শিরোনামঃ-

» ধানের শীষের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে জরুরী সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: ১৬. ডিসেম্বর. ২০১৮ | রবিবার

স্টাফ রিপোর্টারঃ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা, আসন্ন একাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী জননেতা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেছেন- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী এবং সরকার দলীয় লোকজন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমার নির্বাচনী কাজে নিয়মিত বাধা প্রদান করে যাচ্ছে। নেতা কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে, বাসা বাড়ীতে তল্লাশির নামে বিএনপি নেতাকর্মী ও তাদের স্বজনদের হয়রানী নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িঁয়েছে। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্যই আজকের এই সংবাদ সম্মেলন। জাতির জাগ্রত বিবেক সাংবাদিক বন্ধুদের প্রতি আহ্বান আপনার সত্য তুলে ধরার মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সহযোগিতা করবেন।

রবিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোডস্থ ধানের শীষের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে উপরোক্ত কথা বলেন। এসময় সিলেটে কর্মরত প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেনের দ্রুত বদলীরও দাবী জানান তিনি।

তিনি বলেন-গত ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখ প্রতীক বরাদ্দের পর পরই আমি ও আমার দল ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা শুরু করে। কিন্তু ঐ দিন থেকেই সিলেটের প্রশাসন পরিকল্পিতভাবে আমার নির্বাচনী কর্মকান্ডে বাধা প্রদান শুরু করে।

ইতোমধ্যে, সিলেট-১ আসনে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোডস্থ আম্বরখানায় এই নুরে আলা কমিউনিটি সেন্টারে আমাদের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। মালিক পক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা সাপেক্ষে ভাড়া নিয়ে আমরা এই কমিউনিটি সেন্টার আমরা ব্যাবহার করছি। অথচ, শুধুমাত্র আমাদের কাছে ভাড়া দেয়ার কারণে এই সেন্টার কর্তৃপক্ষকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে নানাভাবে হয়রানী করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন- ইতোমধ্যে সিলেট মহানগরী ও সিলেট সদর উপজেলায় আমাদের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দের বাড়ীতে দফায় দফায় তল্লাশি করা হচ্ছে। আমাদের নেতা কর্মীরা গ্রেফতার এড়াতে অন্যত্র রাত্রি যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। নেতা কর্মীদের বাড়ীতে না পেয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের নেতাকর্মীর স্বজনদের সাথে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে। অনেকের বসত ঘরের আসবাব পত্র তছনছ করা হচ্ছে। আমাদের নেতা কর্মীদেরকে সিলেট ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে। ৩০ তারিখের পর সিলেট আসার জন্য নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন কতটুকু অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হবে- তা নিয়ে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন- আপনারা দেখেছেন গত ১৩ ডিসেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ হজরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার জিয়ারতে আসলে সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ আমাদের মাইকিং এ বাধা দেয় এবং আমাদের প্রচারণা মাইক এর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অথচ আমরা নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করিনি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গত এক সপ্তাহে আমাদের অনেক নেতা কর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের কারো কারো বিরুদ্ধে পুরনো রাজনৈতিক মামলা থাকলেও তারা এসব মামলায় জামিনে রয়েছেন। কারো কারো বিরুদ্ধে নতুন করে গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে রয়েছেন- সিলেট মহানগর ছাত্রদলের ২৬নং ওয়ার্ড শাখার যুগ্ম আহবায়ক ফাহিম বক্স শিপু, সিলেট সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক দুলাল আহমদ, সিলেট জেলা ছাত্রদল সদস্য সাইদুর রহমান শিপন, নুরুল ইসলাম সোহাগ, সিলেট সদর উপজেলা বিএনপি নেতা আব্দুল খালিক, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সাইফুল ইসলাম উজ্জ্বল, কান্দিগাঁও ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আলী হোসেন খান সহ আরো অনেকে। এদের মধ্যে ছাত্রদল নেতা ফাহিম বক্স শিপু আমার পক্ষে ফেসবুকে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর কারণে তাকে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে গত ১২ ডিসেম্বর এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সাইফুল ইসলামকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাইদুলের নেতৃত্বে মারধর করে পুলিশের কাছে হস্থান্তর করা হয়েছে। পুলিশ তাকে গায়েবী একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান পাপলুর বাসায় গভীর রাতে অভিযান ও তল্লাশির নামে তার বাসার আসবাবপত্র ও মালামাল তছনছ করে দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। পাপলুকে না পেয়ে বাসায় অবস্থানরত পরিবারের লোকজনদেরকে হেনস্থা করে আইন শৃংখলা বাহিনীর লোকজন। এছাড়াও গায়েবী মামলার শিকার হয়ে অসংখ্য নেতাকর্মী নির্বাচনী কাজে অংশ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

