গলবার

বিশেষ রিপোর্টঃ সুতোয় দুলছে যেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ভাগ্য। এই মেয়রের চেয়ারে তো, এই ছিটকে পড়ছেন চেয়ার থেকে। বরখাস্তের আদেশ মাথার উপর থেকে সরে যাওয়ার পর সোয়া ২ বছরের অপেক্ষা শেষে মেয়রের চেয়ারে বসতে না বসতেই রোববার আরিফুল হককে আবার সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তবে একদিন পরই গতকাল সে আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সোয়া ২ বছর পর রোববার মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার আগমুহূর্তে নগরীকে নিয়ে নতুন করে তার ভাবনা জানতে আরিফুল হকের মুখোমুখি হয়েছিলো মানবজমিন। আরিফুল হক চৌধুরী সে আলাপচারিতার শুরুতেই নগরবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছিলেন যাতে তাকে আর কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নগরবাসীর কাছ থেকে দূরে সরে যেতে না হয়। কিন্তু মেয়রের চেয়ারে বসার ৩ ঘণ্টা পেরনোর আগেই স্থানীয় সরকার বিভাগ তার নামে আবার পাঠায় বহিষ্কারের আদেশ।

কদিন ধরেই খুব বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। আরিফুল হক ভেবে রেখেছিলেন নতুন করে দায়িত্ব নিয়েই জলাবদ্ধতার সমস্যাটি সবার আগে সমাধানের চেষ্টা করবেন। বলেছিলেন, দায়িত্ব থেকে দূরে না থাকলে এতদিনে হয়তো সিলেটকে জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী হিসেবেই গড়ে তুলতে পারতেন। যানজট সমস্যারও একটা সুরাহাও হয়তো এতদিনে হয়ে যেত বলে জানিয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। ফুটপাথকে হকারমুক্ত করার মাধ্যমে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলেন সে পথে। জানালেন, চেয়েছিলেন সিলেট নগরীর চৌহাট্টা থেকে বন্দরবাজার পর্যন্ত সড়কের দু’পাশের বিদ্যুৎ-টেলিফোনের লাইন মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে গিয়ে রাস্তাটি প্রশস্ত করার।

তিনি জানালেন এ প্রকল্পের কাজও অনেকখানি এগিয়েছিল। তারও এসে গিয়েছিলো, তবে তিনি না থাকায় প্রকল্পটি আটকে যায় ফিরে যায় তারও। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাস্তাটি টু ওয়ে হিসেবে দু’দিক থেকেই উন্মুক্ত করে দেয়া সম্ভব হতো বলে জানালেন আরিফুল হক।

আটকে যাওয়া এ প্রকল্পটি নতুন করে শুরুর চেষ্টার পাশাপাশি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ হাতে নেবেন-নতুন করে দায়িত্ব নেয়ার আগ মুহূর্তে এমনটিই জানিয়েছিলেন আরিফুল হক। তখনই জানিয়েছিলেন বিভিন্ন সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে নগরবাসীর ঝামেলাও কমিয়ে দিতে চান তিনি।

সেবা পদ্ধতিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে প্রতিটি সেবা নগরীর ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চান, যাতে কাউকে সিটি করপোরেশনে দৌড়াদৌড়ি করতে না হয়। ট্রেড লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই ঝামেলা কমানোর পথ তৈরি হয়েছে জানিয়ে আরিফুল বলেছিলেন তিনি চান কোন সেবার জন্যই যেন কাউকে ‘ধর্ণা দিতে না হয় নগর ভবনে। হোল্ডিং ট্যাক্সের ক্ষেত্রে সমতা তৈরির জন্য একটা জরিপ করানোর ইচ্ছে জানান দেয়ার পাশাপাশি নগরীর প্রাইমারি স্কুলগুলোর স্যানিটেশন পদ্ধতি উন্নতকরণ সচেতনতা তৈরির ভাবনাও রয়েছে তার মাথায়।

