শিরোনামঃ-

» বালাগঞ্জে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক কর্তৃক ছাত্র বলাৎকার’র অভিযোগ!

প্রকাশিত: ৩০. আগস্ট. ২০১৮ | বৃহস্পতিবার

সিলেট বাংলা নিউজ বালাগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলারদা দারুল উলুম সোনাপুর রুপাপুর কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক (নির্বাহী মুহতামি) কর্তৃক এক শিশু শিক্ষার্থীকে বলাৎকার করার অভিযোগ উঠেছে। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিস মাধ্যমিক লেবেলের বিদ্যাপীঠ সোনাপুর রুপাপুর দারুল উলুম মাদ্রাসা, এই মাদ্রাসার নির্বাহী অধ্যক্ষ শিক্ষক মৌলানা আং রাজ্জাক। এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে মারধরের ভয় দেখিয়ে গত কয়েক মাস থেকে শিক্ষক মৌলানা আব্দুর রাজ্জাক ছাত্রের সাথে এই অনৈতিক কাজ চালিয়ে আসছিলো।

এলাকাবাসি ও ছাত্রটির পারিবারিক সুত্রে জানা যায়- বালাগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মানন গ্রামের মো. ছলিম মিয়ার শিশু ছেলে তুফায়েল আহমদ (১০) পাশের ইউনিয়ন ২নং বোয়ালজুর ইউপির ৪নং ওর্য়াড সোনাপুর গ্রামের কালী বাড়ী বাজারস্থ দারুলউলুম সুনাপুর রুপাপুর মাদ্রাসায় ইসলামি শিক্ষার জন্য ৪র্থ শ্রেনিতে রোযার ঈদের পরে ভিকটিমের বড়ভাই সিএনজি চালক শাহিন মিয়া (২৫) ও মামা রিক্সা চালক আইয়ুব আলি (৫৫) এসে ভর্তি করান।

কয়েকদিন যাবৎ ছেলের সাথে মা ছালেহা (৩৫)  যোগাযোগ না হওয়ায়, ঈদুল আযহার ছুটি উপলক্ষ্য ও মামা(আইয়ুব আলি)র বাড়ি বিয়েতে মা ছালেহা বেগম (৩৫) আসলে মামার বাড়ির পাশে মাদ্রাসা থাকায় ছালেহা বেগম ছেলেকে দেখতে মাদ্রাসায় আসেন, আসার পর শিক্ষকদের ও ছেলে তুফায়েলের আচরণে সন্দেহ জাগে মায়ের মনে, মা’কে দেখে ছেলে তুফায়েল কান্নায় ভেংঙ্গে পড়ে মা ছেলেকে অভয় দিয়ে জানতে চাইলে, ছেলের মলদ্বারে রক্তক্ষরণ দেখেন ছেলে সব খুলে বলে, বলৎকারের কথা শুনে ছালেহা বেগম রাগে ক্ষোভে শিক্ষক আং রাজ্জাক এর কাছে ঘঠনার বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে, প্রথম দিকে এড়িয়ে যান রাজ্জাক সহ শিক্ষকবৃন্দ।

তাঁরা বলেন- ছেলের কয়েকদিন যাবৎ পেঠে অসুখ (আমাশয়-রোগ) হচ্ছে, ছালেহা বেগম উচ্চস্বরে কথা বলে বলেন পাশের বাজারে গিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিব, তখন আব্দুর রাজ্জাক সহ কয়েকজন শিক্ষক ও কমিটির সদস্য মাদ্রাসার অফিসে ছালেহা বেগমের পায়ে ধরে প্রায় আধাঘণ্টা বসে থাকেন, বিষয়টি না জানানোর জন্য অনুরোধ করেন।

এসময় মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্য এ ঘটনাটি মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনহার মিয়াকে মোবাইলে অবগত করেন- তারা ছালেহা বেগমকে বলেন ছেলেকে ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করাতে ও উপযুক্ত বিচার পাবেন বলে আশ্বাস দেন।

২৬ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিষয়টি প্রকাশিত হলে মাদ্রাসার কমিটির কয়েকজন সদস্য অভিযুক্ত শিক্ষককে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ করেন মামা আইয়ুব আলি। ছালেহা বেগম ও দিনমজুর  আইয়ুব আলি বলেন- আমরা গরিব মানুষ আমাদের এ সমাজে কোন বিচার নাই।

