শিরোনামঃ-

» পুলিশ কর্মকর্তার যৌতুক দাবি; স্ত্রীকে রড দিয়ে পিটিয়ে আঘাত

প্রকাশিত: ২৫. জুলাই. ২০১৭ | মঙ্গলবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবীতে স্ত্রীকে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ঘরে আটকে রেখে তিনদিন ধরে গৃহবধূকে নির্যাতন করা সহ তার ৩ বছরের শিশু সন্তানকেও মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনকারি ঐ পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে খুলনা আদালতে ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন।

এদিকে শনিবার আহত নারীকে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় নারী নির্যাতন মামলা করতে গেলে রবিবার বিকাল পর্যন্ত নানা অযুহাতে মামলা নেয়নি লোহাগড়া থানা পুলিশ।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়- সাড়ে ৪ বছর আগে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নান শরীফের মেয়ে ফাতেমা বেগম শিখার সাথে লোহাগড়া পৌরসভার কুন্দশী এলাকার সৈয়দ সিরাজ আলীর ছেলে পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ আল মামুনের (উজির আলী) বিয়ে হয়।

বিয়ের পর বছর খানেক সুখের জীবন কাটলেও যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী ফাতেমা বেগম শিখার ওপর শুরু করে নির্যাতন। যৌতুকের দাবি মেটাতে গৃহবধূর পাঁচ লাখ টাকার গহনাসহ বাবার বাড়ির গরু পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে। এমনকি টাকা সুদ করে এনেও যৌতুকের টাকা পূরণ করা হয়েছে। তবুও কপালে সুখ মেলেনি গৃহবধূ ফাতেমার।

চাকুরিতে বদলি ও পদোন্নতির কথা বলে পুলিশ কর্মকর্তা আল মামুন সম্প্রতি ফাতেমার বাবার কাছে আরও ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। দাবিকৃত এই টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গত শুক্রবার (২১ জুলাই) রাতে রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয় ফাতেমাকে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শনিবার সকাল ১০টার দিকে ফাতেমাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফাতেমা জানান- যৌতুকের দাবিতে তার স্বামী ৩ দিন ঘরে আটকে রেখে রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে তাকে। তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের ৩ বছরের শিশু সন্তান আরাফাতকেও লাথি মারে পাষণ্ড বাবা।

ফাতেমার বাবা আব্দুল মান্নান শরীফ বলেন- ”প্রথমে আমরা মামুনকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছি। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে পদোন্নতির কথা বলে আমাদের কাছ থেকে এই টাকা নেয়। কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর আবারো ওসি হবার জন্য আমার মেয়ের কাছে টাকা দাবি করে।”

“টাকার জন্য শিখার ওপর শুরু হয় নির্যাতন। এখন কোর্ট ইন্সপেক্টর থেকে থানায় যাওয়ার নাম করে ১০ লাখ টাকা দাবি করে সে। এমনকি জমি বিক্রি করে টাকা দিতে বলে। সেই টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গত শুক্রবার রাতে আমার মেয়েকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। রড দিয়ে ২৫টি আঘাত করেছে।”

মা ফুরজাহান বেগম বলেন- “মামুন এতোটা লোভী আমরা আগে বুঝতে পারিনি। মোটা অঙ্কের টাকা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছি। তবুও ওর টাকার প্রয়োজন শেষ হয়নি। আমার মেয়েকে লাথি ও চোখে ঘুষি দিয়ে এবং রড দিয়ে মেরে জীবনটা প্রায় শেষ করে দিয়েছে। এ নির্যাতনের বিচার চাই।”

ভাই সাবু শরীফ বলেন- “হাসপাতালেও আমার বোনের চিকিৎসা ঠিকভাবে করাতে পারছি না। দুলাভাই হাসপাতাল ছাড়ার হুমকি দিয়ে গেছে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি। লোহাগড়া থানায় মামলার জন্য এজাহার নিয়ে গেলে ওসি সাহেব আমাদের রুম থেকে বের করে দিয়েছে। রাত ১২টা পর্যন্ত বসে থেকেও তিনি আমাদের মামলা নেননি।”

স্ত্রী নির্যাতন বিষয়ে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা আল মামুন ওরফে উজির আলী প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে ‘কাজে ব্যস্ত আছি’ ভাই পরে কথা বলবো বলে এড়িয়ে গেছেন।

লোহাগড়া থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলমের সাথে শনিবার রাত থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি এলাকার চেয়ারম্যানদের মীমাংসার উদ্যোগের কথা বলে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষার কথা বলেন।

রবিবার দুপুরে আবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- ভাই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা নিতে গেলে এসপি সাহেবের অনুমতি নেয়া লাগে। এডিশনাল এসপি সাহেব বিকেলে লোহাগড়ায় আসবেন, উনি এসে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪৪১ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930