শিরোনামঃ-

» বিএনপি সিসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী বাছাইয়ে চমক দেখাতে পারে

প্রকাশিত: ০৮. জুন. ২০১৭ | বৃহস্পতিবার

বিশেষ প্রতিবেদনঃ সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী বাছাইয়ে চমক দেখাতে পারে বিএনপি। আসতে পারে নতুনমুখ। এক্ষেত্রে বর্তমান জনপ্রিয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কপাল পুড়তে পারে। এমন আলোচনা চলছে বিএনপির অন্ধরমহলেও।
যদিও সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে মাঠ পর্যায়ে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে লবিং শুরু করে দিয়েছেন বিএনপির অনেক নেতাই। কিন্তু আলোচনায় যেসব নেতার নাম উঠে আসছে শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির দৌঁড়ে ছিটকে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি তাদের। আচমকা প্রার্থীর ঘোষণা আসতে পারে দলের হাই কমান্ড থেকে।
তবে কে সেই ভাগ্যবান, যিনি লবিং ছাড়াই সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে ধানেরশীষ প্রতিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন (?)-এ নিয়ে কৌতুহল বাড়ছে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়েও। সিলেট বিএনপির শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতাই দলের মেয়র প্রার্থীতার বিষয়ে আভাস পেয়েছেন, কেউ কেউ সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামও শোনেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে মুখ খুলছেন না কেউই।

দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির ভবিষ্যত কান্ডারি ও যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সিলেটসহ দেশের সব ক’টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী বাছাই শুরু করেছেন। দল এবং দলের বাইরে পেশাজীবীদের নিয়ে গড়ে তোলা একাধিক মনিটরিং টিমের প্রতিবেদন সামনে রেখেই প্রার্থীতা চূড়ান্ত করছেন তিনি। প্রার্থী তালিকায় প্রতিটি সিটি করপোরেশনে দলের সম্ভাব্য তিন থেকে চারজন মেয়র প্রার্থী রাখা হয়েছে। তালিকায় রাখা প্রার্থীদের বয়স, ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতাসহ নানা খুটিনাটি বিষয়ে মনিটরিং টিমের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত খোঁজ রাখছেন তিনি। বয়সের দিক দিয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণদেরকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারেক রহমান।

সূত্রমতে, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী তালিকায় থাকা তিন জনের দু’জনই হচ্ছেন অপেক্ষাকৃত তরুন। তারা হলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক, সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক এডভোকেট সামসুজ্জামান জামান। এ তালিকায় বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীরও নাম রয়েছে।

যদিও খন্দকার আবদুল মুক্তাদির সিলেট-১ আসনে বিএনপির টিকিটে নির্বাচন করতে কয়েক বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কখনো তিনি মাঠ ছাড়েননি। বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী  এবং দলত্যাগী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর বলয়ের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার চেষ্ঠা করছেন।

কিন্তু সিলেট-১ আসনে শেষ পর্যন্ত দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রার্থী হলে তার আর সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করা হবে না। সে কারণেই তাকে সিসিক নির্বাচনে দেখা যেতে পারে।

একই অবস্থা এডভোকেট সামসুজ্জামানের ক্ষেত্রেও। সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় তাকে (সামসুজ্জামান) সিলেট-৪ আসনে রেখেছে দলের হাইকমান্ড। দীর্ঘদিন ধরে সিলেট-৪ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতিও রয়েছে সামসুজ্জামানের। দলের ভেতরে অপেক্ষাকৃত এই তরুণ নেতার জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে।

বিশেষ করে সিলেট নগরীতে তার শক্ত একটা অবস্থান রয়েছে। দলের দু:সময়ের পরিক্ষিত, এই ত্যাগী নেতার নাম রয়েছে তারেক রহমানের গুডবুকেও। এ কারণে সিসিকের মেয়র পদের সম্ভাব্য তালিকায় এসেছে সামসুজ্জামানের নামও।

এদিকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বপদে ফিরার পর তিনি জনসংযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীদেরও ডাকছেন, পাশে রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দলের দু:সময়ে সরকারদলীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে তার সুসম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে দলীয় হাইকমান্ড ক্ষুব্ধ বলে জানিয়েছে বিএনপির একাধিক সূত্র।