ছাত্রদের অভিভাবকদের অভিযোগ- আমরা ধর্মভিরু মুসলমান। অনেকে বুকভরা আশা নিয়ে আমাদের সন্তানদের কোরআনে হাফিজী ও ধর্মীয় শিক্ষার জন্য মাদ্রাসায় পাঠাই। পড়ার সুবিধার জন্য আমরা বাচ্চাদের একরকম জোর করেই মাদ্রাসার আবাসিক মেসে থাকার ব্যবস্থা করি। কিন্তু আলেম নামধারি কিছু লম্পট শিক্ষকরা আমাদের শিশু বাচ্চাদের সাথে তাদের কু-কর্ম চরিতার্থ করে, তাদেরকে বলৎকার করে, নির্যাতন করে এবং তাদের মারধর করার হুমকি ধমকি দেয়, এটা যদি বাচ্চারা আমাদের না বলে আমরা জানতাম না। তবে অনেক সময় বাচ্চারা বলে তারা আর মাদ্রাসায় পড়বে না, জোর করে মাদ্রাসায় পাঠানো যায় না। তাহলে এর পেছনের কারণ কি বলৎকার?

ভিকটিমের মায়ের অভিযোগ- ক্ষোভ আর কান্নায় কন্ঠে ওই শিক্ষার্থীর মা বলেন, ‘আমার ছেলের মতো কত ছাত্র নির্যাতিত হয় তার কোন ঠিক নেই। এসবের প্রতিবাদ করতে হবে। শিক্ষকের শাস্তি হতে হবে। তা না হলে মাদ্রাসা আর মাদ্রাসার শিক্ষকদের সম্পর্কে মানুষের বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হবে। আমি এর বিচার চাই।’

সহপাঠিদের অভিযোগ- এই মাদ্রাসার ছাত্র রুস্তুম পুর গ্রামের  রায়হান (৫) ভিকটিমের সহপাঠী জানায় হুজুর প্রতিদিন আজবাজে কাজ করতো, সবার সাথে অভিযোগ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষাথীর। জয়নুল আবেদিন নামের সাবেক এক শিক্ষক  রাজ্জাকের নামে  সিলেট শহরে একটি মানবাধিকার সংস্থায় নানান অভিযোগ নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন।

দেশে প্রায় ৫২৫০টি মাদ্রাসায় তাকমিল বা কামিল পর্যায়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৬০০০ জন, ফযিলত বা ফাজিল স্তরে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমপক্ষে ৮৩ হাজার, সানাবিয়া উলইয়া বা আলিম স্তরে প্রায় ৯২ হাজার, মুতাওওয়াসসিতাহ বা নিম্নমাধ্যমিক স্তরে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার, ইবতিদাইয়াহ স্তরে কমপক্ষে ৫ লক্ষ ৭৭ হাজার এবং হিফযুল কোরআন বা সর্বনিম্ন স্তরে প্রায় ৪ লক্ষ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এর বাইরে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সংখ্যা আরো কয়েক লাখ। এতো বিপুল পরিমান শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির ঝুঁকিতে রয়েছে। এদের নিরাপত্তা দেবে কে?

মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য খেলাফত মজলিশ নেতা আং রশিদ মাদ্রাসা কমিটির কয়েকজন কে সাথে নিয়ে মাদ্রাসাকমিটির সভাপতি ও ই/পি চেয়ারম্যান বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনহার মিয়ার সাথে ফোনে কথা বলে ছালেহা বেগম ও আইয়ুব আলিকে শান্তনা দিয়ে বলেন- ঘটনা কাউকে না বলতে ও বিষয়টি নিয়ে সভাপতির সাথে আলোচনা করে তিনি সূরাহা করবেন। সোনাপুর মাদ্রাসা থেকে মায়ের সাথে মামার বাড়ি ছেলে তুফায়েলকে নিয়ে যান মা ছালেহা। যাওয়ার পরে বালাগঞ্জের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যান।

