শিরোনামঃ-

» সিলেট চেম্বারের সর্বশেষ ভোটার তালিকায় জাল ভোটারের সন্ধান

প্রকাশিত: ০৮. সেপ্টেম্বর. ২০১৯ | রবিবার

নিজস্ব রিপোর্টারঃ

ভুয়া ভোটারের সন্ধান পাওয়া গেছে নতুন ভোটার তালিকায়। জালিয়াতির মাধ্যমে চেম্বারের মেম্বারশিপ নিয়ে তারা ভোটার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিলেট চেম্বারের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় থাকা যে ৫ ভোটারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের অন্তত ৩ জন  সিলেট চেম্বারের সর্বশেষ কমিটির সভাপতির মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মী।

সিলেট চেম্বারের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় থাকা যে ভোটারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা হলেন- ৮৮৪ নং ভোটার সুভাষ চন্দ্র সেন চৌধুরী, ৪৬৯ নং ভোটার মো. মমিনুর রহমান কাজল, ৯৩২ নং ভোটার মো. হাবিবুর রহমান, ৯৩৩ নং ভোটার ধিরাজ রায় এবং ৯৩৪ নং ভোটার শেখ এম.এ. রামিম আহমদ।

জানা গেছে, এরা ভূয়া (আয়কর শনাক্তকরণ নাম্বার) টিআইএন সার্টিফিকেট এবং জাল আয়কর সনদ ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তারা আদৌ কোন ব্যবসায়ী নন। প্রকৃতপক্ষে তারা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মী।

‘সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র ২০১৯-২১ সাল মেয়াদের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনের আর মাত্র ১৩ দিন বাকি। জল্পনা কল্পনা ও নাটকীয়তার শেষে ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চেম্বারের নির্বাাচন।

এ বছর নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৪৬৫। যার মধ্যে অর্ডিনারি ১ হাজার ৪১৩, এসোসিয়েট ১ হাজার ৪০, ট্রেড গ্রুপ ১১ ও টাউন এসোসিয়েশন শ্রেণির একজন ভোটার রয়েছেন।

এর আগে চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল চেম্বরের ভোট গ্রহণের কথা থাকলেও ভুয়া ভোটার তালিকার কারণে নির্বাচন স্থগিত করে বণিজ্য মন্ত্রণালয়।

নির্বাচন স্থগিতের পর ৩০ মার্চ ভোটার তালিকা যাচাই বাছাইয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির কর্মকর্তা উপ-সচিব মো. জালাল উদ্দিন সরজমিনে সিলেট চেম্বার পরিদর্শন করে অনিয়ম ও জালিয়াতির প্রমাণ পান। ১৭ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের শতকরা ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ী সদস্য বা ভোটার হওয়ার অযোগ্য। ২০ জন ভোটারের কাগজপত্র পরীক্ষা করেন, এর মধ্যে ৮ জনের কাগজ সঠিক পাননি বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-সচিব মো. জালাল উদ্দিন। যে কারণে মেয়াদ বাড়িয়ে ভোটার তালিকাটি বাতিল করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের মত দিয়েছিলেন তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সিলেট চেম্বারের অর্ডিনারি ক্যাটাগরিতে ২৯৩ জন, সহযোগী ক্যাটাগরিতে ১৮৪ জন ব্যবসায়ীকে চেম্বারের সদস্য পদ দেওয়া হয়। এ বছরের ২৬ জানুয়ারি অর্ডিনারি ক্যাটাগরিতে আরো ৪৬৭ জন এবং সহযোগী ক্যাটাগরির ১৮৩ জন ব্যবসায়ীকে সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ভোটার দাড়ায় ৪ হাজারে।

দু’টি সভায় মোট ১ হাজার ১২৭ জন ব্যবসায়ীকে সদস্য পদ দেওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিকভাবে প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি।

যাচাই বাছাইয়ের পর তাদের বাতিল করে নতুন করে চূড়ান্ত ভোটার তলিকা ৮ আগস্ট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এর পরেও পাওয়া গেছে জালিয়াতির অভিযোগ।

ভোটার তালিকার ৮৮৪ নং ভোটার সুভাষ চন্দ্র সেন চৌধুরী ‘মেসার্স কলি ট্রেড সার্ভিসে’র স্বত্বাধিকারী হিসেবে চেম্বারে সদস্য হয়েছেন। কিন্তু নগরীর আম্বরখানার বরকতিয়া সুপার মার্কেটের নিচতলায় অবস্থিত মেসার্স কলি ট্রেড সার্ভিসে গিয়ে দেখা গেছে সুভাষ নামে কাউকেই চেনেন না প্রতিষ্ঠানটির কেউ। মালিক তো নয়ই, কলি ট্রেড সার্ভিসের কোনো কর্মচারীও নন সুভাষ।

সরকার অনুমোদিত ট্যাভেল এজেন্সিটির দেয়ালে ঝুলছিল সিরাজ উদ্দিনের নামে ইস্যুকৃত ট্রেড লাইসেন্স। প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত মালিক তিনিই। সুভাষ চন্দ্র সেন চৌধুরী কখনোই এ প্রতিষ্ঠানের কিছু ছিলেন না বলে জানান সিরাজ উদ্দিন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চেম্বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদের প্রতিষ্ঠান ‘সিপার এয়ার সার্ভিস’র ম্যানেজার এই সুভাষ। জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি সিলেট চেম্বারের সদস্য এবং ভোটার হয়েছেন।

৪৬৯ নং ভোটার মো. মমিনুর রহমান কাজলও সিপার এয়ার সার্ভিসের একজন কর্মচারী। তিনিও জালিয়াতির মাধ্যমে মেসার্স হেলাল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে এবং ভূয়া টিআইএন এবং জাল আয়কর সনদ ব্যবহার করে ভোটার হন।

৯৩২ নং ভোটার মো. হাবিবুর রহমান। ব্যবসা পতিষ্ঠান হিসেবে দেখিয়েছেন আম্বরখানার মেসার্স শাহী এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায় তিনিও খন্দকার সিপার আহমদের একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

৯৩৩ নং ভোটার ধিরাজ রায়ের উল্লেখিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্দরবাজারের ওরিয়েন্টাল শপিং সেন্টারের ৪র্থ তলায় অবস্থিত মেসার্স শাহজালাল ট্র্যাভেলস এন্ড ট্যুরসে গিয়ে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

প্রতিষ্ঠানের মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করলে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার জানান, আমার বসের নাম মো. মোজাম্মেল হোসেন।  ধিরাজ রায় নামের কাউকে আমি চিনি না এবং এ নামে কেউ আমাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নন।

এর ঠিক পাশের দোকানটি মেসার্স আমানা ট্র্যাভেলস এন্ড ট্যুরস। ভোটার তালিকায় এ প্রতিষ্ঠানের পাশে লিখা আছে শেখ এম.এ. রামিম আহমদের নাম। কিন্তু সেখানে থাকা কর্মচারিরা বললেন অন্য কথা। ওরিয়েন্টাল শপিং সেন্টারের আমানা ট্র্যাভেলস এন্ড ট্যুর্স এর মালিক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। ভিজিটিং কার্ডেও তাই লিখা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ৯৩৪ নং ভোটার শেখ এম এ রামিম আহমদ সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কের মিয়া ফাজিলচিস্তে অবস্থিত রেইনবো গেস্ট হাউজের ম্যানেজার।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪১৪ বার

Share Button

Callender

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30