শিরোনামঃ-

» ঢাকা ট্যাক্সেস বারে ভুয়া আয়কর আইনজীবী আটক; এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড়

প্রকাশিত: ২৬. জানুয়ারি. ২০১৯ | শনিবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ আয়করের নথিপত্র তৈরি, রিটার্ন জমা দেওয়া, আইনি পরামর্শ ইত্যাদি সহায়তার জন্য অনেকেই যান আইনজীবীর কাছে। বিশেষ ধরনের এই সেবা দেওয়া আইনজীবীদের বলা হয় আয়কর আইনজীবী। বার কাউন্সিল বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ইনকাম ট্যাক্স প্র্যাক্টিশনার (আইটিপি) সনদ নিয়ে এই পেশা চর্চা করেন আইনজীবীরা। পেশাগত বডি হিসেবে রয়েছে আলাদা ট্যাক্সেস বারও। অথচ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় সনদ না নিয়েই ট্যাক্সেস বারের সদস্য হয়েছেন অনেক ভুয়া আইনজীবী। এই ভুয়া আইনজীবীরা করদাতাদের কাছ থেকে ফি নিয়ে ভুয়া আয়কর রিটার্ন জমা দেন। তাঁদের প্রতারণার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া আয়কর আইনজীবীদের সম্পর্কে অভিযোগ থাকলেও এবার হাতেনাতে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সোমবার ঢাকা ট্যাক্সেস বারের লাইব্রেরির সামনে শরিফ আব্দুল্লাহ হিশ সাকি (৪০) নামের এক ভুয়া আইনজীবীকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন আইনজীবীরা। প্রতারক সাকি অনেক দিন ধরে ট্যাক্সেস বারে কাজ করছিলেন। তিনি নিজেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী আইনজীবী, শিক্ষক এবং সাংবাদিক পরিচয় দিলেও এর সত্যতা মেলেনি। রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় তাঁকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএলএ) আইনজীবীরা বলেছেন, ভুয়া আইনজীবীদের নিয়ে বর্তমানে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে অভিযোগ করেছেন ঢাকা ট্যাক্সেস বারের সদস্যরা। ভুয়া আয়কর আইনজীবী শনাক্ত করতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে শনাক্তও করা হয়েছে পাঁচজনকে। তদন্তকারীরা সন্দেহভাজন ৮০০ আইনজীবীর ফাইল যাচাই-বাছাই করে দেখছেন বলে জানা গেছে।

কয়েকজন আয়কর আইনজীবী জানান- ঢাকা ট্যাক্সেস বারের সিনিয়র সদস্য ও নেতৃত্বে থাকা কয়েকজনও এই সন্দেহের তালিকায় আছেন। বিএনপি সমর্থিত প্যানেল ভোটে জয়লাভ করতে গত ১০ বছরে অনেক ভুয়া আইনজীবীকে সদস্য করেছে বলে অভিযোগ আইনজীবীদের। ভুয়া আইনজীবীদের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন সিনিয়র আইনজীবীরা। এতে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ করদাতারা। আয়কর আইনজীবীদের সবার তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ আইনজীবীরা।

পুলিশ সূত্র জানায়, সোমবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব ভবনের নিচতলায় ঢাকা ট্যাক্সেস বারে অ্যাডভোকেট মুস্তাফিজুর রহমান কাদেরী, মাহবুবুর রহমান, মশিউর রহমানসহ কয়েকজন আইনজীবী শরিফ আব্দুল্লাহ হিশ সাকি নামের এক ব্যক্তিকে চ্যালেঞ্জ করেন। সাকি নিজের ভিজিটিং কার্ড দেখিয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারী আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং সাংবাদিক পরিচয় দেন। তিনি প্রাইম ও দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক বলে দাবি করেন। বাংলাদেশ সমাচার নামের একটি সংবাদপত্রের সাংবাদিক হিসেবেও ভিজিটিং কার্ড দেখান। তবে আইনজীবী হিসেবে বার কাউন্সিলের সদস্য সহ কোন প্রমাণ দেখাতে পারেননি।

রমনা থানার ওসি মাইনুল ইসলাম সাংবাদিককে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে সাকির আইনজীবী সনদ পাওয়া যায়নি। তাঁকে আদালতের নির্দেশে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র মতে, প্রতারক সাকিকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকা ট্যাক্সেস বারে ভুয়া আইনজীবীর বিষয়টি ফের সামনে এসেছে। এর আগে গত বছরের ২৫ অক্টোবর সাধারণ কর আইনজীবীরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে ভুয়া আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে লিখিত আবেদন জানান। ওই সময় ভুয়া সদস্য অন্তর্ভুক্তি ঠেকানো এবং ভুয়া সদস্য শনাক্ত করতে সাবেক সভাপতি নেছার উদ্দিনের নেতৃত্বে সাবকমিটি করে ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশন। ওই কমিটি পাঁচজনকে শনাক্ত করে তাঁদের সদস্যপদ বাতিল করেছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের ক্ষমতার আমলে ১০ বছরে সর্বাধিক ভুয়া আইনজীবী হওয়ার তথ্য মিলেছে। এরই মধ্যে ৮০০ ফাইল যাছাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলার বাদী ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের ঢাকা ট্যাক্সেস বার শাখার সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান কাদেরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপি সমর্থিত প্যানেলকে ভোটে জেতাতে অনেক ভুয়া আইনজীবী বানানো হয়েছে।’

আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার বলেন, ‘ভুয়া আইনজীবীর এমন জালিয়াতি আগে ধরা পড়েনি। এরা করদাতাদের সঙ্গে প্রতারণা করে। এর জন্য বদনাম হয় পুরো আইনজীবীদের।’

সূত্র মতে, সন্দেহভাজনদের নথিপত্র যাছাই-বাছাই করতে গিয়ে বিটিএল এবং এনরোলমেন্ট সাবকমিটির দুই নেতার ফাইলেও প্রয়োজনীয় সনদপত্র পাওয়া যায়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পুরনো ফলাফলের তালিকায়ও তাঁদের নাম পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা দুজন অন্য কোনো বারের আইনজীবী বা চার্টার্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টও নন। এ নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন চলছে।

আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ১৭৪ ধারায় করদাতার মনোনীত প্রতিনিধি হতে হলে তাঁকে আইনজীবী হতে হবে বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বা কস্ট ম্যানেজমেন্টে বা আইন বিষয়ের ডিগ্রিধারীরা রাজস্ব বোর্ডের স্বীকৃত রেজিস্ট্রার ট্যাক্সেস বারের সদস্য হতে হবে। ফলে দুইভাবে আয়কর বা কর আইনজীবী হওয়া যায়। একটি হলো বার কাউন্সিলের সনদ নিয়ে, দ্বিতীয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আইটিপি সনদ নিয়ে। বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার ট্যাক্সেস বার সদস্য রয়েছেন।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫৯২ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930