শিরোনামঃ-

» সাধারণ ক্যালকুলেটরে ধরবে না প্রকৌশলী শামসুলের সম্পত্তির হিসাব!

প্রকাশিত: ১৩. জুন. ২০১৭ | মঙ্গলবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশ রেলওয়ের খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী শামসুল হকের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, তাঁর সম্পত্তির হিসাব সাধারণ ক্যালকুলেটরে ধরবে না।

এসব সম্পত্তির উৎস কী, তা জানা যায়নি।

ঢাকা ও কুষ্টিয়ায় রয়েছে বিলাসবহুল সাতটি ফ্ল্যাট। কুষ্টিয়ায় দুটি বহুতল মার্কেট এবং রাজধানীর অভিজাত বিপণিবিতানে একাধিক দোকান। ব্যাংকের লকারে গচ্ছিত আছে শতাধিক ভরি সোনা। রয়েছে ফিক্সড ডিপোজিট। আর গ্রামের বাড়িতে ১০ বিঘা জমি। চলাফেরা করেন বিলাসবহুল গাড়িতে। স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি মিলিয়ে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক তিনি। এসব কোনোটি তাঁর নিজের নামে, কোনোটি স্ত্রী ও সন্তানদের নামে।

অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ে প্রকল্পে দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন শামসুল হক। তিনি কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করে ২০ বছর আগে রেলওয়েতে উপসহকারী প্রকৌশলী পদে যোগ দেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে হন সহকারী প্রকৌশলী। কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়ার রাজু আহাম্মেদ রোডের ২০/৭ নম্বর আলিশান ঐশী মঞ্জিলে বাস তাঁর। বাড়িটি প্রায় এক বিঘা জমির ওপর নির্মিত। চারদিকে উঁচু প্রাচীরঘেরা বাড়ির ভেতরে আভিজাত্যের ছাপ। দৃষ্টিনন্দন নকশায় নির্মিত ভবনের সামনের ফাঁকা জায়গায় আয়েশি বিনোদনের জন্য খরচ করা হয়েছে লাখ লাখ টাকা। বাড়িটি শামসুলের স্ত্রী শাহিন আক্তার ওরফে শাবানার নামে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু ঐশী মঞ্জিল নয়, কুষ্টিয়া শহরে আরো কয়েকটি আলিশান বাড়ি রয়েছে এ দম্পতির। এ ছাড়া শহরের কাস্টমস মোড়ে মৎস্য ভবনের বিপরীতে আছে ৬ কাঠা জমির ওপর একটি বাড়ি। কাস্টমস মোড়ে মুরাদ নামে ১ ব্যক্তি বাড়িটি দেখাশোনা সহ ভাড়া আদায় করেন। এটিও শামসুলের স্ত্রীর নামে।

শামসুলের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বালিয়াসিসা গ্রামে। বালিয়াসিসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে তাঁর রয়েছে বিলাসবহুল দোতলা একটি বাড়ি। এর নিচতলায় থাকেন তাঁর সেজ ভাই শওকত আলী।

স্থানীয় লোকজন জানায়, বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উৎসবের সময় শামসুল এ বাড়িতে আসেন। গ্রামের বাড়ি হলেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ অত্যাধুনিক সব ধরনের সুবিধা রয়েছে। কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়ার টিঅ্যান্ডটি কলোনি রোডের ১০ তলা কেআরএল টাওয়ার।

এ টাওয়ারের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার দু’টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট স্ত্রী ও দুই সন্তানের নামে। কুষ্টিয়ার কোর্ট স্টেশনের সামনের রোডে পাঁচ তলা আলিফ লাম মার্কেট। এই বাণিজ্যিক ভবন স্বামী-স্ত্রীর নামে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ মার্কেটের একজন ব্যবসায়ী জানান, পাঁচ কাঠা জমির ওপর পাঁচ তলা মার্কেট থেকে শাবানা মাসে ৬৫ হাজার টাকা ভাড়া তোলেন। দেশের অন্যতম বড় কাপড়ের হাট মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ বাজার। এ বাজারে দোতলা মার্কেট রয়েছে শাবানা ও তাঁর দুই সন্তানের নামে। সেখানে তানিয়া গার্মেন্ট নামে দোকানও রয়েছে। এ দম্পতি চলাফেলা করেন বিলাসবহুল প্রাইভেট কারে। প্রিমিও এফ মডেলের দামি কারটি স্ত্রী’র নামে কেনা। এ ছাড়া পোড়াদহ বালিয়াসিসা গ্রামে ১০ বিঘা জমি আছে স্বামী-স্ত্রীর নামে।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটির ১০ নম্বর ভবনের ৩০২ নম্বর ফ্ল্যাট ও ১৫ নম্বর ভবনের ৬০৪ নম্বর ফ্ল্যাট স্বামী-স্ত্রীর নামে। মোহাম্মদপুর টোকিও স্কয়ার শপিং মলের নিচতলায় ১৪৩ নম্বর মিস কিউটি নামের দোকানটি স্ত্রীর নামে। এই রেল কর্মকর্তা ও তাঁর স্ত্রী লেনদেন করেন সাতটি ব্যাংকে।

একটি সূত্রের দাবি, স্ত্রীর শতাধিক ভরি সোনার গয়না আছে সোনালী ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখার লকারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজবাড়ী রেলস্টেশনের এক গেটম্যান জানান, মাস্টাররোলের কর্মচারী থেকে তাঁকে স্থায়ী চাকরি দেওয়ার কথা বলে দেড় লাখ টাকা নেন শামসুল। চার বছর টালবাহানা করেন। পরে টাকা ফেরত দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ভুক্তভোগী জানান, ক্লিনার পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তিনজনের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি করেন শামসুল। তাঁদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়েছেন। বাকি টাকা চাকরি দেওয়ার পর নেবেন।

এসব বিষয়ে জানতে শামসুল হক ও তাঁর স্ত্রী শাহিন আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁদের পাওয়া যায়নি। তাঁদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তাঁরা রিসিভ করেননি। তাঁদের বাসায় গত ১৫ দিনে চারবার গিয়েছেন এ প্রতিবেদক। দুজনের কাউকে পাননি। সর্বশেষ গত সপ্তাহে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে বাড়ির লোকজন গেট বন্ধ করে দেন।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক আব্দুল গাফফারের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘শামসুল হকের সম্পদের বিষয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। সম্প্রতি তাঁকে নোটিশ করা হয়েছে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪৭০ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930