শিরোনামঃ-

» যুক্তরাষ্ট্রের স্বজন হারানোর মাস এপ্রিল

প্রকাশিত: ০১. মে. ২০২০ | শুক্রবার

৫ হাজার থেকে মৃত্যু ৬৪ হাজারে, ২ লাখ থেকে ১১ লাখে শনাক্ত, টেস্ট সম্পন্ন হলো ৬৪ লাখ মানুষের

নিউইয়র্ক থেকে এমদাদ চৌধুরী দীপুঃ

মহাকালে হারিয়ে গেছে এপ্রিল মাস।

শংকা, ভয়, আশা-হতাশার এই মাস যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে কাদিয়েছে। ২০২০ সালের এই মাস স্বজন হারানোর। শোকের চাদরে মোড়ানো এক ভীতিকর মাস। বৈশ্বিক মহামারী করোনা বিশ্বের রাজধানী নিউইয়র্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রকে টার্গেট করলো কেন সে রহস্য উদঘাটনের জন্য আজো প্রতিদিন নানা আলোচনা এবং বিশ্লেষণ চলছে বিশ্বজুড়ে।

স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় ২ শতাধিক বাংলাদেশীর সমাধির খবর শিরোনাম হয়েছে প্রত্রিকার পাতায় এই মাসে।

মাসের শুরুতে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ হারানোর আশংকার খবর, রাষ্ট্রের মৃত্যু বেগ প্রস্তুত রাখার খবর পড়ে চোখ ভিজেছে লোনা জলে। গণকবরের খবর হীম আতংক ছড়িয়েছে নগর থেকে নগরে, জনপদ থেকে জনপদে।

আততায়ীর আতংকে মানুষ মাস পার করেছেন প্রার্থনায়। সৃস্টিকর্তার সাহায্য কামনায়। মাসের শুরুতে যেখানে মৃত্যুর মিছিল ছিল ৫ হাজারের, মাস শেষে সে মৃত্যু এখন ৬৪ হাজারে।

ভাবা যায় বিশ্বের শীর্ষ এই দেশ বিস্ময় সৃস্টি করছে মৃত্যুতে। বিস্ময়ের পর বিস্ময় সব কিছুতে। বৃহৎ এই রাষ্ট্রের পরতে পরতে অদৃশ্য এক শক্রুর শব্দহীন আক্রমন। একের পর এক রেকর্ড ভঙ্গকরা সব শিরোনামঃ করোনায় বিশ্বে সর্বোচ্চ শনাক্ত, সর্বোচ্চ মৃত্যু এবং যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত (৬ মিলিয়নের উপরে) ৬৪ লাখ মানুষের কোভিড-১৯ পজেটিভ/নেগেটিভ টেস্ট সম্পন্ন করার মাধ্যমে।

যুক্তরাষ্ট্র এখন প্রায় ১১ লাখ করোনা শনাক্ত হওয়া মানুষের দেশ। এই সংখ্যা পুরো বিশ্বে শনাক্ত সংখ্যার এক তৃতীয়াংশ।

এপ্রিল মাসের শুরুতে ২ লাখ ১৫ হাজার ছিল শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা। এই দেশের অঙ্গরাজ্য নিউইয়র্ক এখন পৃথিবীর শীর্ষে রয়েছে করোনা শনাক্ত বিচেনায়।

এখন নিউইয়র্কে শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা ৩ লাখ ১১ হাজারের উপরে। মাসের শুরুতে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখের অনেক নীচে প্রায় ৮৪ হাজার।

এক মাসে নিউইয়র্কে শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ২ লাখ।

মাসের শুরুতে মৃত্যু ছিল ২ হাজার ২১৯ জন, এপ্রিল মাসের শেষদিনে সেটি দাড়িয়েছে ২৩ হাজার ৭৮০জন। এক মাসে ২০ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়েছে করোনা মহামারী।

যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে শিশুদের শেখানো হয় “দিস ইজ ওকে ইউ নট এ্যাবল, বাট দিজ ইজ নট ওকে ইউ নট ট্রাই”। এই বাণীতে দীক্ষিত আমেরিকাবাসীর চেষ্টায় মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসেছেন ১ লাখ ৫২ হাজার মানুষ।

সুস্থ হয়ে মৃত্যুমুখ থেকে যারা ফিরে এসেছেন তারা বলছেন আমরা কিয়ামত দেখে এসেছি। হাসপাতাল থেকে ফিরে আসা রোগীরা দিয়েছেন চিকিৎসক, নার্সদের আন্তরিক সেবা এবং জীবন বাচানোর প্রচেস্টার বর্ননা। হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা অবহেলা,কিংবা অব্যবস্থাপনার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

