শিরোনামঃ-

» গলায় ওড়না পেঁচিয়ে রথীশকে হত্যা করে স্ত্রী স্নিগ্ধা

প্রকাশিত: ০৪. এপ্রিল. ২০১৮ | বুধবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ দীর্ঘ দুই মাস ধরে পরিকল্পনার পর রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও আওয়ামী লীগ নেতা রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনাকে (৫৮) হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ।

তিনি বলেছেন, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রথিশের স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা ওরফে দীপা ভৌমিক ও তার ‘প্রেমিক’ কামরুল ইসলাম জাফরী জড়িত। এ ঘটনায় ওই আইনজীবীর স্ত্রী এবং তার কথিত প্রেমিকসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে নগরীর তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকার একটি নির্মাণাধীন বাড়ির ঘরের মেঝে খুঁড়ে মরদেহ উদ্ধারের পর বুধবার দুপুর ১২টায় র‌্যাব-১৩ এর কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক এসব তথ্য জানান।

এর আগে মঙ্গলবার দিনভর রংপুর শহরের বাড়ির পাশের ডোবায় তল্লাশি চালায় র‍্যাব।এ সময় পুলিশ-র‌্যাবের বিপুলসংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ডোবায় তল্লাশি চালানোর সময় সেখানে একটি রক্তমাখা শার্ট পাওয়া যায়। নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর রক্তমাখা শার্ট উদ্ধার নিয়ে তদন্তের মোড় নেয়।

পরে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে স্নিগ্ধা রাণী ভৌমিককে তাদের নগরীর বাবুপাড়ার বাসা থেকে আটক করা হয়। এর আগে তার সহকর্মী কামরুলসহ আরও দুই কিশোরকে আটক করে পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদে স্নিগ্ধা রাণী জানান, তার স্বামীর লাশ তাজহাট মোল্লাপাড়া মহল্লার তার প্রেমিক কামরুল ইসলামের বড় ভাই খাদেমুল ইসলামের নির্মাণাধীন বাসায় আছে। পরে স্নিগ্ধা রাণী ভৌমিক ও কামরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাসায় গিয়ে বস্তার মধ্যে বালুর ভেতরে লুকিয়ে রাখা লাশ উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে নিহতের ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক ও ভগ্নিপতি অধ্যাপক ডা. অনিমেষ মজুমদার ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।

রংপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বেনজির আহমেদ বলেন, বাবু সোনা নিখোঁজের পর শনিবার কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ওই জিডির সূত্র ধরে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরবর্তীতে বাবু সোনার ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক সুবল রোববার থানায় একটি মামলা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা ওরফে দীপা ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব আটক করে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি এ হক্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন এবং মরদেহের অবস্থান সম্পর্কে জানান।

র‌্যাব মহাপরিচালক জানান, পিপি রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিকের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির সাথে। কামরুল স্নিগ্ধার সহকর্মী এবং তিনি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। স্নিগ্ধা ও কামরুল দুই মাস আগেই রথীশ চন্দ্রকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকেই তাজহাট মোল্লাপাড়ার দুই কিশোরের সহযোগিতায় ২৮ মার্চ একটি নির্মাণাধীন ভবনের ভেতরে গর্ত করে রাখেন তারা। পর দিন ২৯ মার্চ রাতে ভাত ও দুধের সঙ্গে ১০টি ঘুমের বড়ি খাইয়ে রথীশ চন্দ্রকে অচেতন করেন স্নিগ্ধা। এরপর স্নিগ্ধা ও তার প্রেমিক মিলে রথীশ চন্দ্রকে গলায় ওড়না পেচিয়ে হত্যা করে লাশ ঘরের মধ্যেই রেখে দেন। পরদিন ভোরে সবার অগোচরে কামরুল বাবুপাড়ার ভৌমিকের বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

পরে সকাল ৯টায় কামরুল একটি ভ্যান নিয়ে রথীশ চন্দ্রের বাড়িতে আসেন। স্নিগ্ধা আলমারির ভেতর রথীশ চন্দ্রের মরদেহ ঢুকিয়ে ভ্যানে করে নিয়ে যায় কামরুলের ভাইয়ের মোল্লাপাড়ার নির্মাণাধীন একটি বাড়িতে। সেখানে আরো তিনজন মিলে লাশটি গর্ত করে মাটিচাপা দেয়া হয়।