এছাড়াও খাদিমপাড়া ইফপির গায়েবী মামলায় বর্তমান ২ জন ইউপি সদস্য সহ ১০ জনকে আসামী করা হয়েছে। গত তিন মাস পুর্বে গার্ডেন টাওয়ারে ধানি জমিনে গরুর ধান খাওয়াকে কেন্দ্র করে গার্ডেন টাওয়ারের নৈশ প্রহরীর ছেলে মুমিনের সাথে কথা কাটাকাটির জের ধরে পরগণা বাজারে ছাত্রলীগ নেতা জুনেদের চাচাত ভাই সুনাফরের সাথে ইমরান ও মুমিনের মারামারি হয়। কিন্তু মুল ঘটনাকে আড়াল করে খাদিমপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য আজাদুর রহমান আজাদ ও সহ-সভাপতি বর্তমান ইউপি সদস্য জাকেল আহমদ সহ ১০ জনকে আসামী করা হয়। এরমধ্যে ইউপি সদস্য জাকেল আহমদকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন- সরকারী দলের প্রার্থী ও তার সমর্থকরা প্রতিনিয়ত নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘণ করে চলেছেন। তারা রঙ্গিন ব্যানার লাগিয়েছেন। দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছেন। কিন্তু, এ বিষযে স্থানীয় প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। অথচ, বিভিন্ন স্থানে ধানের শীষ প্রতীকের প্রচারণায় সরকারী দলের প্রার্থীর সমর্থক ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। কোন কোন স্থানে প্রচারের মাইক নিয়ে এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছেনা। ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার লাগাতে বাধা দেয়া হচ্ছে এমনকি লাগানো পোস্টার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে।

গত ১৪ ডিসেম্বর শুক্রবার রাতে টিলাগড়, বালুচর, শিবগঞ্জ, কুদরত উল্লাহ পয়েন্ট ও সুরমা পয়েন্ট এলাকায় লাগানো পোস্টার ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ছিঁঁড়ে ফেলে। জালালাবাদ থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আমিন জুয়েলের নেতৃত্বে একদল যুবক ইনাতাবাদে ধানের শীষের পোস্টার লাগাতে বাধা দেয় এবং পূর্বে লাগানো কিছু পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। পরদিন ১৫ ডিসেম্বর শনিবার বালুচরে ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে অগ্নি সংযোগ করে উল্লাস প্রকাশ করেছে ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। ঐদিনই দুপুর আড়াইটায় মেজরটিলা বাজারে ছাত্রলীগ নেতা আনসার আহমদের নেতৃত্বে একদল যুবক ধানের শীষের প্রচারণায় নিয়োজিত মাইকিংয়ে ব্যবহৃত অটোরিকশা আটকে দিয়ে মাইকের তাঁর ছিঁড়ে নিয়ে যায় এবং মাইকিংয়ে নিয়োজিত আমাদের কর্মীদের পুণরায় মাইক নিয়ে এলাকায় গেলে হত্যা করার হুমকী দেয়। এদিন অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর শনিবার ৮নং ওয়ার্ডে পোস্টার লাগাতে বাধা প্রদান করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ধানের শীষের পোস্টার এবং ব্যানারের উপর নৌকা মার্কার প্রার্থীর পোস্টার ব্যানার লাগানো হচ্ছে।

এসব বিষয় গত ১২ ডিসেম্বর বুধবার আমরা লিখিতভাবে জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মহোদয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু, তারা এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি।

তিনি বলেন- একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সমগ্র সিলেটবাসীর প্রত্যাশা। কিন্তু, নির্বাচনের প্রচারণায় যেভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে, তাতে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ সৃষ্টি তো দূরের কথা, নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশও সমুন্নত থাকছেনা। আর প্রশাসন যেভাবে একপেশে আচরণ করছে, তাতে মনে হচ্ছে ভোটের আগেই একজন বিশেষ প্রার্থীকে বিজয়ী করার সরকারী এজেন্ডা বাস্থবায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

আমরা আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনের প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলতে চাই, যদি আমাদের প্রচারকাজে বাধা দান বন্ধ করা না হয়, প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ আচরণ না করে, আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানী বন্ধ করা না হয়, তাহলে আমরা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অপসারণের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে বাধ্য হবো।

জরুরী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সকল সাংবাদিকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন- জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রকৃত সত্য তুলে ধরার মাধ্যমে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে জাতির জাগ্রত বিবেক সাংবাদিকদের এগিয়ে আসতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা বিএনপি সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মহানগর বিএনপি সভাপতি নাসিম হোসাইন।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থি ছিলেন- জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বয়াক এডভোকেট নুরুল হক, মহানগর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত চৌধুরী সাদেক, জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল গাফফার, ঐক্যফ্রন্ট নেতা এডভোকেট আনসার খান, পেশাজীবি নেতা বদরুদ্দোজা বদর, মহানগর সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির শাহীন, এডভোকেট ফয়জুর রহমান জাহেদ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরাম সিলেটের সভাপতি এডভোকেট এটিএম ফয়েজ, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জেলা সহ-সভাপতি শাহাজামাল নুরুল হুদা, মহানগর সহ-সভাপতি এডভোকেট আতিকুর রহমান সাবু, আব্দুর রহিম, সিনিয়র আইনজীবি এডভোকেট আক্তার হোসেন খান, মহানগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন প্রমুখ।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি, ২৩ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিলেটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪০৯ বার

Share Button

Callender

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031