শিরোনামঃ-

» ছাতকে আগুনে পুড়িয়ে স্ত্রীকে হত্যা মামলায় স্বামী জেলে

প্রকাশিত: ১৪. ফেব্রুয়ারি. ২০১৮ | বুধবার

ছাতক প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের ছাতক পৌর শহরে ঘরের মধ্যে স্ত্রীর শরীরে আগুন দিয়ে তাকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় স্বামীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

সুনামগঞ্জের আমলগ্রহণকারী ছাতক বিচারিক হাকিম আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক মোহাম্মদ শহীদুল আমিন সমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) আবুল মনসুর লিটন (৩৩) নামের ওই ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ছাতক পৌর শহরের দক্ষিণ বাগবাড়ি এলাকায় আবুল মনসুরের নিজ বাড়িতে গত বছরের ৬ মে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

আবুল মনসুর জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার হিম্মতেরগাঁও গ্রামের আব্দুন নূরের ছেলে। তার স্ত্রীর নাম ইসফা বেগম (২৫)। ঘটনার পর আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ইসফা বেগমের বড় ভাই রাসেল আহমদ। মামলায় আবুল মনসুর ও তার বড় ভাই আব্দুস সহিদ বাপনকে আসামি করা হয়।

মামলার বাদী রাসেল আহমদ জানান, তাদের বাড়ি জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের বিছনা গ্রামে। আবুল মনসুরের পরিবার এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী। এ কারণে ঘটনার পর প্রায় এক মাস থানায় চেষ্ঠা করলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালতের নির্দেশে থানায় মামলাটি নথিভূক্ত করে পুলিশ।

মামলার এজহারে তিনি উল্লেখ করেন, আবুল মনসুরের সঙ্গে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে বিয়ে তার বোন ইসফা বেগমের। তাদের দেড় বছর বয়সী এক মেয়ে আছে। বিয়ের পর থেকে ইসফার প্রতি কুদৃষ্টি ছিল আবুল মনসুরের বড় ভাই আব্দুস সহিদ বাপনের (৪০)। বিষয়টি ইসফা তাদের একাধিকবার জানিয়েছেন। পরে তারা বিষয়টি আবুল মনসুরকেও জানান। কিন্তু আবুল মনসুর তাদের কথা অবিশ্বাস করে উল্টো ইসফার সঙ্গে বিরূপ আচরণ করতে থাকেন। ঘটনার দিন সকালে এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দুই ভাই আবুল মনসুর ও আব্দুস সহিদ মিলে ইসফাকে মারধর করেন। এর জের ধরে রাত সাড়ে ১২টায় আবার দুইভাই মিলে ইসফার শরীরে অ্যাসিড ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।

ঘটনার পর রাত সোয়া একটার দিকে আব্দুস সহিদ রাসেল আহমদকে ফোন করে জানান, তার বোন আগুনে দগ্ধ হয়েছেন। তারা সঙ্গে সঙ্গে ছাতকের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পরে আবার জানানো হয় ইসফাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। তারা ওসামীতে গিয়ে ইসফা বেগমকে মুমূর্ষূ অবস্থায় দেখতে পান। তার পুরো মুখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশ আগুনে ঝলসানো ছিল। ওসমানীতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চিকিৎসকেরা তাকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর ইসফাকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হন তারা। পথে নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ এলাকায় যাওয়ার পর ইসফা মারা যান। এরপর লাশ দিয়ে তারা ছাতক থানায় আসেন। ময়নাতদন্ত শেষে ৮মে বিছনা গ্রামে নিয়ে ইসফাকে দাফন করেন তারা। রাসেল আহমদ মামলার এজহারে আরও বলেছেন, ওই পরিবারের লোকজনের সন্দেহজনক আচরণ ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ইসফাকে নির্মমভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হন তিনি।

রাসেল আহমদ বলেন, পুলিশ আদালতের আদেশে মামলা নিলেও শুরু থেকেই তদন্তে গাফিলতি করে। পরে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) প্রেরণ করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আশরাফুজ্জামান বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন আছে। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন সময় চেষ্ঠা করেছি। কিন্তু তারা পলাতক থাকায় গ্রেপ্তার করা যায়নি। একজন আজ (গতকাল) আদালতে আত্মসমর্পন করেছে বলে জেনেছি। অন্য আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্ঠা অব্যাহত আছে।
সুনামগঞ্জের বিচারিক হাকিম আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) নুরে আলম সিদ্দিকী উজ্জ্বল বলেন, সোমবার আবুল মনসুর আদালতে হাজির হয়ে জামিনের প্রার্থনা করেন। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫৩২ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930