নগরকে এমনি করে সাজিয়ে নিতে মেয়রের চেয়ারে বসার আগে আরিফুল হক সকলের সহযোগিতা চেয়েছিলেন। সকলের সহযোগিতা ছাড়া একার পক্ষে নগরকে সাজানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন আরিফুল হক চৌধুরী। নিজেকে কোন দলের পরিচয়ে সীমাবদ্ধ রাখতে চান না উল্লেখ করে আরিফুল হক সেদিন বলেছিলেন, হয়তো একটি দলের আদর্শের প্রতি তার দুর্বলতা রয়েছে।

কিন্তু তিনি যখনই মেয়রের চেয়ারটিতে বসেছেন তিনি সে পরিচয় ভুলে শুধু নগরবাসীরই আপন হতে চেয়েছেন। দল-মত নির্বিশেষে সকলেরই ভরসার পাত্র হতে চেয়েছেন। কাজ করতে চেয়েছেন সকলের। জানালেন, দলীয় পরিচয়ের সীমায় আবদ্ধ না থেকে নগরীর উন্নয়নের স্বার্থে তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতেরও শরণাপন্ন হয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে খালি হাতে ফিরেননি। নগরীর জন্য দু’হাত বাড়িয়েই তাকে সহযোগিতা করেছেন অর্থমন্ত্রী।

আরিফুল হক কৃতজ্ঞতার সঙ্গে এ বিষয়টি স্মরণ করে বললেন, এভাবে সকলের সহযোগিতা পেলে, আর সবাই আন্তরিক থাকলে এ নগরীকে পাল্টাতে গুনে গুনে ৩৬৫ দিনের বেশি সময় লাগবে না। সিলেটকে পাল্টে দিতে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি কাজ হাতে নিয়েছিলেন আরিফুল হক সেটিও আবার স্মরণ করিয়ে দিলেন  আরিফুল হক সেদিনের সে আলাপচারিতায়।

দল-মত নির্বিশেষে সবার মতামত নিয়ে একটি সুন্দর আধুনিক নগর উপহার দেয়ার স্বপ্নই শুধু তার চোখে খেলা করে বলে জানালেন আরিফুল হক চৌধুরী। তবে নগরের চাবি যদি বারবার হাত থেকে ছুটে যায় এতো স্বপ্ন পূরণের জন্য সময় ও সুযোগ কি আরিফুল হক পাবেন-এ প্রশ্ন নগরবাসীর অনেকেরই মনে।

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা সংশ্লিষ্ট দু’টো মামলা এবং আওয়ামী লীগের সদ্য প্রয়াত নেতা সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলা সংশ্লিষ্ট একটি মামলার চার্জশিট ইতিমধ্যেই আদালতে গৃহীত হয়েছে। অভিযুক্ত হিসেবে সে চার্জশিটগুলোতে নাম ছিল আরিফুল হক চৌধুরীর।

চার্জশিট গৃহীত হওয়ার প্রেক্ষিতে সোয়া ২ বছর দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত ছিলেন। শুধু দায়িত্ব থেকে বরখাস্তই ছিলেন না কিবরিয়া হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে চার্জশিটভুক্ত হওয়ার পর আত্মসমর্পণের পর ২০১৪ সালের ৩০শে ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৪ঠা জানুয়ারি পর্যন্ত কারাবন্দিও ছিলেন আরিফুল হক। মুক্তি পাওয়ার পর বরখাস্তের ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তিনি।

আদালত গত ১৩ মার্চ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশটি ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে দেন। রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ২৩শে মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের বিপরীতে আদালত থেকে ‘নো অর্ডার’ মিললে আরিফুল হকের দায়িত্ব ফিরে পাওয়া সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক পত্রে তাকে মেয়রের দায়িত্ব নিতে বলা হয়। রোববার দায়িত্ব বুঝেও নেন আরিফুল হক। তবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলা সংশ্লিষ্ট একটি মামলার চার্জশিট আদালতে গৃহীত হলে আবার কপাল পুড়ে আরিফের। স্থানীয় সরকার বিভাগ নতুন করে আরেক দফা বরখাস্ত করে তাকে। ৩ ঘণ্টায়ই শেষ হয়ে যায় আরিফুল হকের নগর ভবনের দ্বিতীয় অধ্যায়।

লেখক: চৌধুরী মুমতাজ আহমদ

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪০৩ বার

Share Button

Callender

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30