শিরোনামঃ-

» বনেদি বাড়ির পুজো ॥ দুলদুলির জমিদার বাড়ি; দেবীর পুজোর বন্ধে যেন শাপভ্রষ্ট হল পরিবার

প্রকাশিত: ০৬. অক্টোবর. ২০১৯ | রবিবার

নবেন্দু ঘোষঃ

পুজোর রাতে গুলিতে মৃত্যু। তারপর হালদার বাড়িতে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পুজো। পরিবার মনে করে তারপরই যেন অভিশাপ নেমে আসে। শেষপর্যন্ত ফের ২০০৮ সালে শুরু হয় পুজো। আশ্চর্য, তখন থেকে আর কোনও অঘটন ঘটেনি। এমনই এক পুজোর গল্প আজ।

পুজোর শুরুর পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে সবে। পরিবারের প্রবীণ কর্তাদের হাত থেকে পুজোর ভার চলে আসছে নতুন প্রজন্মের হাতে। তখনই সে ভয়ংকর ঘটনা ছারখার করে দেয় দুলদুলির জমিদার বাড়িকে। ঐতিহ্যবাহী পুজো বন্ধ হওয়াটা তারপর স্রেফ সময়ে অপেক্ষা ছিল। হলও তাই।

জমিদার বাড়ির রংচটা উঠোনে বসে গল্পনা শোনাচ্ছিলেন, প্রেমাশিস ও তন্ময় হালদার। তবে জানিয়ে রাখা যাক, বন্ধ হয়ে যাওয়া পুজোর গল্প এটা নয়। পুজো ফের শুরু হয় এবং শুরুর গল্পটা আরও চিত্তাকর্ষক। সে কথা পরে।

সালটা ১৯৫৭। ঠিক তার ৫২ বছর আগে শুরু হয় বসিরহাটের দুলদুলির জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো। ’৫৭তে পুজোর দিন একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হালদারদের পারিবারিক বিবাদের সূত্রপাত। এখানকার প্রজন্ম যাকে ‘ইগোর লড়াই’ মনে করেন। সেই বিবাদ হাতাহাতি থেকে গড়াল মারদাঙ্গায়। অস্ত্রভাণ্ডার থেকে দোনলা বন্ধুক বেরোল। প্রতিমার সামনে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হল হালদার বাড়ির পুজো দালান। রক্তের ছিটে লাগল দেবীর গায়ে। প্রাণ হারালেন পরিবারের দুই দোর্দণ্ডপ্রতাপ কর্তা সুধীরকৃষ্ণ ও অম্বিকা হালদার। এই ঘটনার পর সেই বছরের পর থেকে বন্ধ হয়ে গেল হালদার বাড়ির দুর্গাপুজো। ফের তা শুরু হল ২০০৮ সালে। আগেই বলা হয়েছে ফের শুরু গল্পটা বেশ আকর্ষণীয়।

‘৫৭ তে পুজো বন্ধের পর থেকে পরিবারে যেন অভিশাপ নেমে আসে”- বলছেন তন্ময়বাবু। হালদার বাড়ি তখন যেন অভিশপ্ত। ফি-বছর নবমীর দিন পরিবারের কোনও না কোনও সদস্য হয় কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, না হলে কারও না কারও অঘটনে মৃত্যু ঘটছে। ব্যবসা, জমিদারি সব ঠিক চলছে, কিন্তু পুজোর সময় অঘটনের খামতি নেই। দুশ্চিন্তা কোনওভাবেই পিছু ছাড়ে না হালদারদের। এভাবেই চলছিল। পরিবর্তন অবশ্য এল আধুনিক প্রজন্মের হাত ধরেই। ২০০৮ সালে বেলুড় মাঠের এক মহারাজের পরামর্শে পূণরায় পুজো শুরু করল হালদার পরিবার। আশ্চর্য করে দেওয়ার মতো ঘটনাই বটে। তখন থেকে আর কোনও অঘটনও ঘটেনি।

জমিদার কিনু মোহন হালদারের ছেলেরা প্রিয়নাথ, রামনারায়ণ, কার্তিকচন্দ্র, দেবনারায়ণ, গোবিন্দনারায়ণ। এঁরা সবাই জমিদার ছিলেন। তবে জমিদার হিসাবে দেবনারায়ণের প্রতাপ প্রতিপত্তি ছিল সব থেকে বেশি। সবাই মিলে ১৯০৫ সালে শুরু করেন জমিদার বাড়ির দালানে দুর্গাপুজো। পরিবারের দাবি, সেই সময় এই হালদার বাড়ির দুর্গাপুজো ছিল এলাকার একমাত্র দুর্গাপুজো এবং পুজো হত অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণভাবে। মেদিনীরপুর থেকে প্রতিমা শিল্পী এনে দুর্গাপ্রতিমা গড়া হত। পুরোহিতদের বিদায় দেওয়া হত মোহর দিয়ে। পরিবারের সদস্যদের দাবি, এই জমিদার বাড়ির পুজো যাঁরা দেখতে আসতেন তাঁদের সবাইকে সোনার গিনি দেওয়া হত। দুর্গা প্রতিমার পনের শাড়ি প্রতিদিন বদল হত এবং নতুন শাড়ি ধুয়ে শুকিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার রেওয়াজ ছিল।

পরিবারের মহিলা সদস্য স্নিগ্ধা হালদার, যুথিকা, মণিকারা জানান, “আগে পঞ্চমীতে মায়ের বোধনের দিন বড় পাত্রে করে গঙ্গা থেকে আনা জল গোটা বাড়িতে ছড়ানো হত। এখন বাড়ির মহিলারা মিলে মাথায় বরণডালা, কাঁখে ঘট নিয়ে পাশের সাহেবখালি নদীতে থেকে ঘটে করে জল এনে গোটা বাড়ি ও ঠাকুর দালানে ছড়িয়ে দেন।

পুজোর দিনগুলোতে যে যেখানে থাকে সবাই চলে আসে বাড়িতে। আমাদের কাছে মা দুর্গা ঘরের মেয়ের মতো। তাই বিসর্জনের দিন ছোটবড় সবাই চোখের জলে মাকে বিদায় জানায়। আর আমরা মায়ের কাছে প্রার্থনা করি তাঁকে যেন আগামী বছর আবার বাড়িতে আনতে পারি।” – সংগ্রহে সনতু চৌধুরী

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫১১ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930