শিরোনামঃ-

» নদীকৃত্য দিবসে সিলেটে ‘অভিন্ন নদী, অভিন্ন সংস্কৃতি’ শীর্ষক সমাবেশ

প্রকাশিত: ১৫. মার্চ. ২০১৮ | বৃহস্পতিবার

 
স্টাফ রিপোর্টারঃ আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার (১৪ মার্চ) সিলেটে ‘অভিন্ন নদী, অভিন্ন সংস্কৃতি’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সুরমা-বরাক উপত্যকার সাংস্কৃতিক সংগঠকেরা নদীরক্ষা্র সংগ্রামে সংহতি প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট শাখা, সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার ও কথাকলি সিলেট-এর যৌথ উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
নগরীর কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের মুক্তপ্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা্ থেকে আগত সাংস্কৃতিক সংগঠকেরা অংশগ্রহণ নেন। বাংলাদেশ এনভায়রোমেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন)-এর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সংগঠক রানা ফেরদৌস চৌধুরী’র  সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সাংস্কৃতিক সমাবেশের মূল বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম।
অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন- ভারতের আসাম রাজ্য থেকে আসা সাংস্কৃতিক সংগঠক সুব্রত রায়, অলক পাল চৌধুরী ও ড. রাজিব কর, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সহ-সভাপতি আফজাল হোসেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল মুনির, সারী বাঁচাও আন্দোলনের আব্দুল হাই আল হাদি, বাপার সংগঠক ডা. তায়েফ আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কথাকলি সিলেটের শামসুল বাসিত শেরো ।
মূল বক্তব্যে আব্দুল করিম কিম আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসের প্রেক্ষাপট ও ‘অভিন্ন নদী, অভিন্ন সংস্কৃতি’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক সমাবেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস নদীর প্রতি জবাবদিহি করার দিন দিবসটি মানুষকে নদী সম্পর্কে জানায়। প্রতি বছর নানান আয়োজনে বিশ্বের দেশে দেশে এই দিনে নদীরক্ষায় নতুন করে শপথ নেয় মানুষ। নদীর সাথে সংগঠিত অন্যায়ের প্রতিবাদ হয়। বাঁধ বা ব্যারেজ দিয়ে নদীর স্বাভাবিক চলাচল বন্ধের বিরুদ্ধ্যে পরিবেশবাদীিরা নিরন্তর আন্দোলন করছেন। তাঁদের এ সংগ্রামের সহযোগী শক্তি সংস্কৃতিকর্মীরা। অভিন্ন নদী, ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বরাক-সুরমা পাড়ের মানুষদের পানির অধিকার নিয়ে যেন কোন বিবাদ না ঘটে।
সে লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সাংস্কৃতিক সংগঠকদের সংগঠিত হওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা-কুশিয়ারার উজানে টিপাইমুখ বাঁধের নির্মান সম্ভাবনায় এ অঞ্চলের এক কোটি মানুষের মনে ভীতি আছে।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে প্রায় ৫৪টি অভিন্ন নদী আছে। এর মধ্যে ২১টি নদী সুরমা অববাহিকা দিয়েই প্রবাহিত। সুরমা, কুশিয়ারা, লুভা, পিয়াইন, ডাউকি, সারি-গোয়াইন, ধলা, সোমেশ্বরী, ধামালিয়া, নয়াগাঙ, উমিয়াম,যাদুকাটা, সোনাই-বারদল, জুরি, মনু, ধলাই, লংলা, খোয়াই, করঙ্গি, সুতাং, সোনাই। এই আন্তঃদেশীয় নদীগুলোর উজানে ভারত একতরফাভাবে একের পর এক বাঁধ ও ব্যারেজ নির্মান করছে। সুরমা পাড়ের এক কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় বরাক উপত্যকার সাংস্কৃতিক সংগঠকদের জোরালো প্রতিবাদ প্রয়োজন।
 
ভারতের শিলচরের সাংস্কৃতিক সংগঠক সুব্রত রায় বলেন, বরাক নদীতে বাঁধ নির্মানের পরিকল্পনা অন্যায় অন্যায্য। রাষ্ট্রের কাঁটা তার বরাক-সুরমা পাড়ের মানুষের ভাষা ও সাংস্কৃতিক অভিন্নতাকে পৃথক করতে পারেনি। বাঁধ দিয়ে ভাটির দেশের নদ-নদীকে ক্ষতিগ্রস্ত করার যে কোন আগ্রাসী চিন্তায় ভারতের সাংস্কৃতিক কর্মীরা লড়বেন।
 
শিলচরের প্রবীণ সাংস্কৃতিক সংগঠক অলক পাল চৌধুরী বলেন, অভিন্ন নদী বিরোধের উৎস নয়, সমৃদ্ধির অগ্রদূত। ভাষায়-গানে-কবিতায়-নাটকে-আনন্দে-ভালোবাসায়-কান্নায় নদীপাড়ের অভিন্ন মানূষ আমরা। নদীর পানি নিয়ে কোন বৈষম্য হোক আমরা চাই না। উজানের নদীতে আন্তর্জাতিক রীতিনীতির লংঘন করে বাঁধ বা ব্যারেজ নির্মাণ করে ভাটির মানুষকে বঞ্চিত করার চেস্টা অমানবিক। আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে আছি।
 
সভাপতির বক্তব্যে রানা ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ভারতের বরাক নদীর দুই শাখা সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা-কুশিয়ারা। বরাক-সুরমা অববাহিকার মানুষের অভিন্ন ভাষা, অভিন্ন সংস্কৃতি। এ অঞ্চলের নদী ও নদীর জলধারা মানুষের মনে সুর ও ছন্দ জাগায়। একই আকাশ, একই বাতাস এক হৃদয়ের একই তো শ্বাস তবুও নদীর ব্যাবহার নিয়ে দুই বন্ধু রাস্ট্রের মধ্যে রয়েছে কিছু মনোমালিন্য। রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকেরা ভাটির দেশের স্বার্থহানী করায় যে মনোবেদনা আছে বরাক পাড়ের সাধারণ মানুষ-এর বিরুদ্ধ্যে অবস্থান নিলে সে বেদনা কিছুটা অন্তত উপশম হবে। আর সে জন্য সংস্কৃতিকর্মীরাই মুখ্য ভূমিকা নিতে পারে। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হওয়া ঘন্টাব্যাপী এ সাংস্কৃতিক সমাবেশের শুরুতে নদী নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করেন ফাতেমা রশিদ সাবা।
 
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে ব্রাজিলে কুরিতিবা শহরে এক সমাবেশ থেকে নদীর প্রতি দায়বদ্ধতা মনে করিয়ে দেওয়ার লক্ষে এ আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সমাবেশে একত্র হয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। তাইওয়ান, ব্রাজিল, চিলি, লেসোথো, আর্জেন্টিনা, থাইল্যান্ড, রাশিয়া, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঐ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা ১৪ মার্চকে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেন।বাংলাদেশে নদীকৃত্য দিবস উদযাপন শুরু হয় ২০০৬ সাল থেকে। সিলেটে ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এই দিবস নিয়মিতভাবে উদযাপন করে যাচ্ছে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৩৬৮ বার

Share Button

Callender

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30