প্রাষঘাতি করোনা ভাইরাস এক অদৃশ্য শক্রু। এই রোগ সৃস্টি করেছে ভয়, আবেগ, আর্তনাদ, আহাজারী সারা বিশ্বময়।

এই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসক, নার্স, পুলিশ, ফায়ারব্রিগেডে কর্মরত কর্মী, সাংবাদিক, সম্মূখসারীতে কাজ করা বীরদের প্রাণ কেড়েছে।

হারিয়ে গেছেন কমিউনিটির শীর্ষ অনেক নেতা, ক্রীড়াবিদ, এমটিএ কর্মকর্তা, মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন পেশার মানুষের জীবন। কাউকে করেছে পিতা-মাতা হারা,কাউকে করেছে স্বামীহারা। কেউ কেউ স্ত্রী হারিয়েছেন, আছে পিতৃবিয়োগ, মাতৃবিয়োগ এর অসংখ্য গল্প।

এই মহামারীতে হতাশাগ্রস্থ প্রবাসীদের পাশে দাড়িয়েছে বিভিন্ন বৃহৎ কমিউুনিটি সংগঠন ফলে জানাজা,দাফনসহ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় বিদায় জানানো হয়েছে প্রিয়জনকে যারা করোনায় জীবন দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে টেস্টিংকে গুরুত্ব দেয়ার কারনে ৩০ এপ্রিল নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ৩১ হাজার।

মোট শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা ১০ লাখ ৯৫ হাজার এর উপরে। মোট মৃত্যু ৬৩ হাজার ৮৬১ জন।

২৪ ঘন্টায় মৃত্যু ২ হাজার ২০৫ জন। নিউইয়র্কে মোট শনাক্ত রোগী প্রায় ৩ লাখ ১১ হাজার জন।

মৃত্যু ২৩ হাজার ৭৮০ জন, ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু ৩০৬ জনের। সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।

এই মে মাসেই নিউইয়র্ক সহ অন্যান্য বড় বড় রাজ্যে লকডাউন তুলে নেয়া হবে এমন প্রত্যাশা ও প্রার্থনা বাংলাদেশী সহ যুক্তরাষ্ট্রের সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি, গোষ্ঠীর মানুষের।

আজ নিউইয়র্ক সময় পহেলা মে-ও প্রথম প্রহরে।

একদিনে সুস্থ হওয়া এবং শনাক্ত হওয়ার মধ্যে আবার বিরাট ফারাক। মৃত্যু আবার বেড়েছে যুক্তরাস্ট্রের সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতির আবার অবনতি মাঝে মাস শুরু হয়েছে।

এসব তথ্য বৈশ্বিক তথ্যবাতায়ন ওয়াল্ডোমেটার থেকে পাওয়া গেছে। এই ওয়েবপেইজে ক্যালিফোর্নিয়ায় নতুন করে ৬ জনের মারা যাওয়ার তথ্য দেয়া হয়েছে।

শীর্ষ রাজ্যগুলোর চিত্র হচ্ছে, নিউজার্সীতে শনাক্ত ১ লাখ ১৮ হাজার এর উপরে, মৃত্যু ৭ হাাজার ২২৮ জন, সুস্থ মাত্র ১৫শ। টেস্ট করা হয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজারের।

মেসাচুসেট অঙ্গরাজ্য যেখানে শনাক্ত রোগী প্রায় ৬২ হাজার, মারা গেছেন ৩ হাজার ৫৬২ জন।

সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৪ হাজার, টেস্ট করা হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজারের। মিশিগানে মারা গেছেন ৩ হাজার ৭৮৯ জন।

এ যাবত শনাক্ত ৪১ হাজারের উপরে, এই রাজ্যে সুস্থতা ৭ হাজার জনের। টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজারের। ইলিনইস অঙ্গরাজ্যে মৃত্যু ২ হাজার ৩৫৫ জনের, শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ৫৩ হাজার, সুস্থতার তথ্য নেই।

৫০ হাজারের উপরে শনাক্ত রোগী এখন ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে, মৃত্যু ২ হাজার ২৯ জনের, সুস্থতা ৪ হাজার জনের,টেস্ট করা হয়েছে ৬ লাখ ২৫ হাজার মানুষের শরীরে।

পেনসেলভেনিয়ায় শনাক্ত প্রায় ৪৮ হাজার, মারা গেছেন ২ হাজার ৫৪১ জন, সুস্থ হওয়ার সংখ্যা ২ হাজার, টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার জনের মধ্যে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৮৫৫ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930