শিরোনামঃ-

» রিটার্ন দাখিল না করা ১৮ লক্ষ টিআইএনধারীর সন্ধানে নেমেছে এনবিআর

প্রকাশিত: ০৭. ফেব্রুয়ারি. ২০১৯ | বৃহস্পতিবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) রয়েছে, অথচ চলতি করবর্ষে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৮ লক্ষ ব্যক্তি রিটার্ন দাখিল করেননি। এসব টিআইএনধারীর আয়ের তথ্য অনুসন্ধানে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর বিভাগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে আয়কর রিটার্ন জমা না দেওয়া টিআইএনধারীদের খোঁজ নিতে মাঠপর্যায়ের অফিসগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া।

ওই নির্দেশনার ভিত্তিতে আগামীকাল ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে টিআইএনধারীদের সন্ধানে নেমেছেন কর কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া উৎস আয়কর কর্তনের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে তা পালন করছে কি না, তা তদারকির জন্য গত ৩১ জানুয়ারি থেকে এনবিআরের টাস্কফোর্স কাজ শুরু করেছে।

ইতোমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ৬ কোটি টাকার কর ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছেন টাস্কফোর্সের সদস্যরা।

এনবিআর সদস্য কালিপদ হালদার বলেন- আয়কর রিটার্ন দাখিল না করা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে নোটিস জারি করবে মাঠপর্যায়ের অফিসগুলো।

সময়মত রিটার্ন জমা না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা আরোপ করা হবে।

এমনকি টিআইএনধারীর আয়ের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে কর্মকর্তারা তার উপর আয়কর ধার্য করে তা আদায় করতে পারবেন। এটি আয়কর আইনেও বলা আছে।

এনবিআরের হিসাবে বর্তমানে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ৩৮ লক্ষ ৯৩ হাজার। তবে গত নভেম্বরে রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় ওই সংখ্যা ছিল ৩৮ লক্ষের কাছাকাছি।

এর মধ্যে নভেম্বরের মধ্যে প্রায় ১৭ লক্ষ ব্যক্তি করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন।

পরবর্তীতে রিটার্ন জমা দেবেন এ জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন আরো ৩ লক্ষ টিআইএনধারী।

তাদেরও সম্ভাব্য রিটার্ন দাখিলকারী ধরা হলে, সবমিলিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ লক্ষ।

অর্থাৎ প্রায় ৩৮ লক্ষ টিআইএনধারীর মধ্যে ১৮ লক্ষই রিটার্ন দাখিল করছেন না। রিটার্ন দাখিল না করলে, এ সব ব্যক্তির কাছ থেকে কোন আয়কর পাওয়া যাবে না। তাদের আয়-ব্যয় ও সম্পদের হিসাবও পাওয়া যায় না। ফলে করদাতা বাড়ানোর বিষয়ে এনবিআরের উদ্দেশ্য পূরণে তা বাধা হিসেবে কাজ করছে।

নির্দিষ্ট সময়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে প্রতি মাসের জন্য প্রযোজ্য আয়করের সমান সুদ ছাড়াও জরিমানা গুনতে হয়।

এ ছাড়া রিটার্ন জমা না দিলে জেল-জরিমানারও বিধান রয়েছে। বর্তমানে কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত। আড়াই লক্ষ টাকার উপরে আয় হলে ব্যক্তি করদাতাদের নির্দিষ্ট হারে কর প্রদান করতে হয়। আর যেসব ব্যক্তির টিআইএন রয়েছে, তাদের আয় করসীমা অতিক্রম করুক বা না করুক – তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক।

বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশে আয়কর আদায়ে আয়কর কর্তৃপক্ষ চাইলে অন্যান্য সংস্থার সহায়তাও নিতে পারেন।

এমনকি চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা পুলিশের সহায়তাও নিতে পারেন। এর বাইরে অন্যান্য সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেরও সহযোগিতা নেওয়া যাবে।

সূত্র জানিয়েছে, টিআইএনধারী রিটার্ন দাখিল না করা ব্যক্তিদের খোঁজ নিতে পুলিশ সদস্যদের সহায়তা নেওয়ার বিষয়টি এনবিআরের আলোচনায় এসেছে।

তবে আপাতত এনবিআর এত হার্ডলাইনে যেতে চাচ্ছে না। কেননা এর ফলে করদাতাদের মধ্যে ভীতি তৈরি হলে অনেকেই করের আওতায় আসতে চাইবেন না।

এনবিআর বিভিন্ন খাতের ব্যক্তিকে টিআইএন গ্রহণের বাধ্যবাধকতায় আনতে গত কয়েক বছরে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে চাকরিজীবী সহ ৩৪ খাতের সেবা কিংবা ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির টিআইএন নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক হিসাব হিসাবে মুনাফায় ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করের সুবিধা পাওয়ার জন্য টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এ ছাড়া চাকরিজীবীদের মধ্যে ১৬ হাজার টাকার উপরে বেতন হলে, ট্রেড লাইসেন্স, ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক, সিটি করপোরেশন এলাকায় অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা গাড়ি কিনতে, ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে টিআইএন নেওয়া বাধ্যতামূলক হয়েছে।

এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন- এ কারণে অনেকেই এসব সেবা নেওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে টিআইএন নেওয়ায় এই সংখ্যা গত ৩ বছরের ব্যবধানে ২০ লক্ষ থেকে বেড়ে প্রায় ৩৯ লক্ষে উন্নীত হয়েছে।

এর মধ্যে ব্যাংক হিসাবধারী, ব্যবসায়ী সহ (বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যবসার মালিক) যারা তাৎক্ষণিক বাধ্যবাধকতায় টিআইএন নিয়েছে, রিটার্ন দাখিল না করার তালিকায় এই ব্যক্তিদের সংখ্যাই বেশি।

তবে এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ বছরের ব্যবধানে রিটার্ন দাখিলকারী উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

গত ৫ বছর আগে প্রায় ১৮ লক্ষ টিআইএনধারীর বিপরীতে রিটার্ন দাখিল হতো ১০ লক্ষের কাছাকাছি। ৫ বছরে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা এখন দ্বিগুণে উন্নীত হয়েছে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫০১ বার

Share Button

Callender

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031