শিরোনামঃ-

» জঙ্গি অর্থায়ন রোধ করতে কর্মকর্তাদের সরকারীভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে

প্রকাশিত: ০৪. এপ্রিল. ২০১৭ | মঙ্গলবার

ডেস্ক সংবাদঃ জঙ্গি কার্যক্রমে অর্থায়নের ক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের ১০ থেকে ১৫টি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব জেলায় ব্যাংকিং চ্যানেলগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এসব জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের জঙ্গি অর্থায়ন রোধে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যৌথভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ’র একজন কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গি অর্থায়ন রোধে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। জঙ্গিরা কার মাধ্যমে, কিভাবে টাকা পাচ্ছে তা শনাক্ত করার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে বেশকিছু সাফল্যও এসেছে।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া এসব বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করে তাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, জঙ্গি অর্থায়ন রোধে নিষিদ্ধঘোষিত বিভিন্ন সংগঠন যাতে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে সেজন্যও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

বিশেষত ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন জেলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের এসব বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ পেলে জঙ্গিরা অর্থপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে আরো দুর্বল হয়ে পড়বে। এ ছাড়া সন্দেহজনক লেনদেনের ব্যাপারেও সতর্ক অবস্থান নেওয়া হয়েছে। কোন তথ্য পেলেই সংশ্লিষ্টদের কাছে তা সরবরাহ করা হয়।

সাম্প্রতিককালে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় সরকার কিছুটা উদ্বিগ্ন। আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ জেলার একটি তালিকা করতে বলা হয়েছে। সংস্থাগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সহ ১০ থেকে ১৫টি জেলাকে বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

এসব জেলায় জঙ্গি কার্যক্রম রোধে ব্যাংকিং চ্যানেলে বিশেষ নজরদারি সহ নানা কৌশল নেওয়া হচ্ছে। কৌশলের অংশ হিসেবে সবগুলো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চিঠিতে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন ও সন্দেহজনক লেনদেনে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, গত মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে জঙ্গি অর্থায়ন রোধে এসব কৌশলের বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে বলা হয়, জঙ্গি অর্থায়ন রোধে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এজন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। মানিলন্ডারিং, সন্ত্রাস ও জঙ্গি অর্থায়ন রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সম্যক ধারণা থাকা জরুরি। এতে বর্তমানে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা জঙ্গিবাদে অর্থায়ন দুর্বল করা সম্ভব হবে।

সূত্র জানায়, অর্থপ্রাপ্তির দিক থেকে দুর্বল হলে জঙ্গিদের কার্যক্রম চালাতে বেগ পেতে হবে। পাশাপাশি এসব প্রশিক্ষণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়বে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা সহ ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। পরে প্রতিটি জেলায় এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে।

সূত্র জানায়, বিএফআইইউ প্রশিক্ষণের জন্য রিসোর্স পারসন সরবরাহ করবে। সংস্থাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় কর্মরত অভিজ্ঞ ও যোগ্য প্রশিক্ষক চিহ্নিত করবে। এসব প্রশিক্ষক বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ জেলায় গিয়ে অন্যদের প্রশিক্ষণ দেবেন।

এ ছাড়া জামায়াতুল মুজাহিদিন সহ নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোকে আর্থিকভাবে দুর্বল করতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ২০(ক) ধারার সঠিক প্রয়োগের ব্যাপারেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। এতে বলা হয়, নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো যাতে নতুন করে কার্যক্রম চালাতে না পারে, সেজন্য তাদের আর্থিকভাবে দুর্বল করতে হবে।

এসব সংগঠন যদি নামে বা বেনামে কোন কার্যালয় স্থাপন করে তবে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুন নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করা বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ব্যাপারে সজাগ থাকতে সংশ্লিষ্টদের পারষ্পরিক তথ্য বিনিময় ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সাথে বিএফআইইউয়ের সমঝোতা স্বাক্ষর (এমওইউ) করার উদ্যোগ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিতে হবে।

বৈঠকে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বিষয়ক তদন্তে পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মধ্যকার জটিলতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বৈঠকে বলেন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ (সংশোধন) আইন, ২০১৫ এর পরিপ্রেক্ষিতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৩ সংশোধন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই আইন অনুযায়ী মামলার চার্জশিট দেওয়ার ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে অধিদপ্তর ও বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক এ আইনের অধীনে মামলা ও মামলার চার্জশিট দেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এর সমাধান করা জরুরি।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫৭৩ বার

Share Button

Callender

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031