বেনজির আহমেদ আরও বলেন, রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক ও তার কথিত প্রেমিক কামরুল তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। মাত্র ৩০০ টাকার বিনিময়ে তারা দুজন ছাত্রকেও এ কাজে ব্যবহার করেন। কামরুল তাদের শিক্ষক হওয়ায় তার আদেশ পালন করেছেন তারা।

তারা হলেন-মোল্লাপাড়ার রবিউল ইসলামের ছেলে সবুজ ইসলাম (১৭) ও একই এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে রোকনুজ্জামান (১৭)। তাদেরকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পরিবারের দাবি অনুযায়ী গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টায় বাসা থেকে বের হন নিহত আইনজীবী রথিশ চন্দ্র বাবু সোনা।

কিন্তু পুলিশের ধারণা বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টা থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। কারণ বৃহস্পতিবার রাত দশটা ২২ মিনিটে সর্বশেষ তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলেন। তখন তার অবস্থান ছিল স্টেশন এলাকায়। সেই থেকে তার ফোন বন্ধ ছিল। কিন্তু রথিশের স্ত্রীর পুলিশ-র‌্যাবকে জানায় শুক্রবার সকাল সাড়ে ছয়টার একটি মোটর সাইকেলে চেপে চলে যান। আসলে রতিশ চন্দ্র নিখোঁজ ছিলেন বৃহস্পতিবার রাত থেকেই। তাকেই ওই রাতেই হত্যা করে একটি বাড়ির মাটিতে পুঁতে রাখা হয়।

জানা গেছে, ক্লু বিহীন এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে চরম অন্ধকারে পড়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ৫ দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি-জামায়াত, জমিজমা বিরোধ, ব্যক্তিগত এবং হিন্দু ট্রাস্ট নিয়ে কাজ শুরু করেন তারা। উদ্ধার না হওয়ায় নানা কর্মসূচিতে উত্তাল হয়ে উঠে রংপুর।

এদিকে, দফায় দফায় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এবং রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক রথিশের বাড়িতে যান। সেখানেই তাদের প্রাথমিক সন্দেহ হয়। জানা গেছে, পুলিশ কয়েক দফায় রথিশের স্ত্রী সন্তানের সঙ্গে কথার বলার সময় অনেকটা স্বাভাবিক ছিলেন। নিখোঁজের বিষয়টিতে তারা খুব একটা আমলে নেননি।

এদিকে র‌্যাব ও পুলিশের একটি সুত্র জানায়, পরে তারা পরকীয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্তে নামেন। এরপর পুলিশ বাবু সোনার স্ত্রী তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা স্নিগ্ধা ভৌমিক ও তার প্রেমিক একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল ইসলামের মোবাইল ফোনের কললিস্ট বের করে। কললিস্ট দেখে আঁতকে উঠেন পুলিশ। প্রতিদিন প্রেমিক-প্রেমিকা জুটি ৩০ থেকে ৩৫ বার মোবাইলে কথা বলতেন। ওই কললিস্ট দেখে সন্দেহ হলে শনিবার রাতে নগরীর রাধাবল্লভের বাড়ি থেকে প্রথমে গ্রেফতার করা হয় কামরুল ইসলামকে। তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এরপর হত্যাকাণ্ডের তথ্য জানায় কামরুল।

মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব বাবু পাড়ার বাড়ি থেকে স্নিগ্ধা ভৌমিককে গ্রেফতার করে। তাদের দেয়া তথ্য পেয়ে র‌্যাব মঙ্গলবার রাতে সোয়া ১ টার দিকে বাবু সোনার বাবুপাড়ার বাড়ি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে মোল্লাপাড়ায় খাদেমুল ইসলাম জাফরীর নির্মাণাধীন বাড়ির মেঝে থেকে লাশটি উদ্ধার করে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪৭৯ বার

Share Button

Callender

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30