শিরোনামঃ-

» সুরমায় ধবংসাত্মক বালু উত্তোলন; নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর

প্রকাশিত: ২১. মে. ২০১৭ | রবিবার

স্টাফ রিপোর্টারঃ সিলেটের কানাইঘাট এলাকাধীন সুরমা নদীতে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব। বিপর্যয়কর অবস্থায় বালু উত্তোলন বিধি বহির্ভূত হলেও এর কোন তোয়াক্কা করছে না বালু খাদকরা।

ইজারা যোগ্য ও ইজারা অযোগ্য নির্বিশেষে নদী তীর খনন করে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু ও মাটি। ধ্বসে পড়ছে বাড়িঘর, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল,ব্যবসা প্রতিষ্টানসহ সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন স্থাপনা। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সরকারের শত শত কোটি টাকার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ। বানের পানিতে ভেসে যাচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলী জমি। উপরন্তু অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদকারীদের হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে বিভিন্ন মামলা ও হামলায়।

অভিযোগ আছে, কানাইঘাট উপজেলাধীন রাজাগঞ্জ গং বালু মহালটি সরকারী তালিকায় ইজারা যোগ্য হলেও প্রায় ৮ বছর ধরে কোন ইজারাই দেয়া হচ্ছে না। ফলে মামলা ও আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে মাটি খাদকরা এ মহালসহ আশপাশ এলাকা অবাধে ভোগ করে চলেছে। আর এ সুযোগে তারা ইজারা বহির্ভুত অনেক এলাকায় বিস্তীর্ন করেছে তাদের বালু মাটি উত্তোলনের ধ্বংসাত্মক তান্ডব।

সাবেক জামায়াতী এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর ভাতিজা ও জেলা বিএনপি’র বর্তমান যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সলের চাচাতো ভাই মো. জাবীর আশরাফ চৌধুরী মাটি খাদকদের অন্যতম। এছাড়াও দক্ষিণ সুরমার আরেক মাটি খাদক এ এলাকায় নির্বিচারে বালু উত্তোলন করে চলেছে। বিশেষ করে ইজারা অযোগ্য ও ইজারা বহির্ভূত তালবাড়ী এলাকায় চলছে জাবীর আশারাফের ধবংসাত্মক তান্ডব।

জাবীর আশরাফ চৌধুরী সাংবাদিকসহ দুটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের ঘনিষ্টজন হওয়ায় তার ধবংসাত্মক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না। পাশপাশি নদীর দু’পারে রয়েছে জাবীরের শক্তিশালী লাঠিয়াল বাহিনী ও ঘূষখোর পুলিশ। প্রতিবাদীদের হামলা ও মামলা দিয়ে নিবৃত করতে জাবীরের কোন জুড়ি নেই। এ অবস্থায় এলাকার জন মানুষদের জিম্মি করেই জাবীর আশরাফ চৌধুরী দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর ধরে একক ভাবে ওই এলাকায় বালু উত্তোলন ও বিপর্যয়কর কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তার অবাঁধ ও লাগামহীর বালু উত্তোলনের ফলে ইতোমধ্যে ইজারাবহির্ভুত তালবাড়ী ও খালপার এলাকায় ২শ’টিরও বেশী বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে তালবাড়ি বাজার, বাজারের পূর্বমসজিদ, খালপার মাদ্রাসা ও দাওয়াদারী মসজিদসহ সুরমা ডাইকের একাংশ ধ্বসে পড়ায় এসব স্থাপনা অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ঐতহ্যিবাহী তালবাড়ী বাজার ও খালপার মাদ্রসা সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে। উপজেলার তালবাড়ী মৌজাস্থ সুরমা নদী এলাকা সরকারী বালু মহালের অন্তর্ভুক্ত না হওয়া সত্বেও জাবীর আশরাফ চৌধুরী সম্পূর্ণ পেশী শক্তিবলে এ মৌজা এলাকায় বিরামহীন ও লাগামহীন বালু উত্তোলন করে চলেছেন।

ইজারা বিহীন এবং ইজারা অযোগ্য তালবাড়ীসহ আশপাশ এলাকায় অবৈধ ও ধবংসাত্মক বালু উত্তোলন কালে তীর ধ্বসে সম্প্রতি জাবীর আশরাফের একটি ড্রেজার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়, যা এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানেও জাবীর আশরাফ ৫/৭টি ড্রেজার দিয়ে ইজারা বহির্ভুত তালবাড়ি এলাকায় অবৈধ ও বেআইনী বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে এলাকার জনসাধারন সিলেটের জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে বারবার আবেদন নিবেদন করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। উল্টো মামলা-হামলায় হয়রানী ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা।

সম্প্রতি এলাকার জন সাধারণ আবারো সিলেটের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ স্থানীয় দায়িত্বশীল বিভিন্ন মহলে লিখিত স্মারকলিপি প্রদান করে তাদের বসত-ভিটে, ঘর বাড়ি, ক্ষেত খামার, সরকারী ও বেসরকারী স্থাপনা রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।

বিশেষ করে কানাইঘাট উপজেলার খালপার ভূমিহীন কৃষি খামার সমবায় সমিতি লিঃ এলাকাবাসীর পক্ষে বুধবার (১৭ মে) সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন মহলে স্মারকলিপি প্রদান করে।

এ খবর পেয়ে জাবীর বাহিনী আরো ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের নানা হুমকি-ধমকি এবং আগ্নেয়াস্ত্রসহ সন্ত্রাসী মহড়া দিয়ে চলেছে। এ অবস্থায় কানাইঘাটের তালবাড়ী খালপার ও আশপাশ এলাকায় সুরমায় বালু উত্তোলন নিয়ে যেকোন সময় দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও খুন-খারাবীর আশংকা রয়েছে বলে এলাকার শান্তিকামী মানুষ জানিয়েছেন। এলাকাবাসী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে ত্বরিৎ আইনী ব্যবস্থা গ্রহনে প্রশাসনসহ সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ ও দ্রুততর পদক্ষেপ কামনা করেছেন।

উল্লেখ্য, সিলেটের কানাইঘাট উপজেলাধীন রাজাগঞ্জ বালু মহালের অন্তর্গত ৩টি দাগে ৫১.৪৭ একর জায়গা থাকলেও উপজেলার তালবাড়ী মৌজায় সরকারী কোন বালুমহাল নেই। তা সত্বেও জাবীর আশরাফ চৌধুরী তালবাড়ী মৌজার অন্তর্গত ৪টি দাগের বিশাল এলাকা জুড়ে বেআইনী ও অবৈধ বালু উত্তোলন করে চলেছেন বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫৪৯ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930