সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি কেনার নামে ২০০ কোটি টাকার টেন্ডার ভাগবাটোয়ারার পাঁয়তারা চলছে। কাগজে কলমে আন্তর্জাতিক টেন্ডারের কথা বলা হলেও কোন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এ টেন্ডারে অংশ নেয়নি।
শুধু তাই নয়, বিতর্কিত ও সিন্ডিকেটের ঘরোয়া মাত্র সাতটি প্রতিষ্ঠান এ টেন্ডারে অংশ নিয়েছে। যাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে এর আগে নিম্নমানের কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। দরপত্র জমা দেয়া সাতটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একজনেরই নামে-বেনামে ৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো সমমনা ব্যক্তিদের।
তাদের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠান কাজ পেলেও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও কোন না কোনভাবে উপকৃত হবে বলে শিক্ষা ভবনে গুঞ্জন রয়েছে। অতীতে এমন রেকর্ডও রয়েছে। এতে অতীতের মতো এবারও যন্ত্রপাতি কেনার নামে পুকুরচুরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
একই প্রকল্পে এর আগে কেনাকাটা ও যন্ত্রপাতির মান নিয়ে চরম আপত্তি তুলেছিল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মনিটরিং বিভাগ (আইএইডি)। আর সম্প্রতি আইসিটি’র মাধ্যমে সারা দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন শীর্ষক ১৩৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে ই-জিপি টেন্ডার করতে বাধ্য করছে সরকার।
এ প্রকল্পের পরিচালক মেন্যুয়াল পদ্ধতিতে টেন্ডার করার প্রক্রিয়া শুরু করেও পারেননি। আগে কেনাকাটায় অভিজ্ঞতা থেকে ই-জিপিতে যাওয়া বাধ্য করে সরকার। এরপর থেকেই প্রকল্পের পরিচালকের পথ থেকে প্রফেসর জসিমের সরে যাওয়ার কথা শুনা যাচ্ছে।
এ বিতর্কের মধ্যে গতকাল সারা দেশে ১০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সহ ১৭টি আইটেমের টেন্ডার সমঝোতার ভিত্তিতে ভাগবাটোয়ারা করার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা ভবন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের টেন্ডারে শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়ার কথা। এবং অতীতে তাই হয়েছে। কিন্তু এই টেন্ডারের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা গেলো।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে- সেকেন্ডারি অ্যাডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) অধীন ১০ হাজার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও গণিতের গবেষণাগারের সামগ্রী ক্রয় করতে টেন্ডার আহ্বান করা হয়।
বাংলাদেশ সরকার ও এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণের টাকায় প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে। গত ২২শে মার্চ টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। তাতে ইন্টারন্যাশনাল কমপেটেটিভ (আইসিবি) অনুযায়ী পত্র আহ্বানের কথা বলা হয়েছে। ৫ লটে ১১৭টি বিজ্ঞান সামগ্রী বিতরণ করার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়।
সোমবার ছিল দরপত্র বিক্রির শেষ দিন। দুপুর ২টায় দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল। নির্ধারিত সময়ের পর ঠিকাদারদের উপস্থিতিতে দরপত্র খোলা হয়। এতে দেখা যায়, পরিচিত মুখগুলোর ৭টি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছেন। টেন্ডারের অংশ নিতে গিয়ে শিক্ষাভবনে প্রবেশে বাধার মুখে পড়েন আগ্রহী অনেক প্রতিষ্ঠানের অনেকে। এর আগে গতকাল সকাল থেকে শিক্ষা ভবনের পুরানো ঠিকাদারদের আনাগোনা বাড়তে থাকে।
দুপুরের পর চারতলা ও নিচতলায় পুলিশি পাহারা বসানো হয়। এতে শিক্ষাভবনে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়। শিক্ষাভবনের সবাইকে পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) সঙ্গে রাখার জন্য বলা হয় প্রশাসন শাখা থেকে। শিক্ষাভবন সূত্র জানায় যে সাতটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে তাদের স্বত্বাধিকারী ৪ ব্যক্তি।
এ ছাড়া এই ব্যক্তিরা দীর্ঘ দিন থেকে শিক্ষা ভবনে সরকারি কাজের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করছেন। টেন্ডার নিয়ে তাদের সমর্থকদের মধ্যে শিক্ষাভবনে মারামারি, এমনকি গুলির ঘটনাও ঘটে। সম্প্রতি ই-জিপিতে টেন্ডার হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা কমে এসেছে।
এ ব্যাপারে পদাধিকার বলে প্রকল্প পরিচালক ও মাউশি অধিদপ্তরেরর মহাপরিচালক প্রফেসর মাহাবুবুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক টেন্ডার অথচ ই-জিপির ব্যবস্থা নেই, এটা শুনে আমি নিজেও আশ্চর্য হয়েছি। যেহেতু ই-জিপি নেই তাই মেনুয়্যালটি করতে হয়েছে।
তারপর আমরা শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রেখে এ টেন্ডার করার চেষ্টা করেছি। তাছাড়া প্রকল্পের কেনাকাটায় একটি কমিটি আছে। তারাই সরকারি ক্রয় আইন (পিপিআর) অনুযায়ী টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। কম প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়ার ব্যাপারে তিনি জানেন, বিষয়টি পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
আর অধিদপ্তরের ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউম্যান্ট শাখার পরিচালক ও টেন্ডার বাস্তবায়ন কমিটি সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক টেন্ডারে এখনও ই-জিপি চালু হয়নি। তাই আমরা মেনুয়্যালি টেন্ডারের ব্যবস্থা করেছি। তিনি বলেন, প্রকল্পের পিপিআর’র সকল শর্ত মেনে টেন্ডার করা হয়েছে।
এতে ৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। একটি ইংরেজি ও একটি বাংলা দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি ও সেসিপের ওয়েব সাইটে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। তবে কোনো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে তা তিনি বলতে পারেনি।
তিনি দাবি করেন, আন্তর্জাতিক দরপত্র এখন পর্যন্ত ই-জিপিতে দেয়ার ব্যবস্থা নেই। শুধু দেশের মধ্যে টেন্ডার ই-জিপিতে দেয়া হয়।
জানা গেছে, দেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার বহুমুখী উন্নয়নে ‘সেসিপ’ নামে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে এটিই সর্বোচ্চ বাজেটের প্রকল্প। ৩ ধাপে বাস্তবায়িত এই প্রকল্পে মোট ব্যয়ের মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেবে এডিবি।
বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগ ১৬.৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে প্রথম ভাগে (২০১৩-২০১৭) এডিবির সহযোগিতার পরিমাণ ৯০ মিলিয়ন এবং বাংলাদেশ সরকারের ১১৭.২৬ মিলিয়ন ডলার। -মানবজমিন