এদিকে মামা আইয়ুব আলি পূর্ব রুপাপুর গ্রামের  মৃত  রহিম উল্ল্যাহর ছেলে সাজ্জাদ মিয়াকে জানান- সাজ্জাদ মিয়া মাদ্রাসা কমিটির সদস্য মৃত আং মন্নান মিয়ার ছেলে ছালেহ মিয়াকে বিষয়টি বলেন- ছালেহ মিয়া ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রশিদকে নিয়ে  মাদ্রাসার অন্যান্য সদস্যকে অবগত করেন- পরের দিন রশিদ মেম্বার সাজ্জাদ মিয়া ও আইয়ুব আলি কে না জানিয়ে ছালেহ মিয়া ও গং দের নিয়ে ২নং বোয়ালজুড় ইউনিয়ন কার্যালয়ে চেয়ারম্যান আনহার মিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি গোপনে মিমাংসা হয়ে গেছে বলে সাজ্জাদ মিয়াকে জানান। কিন্তু ভিকটিমের পরিবার বা সাজ্জাদ মিয়াও জানে না কিভাবে সমাধান হল। মামা আইয়ুব আলি ও ছালেহা বেগম বলেন- রশিদ মেম্বার ও কমিটির কয়েকজন আমাদেরকে মামলা না করতে বলেন. এমনকি মামলা করলে দেখে নেওয়ার হুমকি ধমকি দেওয়া হয়।

প্রথমদিকে ভিকটিমের পরিবারের বিচারের দাবি জানালে ও পরিবর্তিতে  তারা ভয়ে নিশ্চুপ হয়ে যান, কিন্তু মামা আইয়ুব আলি হাল ছাড়েননি। তিনি সাজ্জাদ মিয়াকে নিয়ে মাদ্রাসা কমিটির সাবেক সভাপতি সাবেক মেম্বার হাজি মানিক মিয়া, কালিবাড়ি বাজার পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি আজাদ মিয়া, মুরব্বী, নুর ইসলাম, প্রবাসী মাসুক মিয়া সহ মাদ্রাসা কমিটির কয়েকজনকে অবগত করেন ও শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাককে সবার সম্মুখে দ্রুত শাস্তি দিয়ে  বহিস্কার করার দাবি জানান। কেন তারা গোপনে মিমাংসা করে দিল আর এক মাস পেরিয়ে গেল এখন বহাল তবিয়তে রাজ্জাক মাদ্রাসায় আছেন, স্থানীয় লোকজন তা জানতে হবে।

তুফায়েলকে ঈদের পরে বালাগঞ্জের ও দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ জামেয়া গহরপুরে ভর্তি করেন ভাই শাহিন মিয়া (৩০)

এই ন্যাকারজনক ঘটনা  শাস্তি দাবি করেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গরা, বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান লকুছ, ছাত্রলীগ সাবেক উপজেলা সাধারণ সম্পাদক তুহিন মনসুর, ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা জাহেদ রিপন, উপজেলা ছাত্রদল নেতা ইসলাহ চৌধুরি, সমাজকর্মী কাঞ্চন দাস, রুহেল আমিন ও আফিজ উল্ল্যাহ।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আং রাজ্জাক বলেন- আমি কিছু বলতে পারব না সভাপতির সাথে যোগাযোগ করেন- সভাপতি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আনহার মিয়ার মুঠোফোনে কল করলে ব্যস্ত দেখায়, সাবেক সভাপতি সাবেক মেম্বার হাজি মানিক মিয়া বলেন- ঘটনা সত্য ভিকটিম পরিবার আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। আমরা সভাপতিকে অবগত করেছি উনি জানেন।

শুনেছি আগামী সেপ্টেম্বর মাসের আগে রাজ্জাককে বিদায় দেওয়া হবে, আর ভিকটিমের চিকিৎসা খরচ কে দিয়েছে জানতে চাইলে বলেন তিনি জানেন না, বালাগঞ্জ উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশন মডেল কেয়ার টেকার আছাব আলীর কাছে জানতে চাইলে জানান, তিনি স্থানীয় লোক মুখে ঘটনাটি শুনেছেন।

বালাগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ এস. এম জালাল উদ্দিন জানান এ বিষয়ে কোন অভিযোগ নিয়ে কেউ আসেনি।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ১২১৬ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930