শিরোনামঃ-

» মৌলভীবাজারে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

প্রকাশিত: ০৪. জুলাই. ২০১৭ | মঙ্গলবার

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সোমবার বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানি তেমন একটা বাড়েনি। তবে ডুবে যাওয়া রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ী, মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এসব এলাকার মাধ্যমিক পর্যায়ের ২০টি স্কুল, প্রাইমারী ও মাদ্রাসা পর্যায়ে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায়, কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা কমলেও শেওলায় ৭২ সেন্টিমিটার ও শেরপুরে ২৪ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ওই নদীর পানি না কমা পর্যন্ত এই তিন উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি তেমন একটা উন্নতি হবে না বলে জানা গেছে। বানবাসি মানুষদের মার্চ মাসের দূর্যোগের পর দফায় দফায় আশ্রয় কেন্দ্র সহ আক্রান্ত এলাকায় ত্রান সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়।

জানা যায়, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজানে থেকে নেমে আসা পানিতে কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার বন্যা আক্রান্ত এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন করে উঁচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বড়লেখা-মৌলভীবাজার সড়কের কয়েকটি স্থানে বন্যার পানিতে রাস্তা তলিয়ে গিয়ে জেলা সদরের সাথে বড়লেখা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

অনেকেই নিজ বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় জুড়ী উপজেলা পরিষদ, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের ভেতর সহ কুলাউড়া পৌর এলাকার ৩টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আখাইলকুড়া ইউনিয়নের কাদিপুর, নাজিরাবাদ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

বড়লেখায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কে ঝুকি নিয়ে এতদিন ২-৪টি যানবাহন চলাচল করলেও সড়কে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। গত ৩ সপ্তাহ ধরে উপজেলার ৫ ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। ঘর-বাড়ি নিমজ্জিত হয়ে রান্নাবান্না করার মতো শুকনো কোন জায়গা না থাকায় লোকজন সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া গৃহহীন মানুষগুলো এখনও সরকারি ত্রাণ সহায়তা পায়নি। দূর্গত এলাকায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে উপজেলার তালিমপুর ও বর্নি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি গ্রামের শতভাগ ঘরবাড়ির আঙ্গিনা, বসতঘর ২ থেকে ৫-৬ ফুট পর্যন্ত বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থাকতে দেখা গেছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় বাজার-হাট করাও তাদের সম্ভব হচ্ছে না। হাজার হাজার পানিবন্দী মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বন্যা দুর্গত এলাকায় এখনও সরকারী ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়নি বলে লোকজন অভিযোগ করেন। রান্না করার মতো কোন শুকনো জায়গাও অবশিষ্ট নেই। এরমধ্যে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

সুজানগর ইউনিয়নের ছিদ্দেক আলী বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত ভোলারকান্দি গ্রামের খেলারুন বেগম, মনোয়রা বেগম ও লালী বেগম বলেন- ১১দিন থাকিয়া ই-স্কুলে আছি। গত রাইত (রাত) আফালে (তুফানে) আমার বাড়ির ঘর, টিন আওরে (হাওরে) উড়াইয়া নিছেগি (নিয়ে গেছে) আইজ (আজ) খবর আইছে গ্রাম থাকি। হুরুতার বাফ (সন্তার বাবা) গেছইন দেখাত। খুব বেশি আফাল (তুফান) দিছে। মাইনসে (মানুষে) আইয়া কইরা সব ভাসাইয়া নেরগি। ই-খানো খানির (খাবারের) সমস্যায় আছি। আশ্রয় কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত হুইপ সাবের ৫’শ টাকা, লুঙ্গি, সেমাই, চিনি, তেল, পিআই’র (পিআইও) ৫’শ টাকা আর ইউএন (ইউএনও) সাহেবের কিছু চিড়া, মুড়ি ছাড়া এখন পর্যন্ত সরকারি কোন সায্য (সাহায্য) পাইছি না। খুব কষ্টে আছি আমরা।’

ওই উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের ১০টি, প্রাইমারী পর্যায়ের ৩৬টি ও মাদ্রাসা পর্যায়ে ৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকেছে। কোন কোনটির মাঠ ছাড়াও স্কুলের শ্রেণী কক্ষ, অফিস রুম তলিয়ে গেছে। ৬ জুলাই থেকে অর্ধবার্ষিক ও প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণার চিন্তা ভাবনা করছে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ১১৪৪ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930