শিরোনামঃ-

» দিরাইয়ে মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান স্মৃতি পরিষদের বিরোধ নিস্পত্তি

প্রকাশিত: ২২. মে. ২০১৮ | মঙ্গলবার

দিরাই (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ দিরাই উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মন্নান স্মৃতি পরিষদ নেতৃবৃন্দের মধ্যকার বিরোধের নিস্পত্তি হয়েছে।
সোমবার (২১ মে) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সমঝোতা সভায় ঐ বিরোধের নিস্পত্তি হয়। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার,উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও দিরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শাহিদুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সমঝোতা সভায় উপস্থিত ছিলেন দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তফা কামাল, ওসি (তদন্ত) দেলোয়ার হোসেন,মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দিরাই উপজেলা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার আতাউর রহমান,সাবেক কমান্ডার আব্দুল করিম, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার কানাইলাল দাশ,জগদল ইউপি কমান্ডার আব্দুর রব,জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকা অনুমোদিত সংগঠণ আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক আল-হেলাল, দিরাই প্রেসক্লাব সভাপতি সামসুল ইসলাম সর্দার খেজুর,কালনী ভিউ অনলাইন ওয়েবপোর্টালের সম্পাদক প্রকাশক মুজাহিদুল ইসলাম সর্দার,বার্তা সম্পাদক সৈয়দুর রহমান তালুকদার,কালনী ভিউ এর স্টাফ রিপোর্টার সালমান মিয়া,দিরাই অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক সুবীর দেব শাওন প্রমুখ।
সভায় গত ১৬ মে ২০১৮ইং  দিরাই থানা ওসি বরাবরে সাবেক উপজেলা কমান্ডার আতাউর রহমানের দায়েরকৃত অভিযোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আতাউর রহমান তার অভিযোগে দাবী করেন,দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের রায়বাঙ্গালী গ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী মৃত আব্দুল মান্নান ওরফে আব্দুল মনাফ কোন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। তার নামে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মন্নান স্মৃতি পরিষদ পরিচালনা বেআইনী ও দিরাই থানার সকল মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আপত্তিজনক। তিনি দু:খ করে বলেন, দিরাই উপজেলা জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির কর্মী সাংবাদিক নামধারী এমরান প্রধানমন্ত্রীকে হুমকী দিলে আমি তার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে সে দীর্ঘদিন পলাতক থাকে। এখন এমরানের নেতৃত্বাধীন জামাত শিবির চক্র আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। জবাবে আব্দুল মন্নান স্মৃতি সংসদের উপজেলা সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আব্দুল মান্নান ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে একজন প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে পাক বাহিনীর সাথে সশস্ত্র লড়াই করেন। একই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাতির মিয়া ও আইয়্যুব আলীগং সহ স্থানীয় অনেক মুক্তিযোদ্ধারা স্বীকার করেছেন আব্দুল মান্নান একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ২০০০ সালে যুক্তরাজ্যে তার নামে স্মৃতি সংসদ গঠন করে তার ছেলে জুবের আলম খুর্শেদ বিভিন্ন সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অবদান রেখে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা ২০০৯ সালে  দিরাই উপজেলা কমিটি ও বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটি গঠণ করি। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরনকালে ঐ স্মৃতি সংসদের অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ড.জয়া সেন গুপ্তাসহ আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ঐ সংগঠনের মাধ্যমে জগদল আল ফারুক উচ্চ বিদ্যালয়ে বিদ্যুতায়নের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রয়াত জাতীয় নেতা সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত।
সিনিয়র সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আল-হেলাল এবং জগদল ইউপি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রব বলেন, রায়বাঙ্গালী নিবাসী যুক্তরাজ্য প্রবাসী মৃত আব্দুল মান্নান ওরফে আব্দুল মনাফ একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তাকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকারে বিলেতে ও দেশে এই পরিষদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক ও এলাকার অকাল প্রয়াত সাবেক সাংসদ সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, বর্তমান সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তা এমপি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার, মেয়র মোশাররফ মিয়া স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন।
বিভিন্ন সময় মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণীত হওয়ায় দেশে না থাকায় তার নাম তালিকাভূক্ত করা হয়নি। বর্তমানে তার প্রবাসী জেষ্ট পুত্র পিতার নাম তালিকাভূক্তির জন্য মন্ত্রী বরাবরে আবেদন করেছেন। তাছাড়া তালিকাবঞ্চিত উপেক্ষিত মুক্তিযোদ্ধারা মহামান্য হাইকোর্টে রীট পিটিশন মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ড্রাফটকৃত মামলার প্রক্রিয়াধীন তালিকায়ও ঐ মুক্তিযোদ্ধার নাম আছে।
আলোচনার পর সিদ্বান্ত নেয়া হয় যে, মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সংশ্লিষ্ট আব্দুল মান্নান স্মৃতি পরিষদের বিরুদ্ধে এবং সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমানের বিপক্ষে যেসব সংবাদ ও ফেইসবুক পোষ্ট দেয়া হয়েছে তা বিরোধীয় দুপক্ষ নিজ দায়িত্বে ডিলিট দিবেন। কেউ আর কারো বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোন মাধ্যমেই বিষোদগার করবেন না। তালিকাবঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ওরফে আব্দুল মনাফ সাহেবের তালিকাভূক্তির আবেদনের যাবতীয় কাগজপত্র আমাকে দেবেন। আমরা তার নাম তালিকাভূক্তির জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাবো।
সমাপনী বক্তব্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল ইসলাম বলেন- একজন মানুষ দুনিয়াতে বেঁচে নেই। তাঁকে নিয়ে কাদা ছুড়াছুড়ি শোভনীয় নয়। মুক্তিযুদ্ধে সত্যিকার অর্থেই যদি তাঁর অবদান থেকে থাকে তাহলে তাঁকে উপযুক্ত সম্মান দেয়া উচিত। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে সবার কাছে আশা করবো একে অপরের প্রতি সহনশীল হয়ে মুক্তিযদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে কাজ করবেন।
দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তফা কামাল বলেন- আমার কাছে দায়েরকৃত অভিযোগটির ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমি ইউএনও স্যারকে অনুরোধ করলে তারই একান্ত প্রচেষ্টায় এবং আমাদের সকলের সহযোগীতায় বিষয়টি সম্মানজনকভাবে নিস্পত্তি হয়েছে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৬৪২ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930