শিরোনামঃ-

» ‘অনেক কষ্টের জমানো টাকা কেটে নেবে, এটা অর্থমন্ত্রীর তুঘলকী সিদ্ধান্ত’

প্রকাশিত: ০৩. জুন. ২০১৭ | শনিবার

এসবিএন ডেস্কঃ প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপনের আগে আলোচনায় ছিল ভ্যাট। তবে বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী সংসদে বাজেট পেশের পর আলোচনার তুঙ্গে এখন ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক। এর আরো বেশি প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে রবিবার ব্যাংক খোলার পর।

বাংলাদেশের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট উত্থাপন করেছেন- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এটা মোট জিডিপির ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)’র পরিমাণ ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা।

এবার বাজেটের আগে থেকেই ভ্যাট ছিল আলোচনায়। ব্যবসায়ীরা শতকরা ১৫ ভাগের পরিবর্তে ১৩ ভাগ ভ্যাটের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অর্থমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত ভ্যাট ১৫ শতাংশেরই ঘোষণা দিয়েছেন।

বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন- ‘ভ্যাট ১৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হলেও সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু পণ্য ভ্যাটের বাইরে রাখা হয়েছে। এই বাজেটটি মনে হচ্ছে উন্নয়নবান্ধব। সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়ানো হলেও আনুপাতিক হারে তা কমেছে। ফলে এই বাজেট জনবান্ধব কিনা তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।’

এবারের বাজেটে এখন থেকে যারা ব্যাংকে কমপক্ষে এক লাখ টাকা রাখবেন- বছর শেষে তাদের আবগারি শুল্ক গুনতে হবে। আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করে অর্থমন্ত্রী বলেন- ‘১ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কেউ ব্যাংকে রাখলে তাকে আবগারি শুল্ক দিতে হবে ৮০০ টাকা, ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত কেউ আমানত রাখলে তাকে আবগারি শুল্ক আরোপ করা হবে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা অ্যাকাউন্টে রাখলে তার ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ করা হবে ১২ হাজার টাকা।

এছাড়া ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার ওপরে রাখলে তাতে আবগারি শুল্ক আরোপ করা হবে ২৫ হাজার টাকা।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী- বর্তমানে ব্যাংকগুলোর আমানতের গড় সুদ ৫ দশমিক ১ শতাংশের মধ্যে। এদিকে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ৫ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ। এখন ব্যাংকে এক লাখ টাকা আমানত থাকলে বছর শেষে যে ৫ হাজার টাকা পাওয়া যাবে তার মধ্যে উৎসে কর আবগারি শুল্ক ও মূল্যস্ফীতি বাবদ কেটে রাখার পর মূল মূলধনই কমে যাবে আমানতকারীর।

এনিয়ে ব্যাংক গ্রাহকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ সব কিছু বাদ দিয়ে এখন এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করছেন, কথা বলছেন। কেউ কেউ বলছেন- ‘আমাদের বোধ হয় এখন আবার মাটির ব্যাংকের যুগে ফিরে যতে হবে।’

পুরনো ঢাকার গৃহিনী কবিতা আক্তার বলেন- ‘আমরা অনেক কষ্ট করে ব্যাংকে টাকা জমাই। মায়ের কাছ থেকে নিই। স্বামীর কাছ থেকে নিই। টুকটাক কাজ করেও টাকা জমাই। পরিবারের বিপদে, ছেলে মেয়ের লেখা পড়া, চিকিৎসার কাজে লাগে। এখন এই টাকাও কেটে নেবে। এটা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। এটা অর্থমন্ত্রীর একটা তুঘলকী সিদ্ধান্ত।’

অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদও এর বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন- ‘১ লাখ টাকার সিলিংটা ঠিক নয়। সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষও তার বিপদের সময়ের জন্য এক লাখ টাকা ব্যাংকে রাখেন। এটা অনেক বেশি টাকার জন্য হতে পারে। কারণ, তারা বিনিয়োগ করতে পারেন অন্য খাতে।’

এদিকে সিপিডি মনে করে- এই বাজেটের ফলে মধ্যবিত্বের ওপর চাপ বাড়বে। মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সিপিডি’র ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য শুক্রবার (২ জুন) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বলেন- ‘বাজেটে যে কর ও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, তাতে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, বাড়বে ভোগ ব্যয়, এর ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। এতে নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বেন।’

তিনি আরো বলেন- ‘সামগ্রিকভাবে বাজেটে যে আয় ও ব্যয় ধরা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। শুধু প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়ন করা যাবে না। বাজেট সফলভাবে বাস্তবায়ন করার একটা রাজনৈতিক অর্থনীতি আছে। সেটা হলো, জাতীয় সংসদের প্রতিনিধি ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করা, কিন্তু বাস্তবে আমরা বাজেট প্রনয়ন ও বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা দেখি না।’

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত শুক্রবার (২ জুন) বিকালে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন- ‘১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর করা হলেও জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। কারণ অনেক পণ্যে ভ্যাট ছাড় দেয়া হয়েছে। আর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ভ্যাট বাড়লে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য হবে না।’

অর্থমন্ত্রী আরো বলেন- ‘নতুন বাজেটে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেশি রেখেছি। পাইপ লাইনেও অনেক বেশি টাকা আছে। আমরা এই টাকার সদ্ব্যবহার করতে পারি না। টোটাল টাকা ব্যবহার করতে পারছি না। এরপরেও বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ বেশি রেখেছি। কারণ, এর মধ্যদিয়েই এই টাকা ব্যবহারের সক্ষমতা আমরা অর্জন করবো।’

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫৪৭ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930