উদাহরণস্বরূপ এই সূত্র জানিয়েছে, আরিফুল হক কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন তার কার্যালয়ে। অনেক তদ্বিরের পর খালেদা জিয়া সাক্ষাতের অনুমতি দিলেও তাকে ভালোভাবে বরণ করেননি। খালেদা জিয়া বসে থেকে বাম হাত দিয়ে আরিফুল হকে নেয়া ফুল গ্রহণ করেন। যা পরদিন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।

অথচ একই মামলায় জেল খেটে বের হওয়া হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জিকে গাউকে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বরন করেন খালেদা জিয়া। এছাড়া দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে একই মামলায় জেল খাটা জিকে গাউস সম্পাদকীয় পদ পেলেও এক্ষেত্রে আরিফের প্রাপ্তি শুন্য। খালেদা জিয়া সহ দলের নীতিনির্ধারকরা যে আরিফুলের ওপর সন্তুষ্ট নন, সেটা দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জানেন আরিফুল হকও। তবে, ইদানিং মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নানা মাধ্যমে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন বলেও জানিয়েছে সূত্রটি।

সূত্রমতে, মেয়র প্রার্থীদের সম্ভাব্য তালিকায় তিন নম্বারে আরিফুল হক চৌধুরীর নাম থাকলেও তার দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির সম্ভাবনা খুবই কম।

এছাড়া বিএনপি নেতাদের মধ্যে যারা মেয়র পদে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা হলেন মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, সাবেক আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট পৌরসভার সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল কাইয়ুম জালালি পংকি, বর্তমান সহ-সভাপতি ও প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, বর্তমান সহ-সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম।

এদের মধ্যে পংকি, নাসিম, সেলিম ও লোদী দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত সিসিক নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন তারা। এ তালিকায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন এডভোকেট সামসুজ্জামানও। তাদেরকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত বৈঠক করতে হয় খালেদা জিয়াকে। দলীয় চেয়ারপার্সনের নির্দেশে তারা ছাড় দেন আরিফুল হকে। শর্ত অনুযায়ী আফির সামসুজ্জামানের বাসায় গিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমাও চান।
এরপর সামসুজ্জামান সহ মনোনয়ন প্রতাশি বিএনপি নেতারা আরিফের পক্ষে মাঠে নামেন। তাদের সবার সম্মিলিত ঘাম ঝরানো প্রচেষ্ঠায় মেয়র নির্বাচিত হয়ে বাজিমাত করেন আরিফ। তবে এবার তাদের কেউই আরিফকে ছাড় দিতে নারাজ। নির্বাচনের খায়েস নিয়ে আগেবাগেই মাঠে নেমেছেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন, লবিং চালাচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর চেষ্ঠা করছেন তারা। বসে নেই  শাহরিয়ার ও শামীমও। তারাও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশ নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে প্রস্তুতি চলছে। মেয়র পদে কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে- তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

তবে, এবার নতুনমুখ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।’ আসন্ন সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করতে নিজেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন জানিয়ে মহানগর বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘দল মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করবো।’

নির্বাচন করার প্রস্তুতির কথা জানান মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমও। তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনেও আমি প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু দলীয় চেয়াপার্সনের নির্দেশনার কারণে দল নির্বাচন করতে পারিনি। এবার দল আমাকে মূল্যায়ণ করবে।’ মেয়র পদে নতুন আসার যে গুঞ্জণ রয়েছে- সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এমন আলোচনাতো চলছে।’

উল্লেখ্য, সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। এ নির্বাচনে বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে ৩৫ হাজার ১শ’ ৫৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। আরিফের প্রাপ্ত ভোট ১লাখ ৭হাজার ৩শ’৩০। আর কামরান পান ৭২হাজার ১শ’ ৭৩ ভোট।

এবারও আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে পারেন দলটির সিলেট মহানগর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। যদিও আলোচনায় রয়েছেন আরও দু’জন।

এদের একজন হচ্ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। অপরজন  ২০নং ওয়ার্ডের টানা ৪ বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ১১৩৪ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930