শিরোনামঃ-

» নগরীর বিভিন্ন স্কুলের সামনে মানহীন খোলা খাবারের দোকান ও খেলনা সামগ্রীর পসরা!

প্রকাশিত: ৩০. এপ্রিল. ২০১৭ | রবিবার

স্টাফ রিপোর্টারঃ গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা। পানিবাহিত রোগ হওয়ায় বছরের এ সময়টায়তে ডায়রিয়া সহ বিভিন্ন মৌসুমী রোগের প্রকোপ দেখা যায়।
চিকিৎসালয়গুলোতে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের উপচানো পড়া ভিড় দেখেই অনুমান করা যায় দেশের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাধিক্য। পানিবাহিত রোগে আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা অনেক বেশি।
শিশুদের মধ্যে আবার যারা স্কুলগামী তাদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বছরের বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে আমাদের দেশে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। বিশেষত গ্রামের চেয়ে গণবসতিপূর্ণ শহরের বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করে।

স্কুলপড়ুয়া যে সকল বাচ্চা বাইরের খোলা খাবার ও দূষিত পানি পান করে তাদের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি শতভাগ বেড়ে যায়।
অভিভাবকরা বাচ্চাদের নিয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করলে সন্তানের মায়াবী আব্দারে কখনো কখনো ক্ষতিকর জেনেও বাইরের খাবার কিনে দিতে হয়। এছাড়াও কিছু কিছু বাচ্চা মা-বাবাকে লুকিয়েও সাময়িক মজাদার এ সকল খাবারে অভ্যস্ত হয়ে যায়। সুতরাং বাড়তি সচেতনতাও অনেক সময় পানিবাহিত রোগের প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে পারে না। এজন্য কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগে সমস্যা লাঘব করা সম্ভব।
যেসব স্থানের খাদ্যগ্রহণের ফলে স্কুলগামী শিশুদের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় তার মধ্যে স্কুল ও কোচিং সেন্টারের সামনে ভাসমান খোলা খাবারের দোকানের দূষিত খাবার অন্যতম। এসকল খোলা খাবারের দোকানে ভুনা খিচুড়ির নামে নিম্নমানের ডাল, পাম ওয়েল ও নালার দূষিত পানির মিশ্রণ, আখের রস, উন্মুুক্তস্থানে কেটে রাখা তরমুজ কিংবা বাঙ্গীর অংশ বিশেষ, কম দামী আইসক্রিম, আচার, শরবত, ফুচকা, চটপটি ও বিভিন্ন ধরনের নিম্ন মানের জুস। স্কুলে প্রবেশের সময়, টিফিন পিরিয়ডে কিংবা ছুটির শেষে শিশুরা বায়না করে এই সকল ক্ষতিকর খাদ্য থেকে কিছু একটা কিনে দেওয়ার জন্য। বাসা থেকে সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করে টিফিনে দেওয়া হলেও শিশুরা বাইরের খাবারের প্রতি বেশি আকর্ষণ অনুভব করে।
বাইরের খাবার কিনে দিতে অভিভাবকরা রাজি না হলে শিশুরা রাস্তায় বসেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। তখন অনেকটা বাধ্য হয়েই অভিভাবকরা শিশুদের এসব খাবার কিনে দিতে বাধ্য হয়।
এ সকল খাবার খাওয়ার পরেই শিশুরা একের পর এক পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। কখনো কখনো জীবনহানিও ঘটে। শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের শুরু হয় দুশ্চিন্তা, চিকিৎসার জন্য অনেক ব্যয়, সর্বোপরি অসুস্থ শিশুরা পাঠের ক্ষেত্রে ব্যাপক পিছিয়ে যায়।
স্কুল ও কোচিং সেন্টারমুখী সন্তানদের নিয়ে অভিভাবকদের আরও কতগুলো মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হয়। খেলনাসামগ্রীর প্রতি শিশুদের টান চিরন্তন। শিশুদের যত খেলনা থাকুক তারপরেও তাদের আরও নতুন নতুন খেলনা চাই।
প্রতিদিন নতুন খেলনা কিনে দেওয়ার মত সামর্থ্য এদেশের অধিকাংশ অভিভাবকের নেই। খেলনা দেখলেই শিশুরা আব্দার করে তা কিনে দেওয়ার জন্য। শিশুদের এমন আব্দারে প্রায়ই সময় বিব্রত হতে হয়।
অনেক মানুষের মধ্যে যখন শিশু আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে নতুন খেলনা পাওয়ার দাবিতে কান্না শুরু করে তখন তা কিনে না দিয়ে গত্যন্তর থাকে না। আর্থিক সঙ্গতি ভাবার মত সময় থাকে না। খেলনাসামগ্রী বিক্রেতারাও এ সুযোগটি নিয়ে বিভিন্ন স্কুল ও কোচিং সেন্টারের সামনে তাদের সুযোগবাদী ব্যবসার পসরা সাজায়। স্কুলপড়ুয়া সন্তানটি এক্ষেত্রে বেশি জ্বালাতন না করলেও মা-বাবার সাথে যদি স্কুল যাওয়ার বয়স না হওয়া কোনও ২-৫ বছরের সন্তান থাকে তবে প্রতিদিনই বেগতিক অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং অভিভাবককেও লজ্জার মুখোমুখি হতে হয়।
কর্তৃপক্ষকে এ সকল খোলা খাবারের দোকান ও খেলনাসামগ্রীর ভ্যান স্কুল ও কোচিংয়ের সামনে থেকে অপসারণ করতে হবে। পানিবাহিত রোগের প্রকোপ থেকে বছরের এ সময়টাতে শিশুদেরে সুরক্ষিত রাখতে হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি এসকল উদ্যোগ কার্যকর করতে অক্ষম হয় তবে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নেওয়া উচিত।
কঠোরতা অবলম্বন করে হলেও গ্রীষ্মের এ সময়টাতে খোলা খাবারের দোকান ভিড়তে দেওয়া এবং বছরের সর্বসময় খেলনাসামগ্রীর দোকান স্কুল ও কোচিংয়ের সামনে ঘেঁষতে দেওয়া উচিত নয়। কোমলমতি, অবুঝ বাচ্চাদের অযাচিত বায়না থেকে রক্ষার জন্য কিছু কিচু ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করাও  নিয়ম বহির্ভূত নয়।
বাচ্চাদের বায়না পূরণে অভিভাবক আর্থিকভাবে অক্ষম না হলেও তাদের ক্রন্দনমুক্ত রাখতে এবং বায়না মিটানোর পর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তাদের নিয়ে মানসিক ও শারীরিক ধকল থেকে রক্ষার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যাবশ্যক।
কাজেই স্কুল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে বিনীত দাবি, যে কোনওভাবে বাচ্চাদের স্কুল ও কোচিং সেন্টারের সামনে থেকে সকল মানহীন খোলা খাবারের দোকান ও খেলনাসামগ্রীর পসরা উচ্ছেদ করে কোমলমতি শিশুদের সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা এবং অভিভাবকদের দুশ্চিন্তামূলক  সময় অতিবাহিত করার সুযোগ করে দিন।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৭৪২ বার

Share Button

Callender

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30