শিরোনামঃ-

» জিরো থেকে হিরো বনেছেন ফলিক; ছেলেকে বানিয়েছেন অস্ত্র বাহিনীর প্রধান

প্রকাশিত: ০৩. জুন. ২০২০ | বুধবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ

ছিলেন কন্টাকটর, ড্রাইভার, শ্রমিক নেতা শেষে কোটিপতি।

নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম নিয়ে তিনি আজ রাতারাতি হয়ে গেলেন কোটিপতি।

আছে প্রাইভেট কার, দামি বাড়ি, ক্যাডার বাহিনী যার নেতৃত্বে অবৈধ অস্ত্রদারী নিজের পুত্র সন্তান।

বিভিন্ন লাইনে তার মালিকাধীন বেশ ক’টি গাড়ীও আছে।

তাকে তোয়াজ করে চলতে হয় পুলিশ প্রশাসনকে।

রাজনীতির বড় নেতারা তাকে হাতে রাখেন ক্ষমতাকে ধরে রাখতে। তিনি সিলেটের পরিবহণ রাজ্যের মুকুটহীন রাজা সেলিম আহমদ ফলিক।

পরিবহন শ্রমিকদেরকে কাজে লাগিয়ে তিনি ফায়দা হাসিল করেন। সময়ে অসময়ে পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি তার প্রধান অস্ত্র। কাউকেই পাত্তা দেন না।

শ্রমিকদের নামে কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলে-সেই টাকায় বিত্ত বৈভব গড়ে তুলেছেন।

একসময়ে বিএনপি রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও এখন তিনি আওয়ামী ঘড়ানার শ্রমিক নেতা।

বিএনপি জামাতের পৃষ্টপোষকতায় নানা সময়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেও তার জুড়ি নেই।

বিগত সময়ে দক্ষিন সুরমাস্থ বাস টার্মিনাল দখল নিয়ে জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদককে পেটাতেও তার বাহিনী ভুল করেনি।

এসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ তাকে গ্রেফতারেরও দাবী তুলেছিলো। সেলিম আহমদ ফলিক জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি। এখন আছেন পরিবহণ শ্রমিকদের তোপের মুখে।

শ্রমিকদের ধাওয়া খেয়ে ঢুকতে পারেননি টার্মিনালে।

জীবন বাঁচাতে স্থানীয় এনা পরিবহণ কাউন্টারে আশ্রয় নিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন।

আজ নিজের সন্তানের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ফলিকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে টার্মিনালে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে সাধারন শ্রমিকরা তাদের ধাওয়া করে। এ নিয়ে পরিস্থিতি এখন অনেকটা ঘোলাটে।

জানা যায়, লকডাউনের সময় পরিবহণ শ্রমিকরা তার কাছ থেকে কোন ধরণের সহযোগিতা না পাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে ওই অবস্থার।

শ্রমিকরা বলেছেন, শ্রমিকদের একটি তহবিল রয়েছে। ওই তহবিল থেকে তাদের সহযোগিতা পাওয়ার কথা। কিন্তু দুর্দিনে সহযোগিতা না করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।

এখন শ্রমিকরা ২৬ মাসের হিসেব চেয়েছেন ফলিকের কাছে। হিসেব না দিয়ে অফিসে প্রবেশে ফলিকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন শ্রমিকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লকডাউনের সময় বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকরা কোন ধরনের সহযোগিতা না পেয়ে গত ২৬ রমজান জড়ো হন জেলা পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসে। সেলিম আহমদ ফলিকের কাছে শ্রমিকরা টাকার হিসাব চান। ফলিক সে হিসাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে- শ্রমিকরা তাকে ধাওয়া করেন। প্রাণ বাঁচানোর জন্য দৌঁড়ে গিয়ে এনা কাউন্টার আশ্রয় নেন এবং বেঁচে যান ফলিক। শ্রমিকদের হিসাব অনুযায়ী ফলিকের কাছে তাদের পাওনা ৫৯ লাখ টাকা।

পরবর্তীতে ফলিকের ছেলে সশস্ত্র অবস্থায় সন্ত্রাসী নিয়ে টার্মিনালে মহড়া দেয়ারও চেষ্টা করে। কিন্তু শ্রমিকদের ধাওয়ার মুখে তারাও এনা পরিবহণের কাউন্টারে গিয়ে আশ্রয় নেয়।

সিলেট জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা জানান, তারা দিন-রাত পরিশ্রম করার পরও সংগঠনে চাঁদা প্রদান করে আসছেন।

তাছাড়া তাদের নামে বিভিন্নভাবে চাঁদা আদায় করা হয়। সেই টাকা দিয়ে ফলিক ও তার দলবল হচ্ছেন আঙুল ফুলে কলাগাছ।

ফলিক রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করছেন দীর্ঘদিন থেকে এমন অভিযোগও পরিবহন শ্রমিকদের।

সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সাবেক সহ সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, সেলিম আহমদ ফলিকের কাছে শ্রমিকদের পাওনা ৫৯ লাখ টাকা।

এই টাকা ফেরতের আল্টিমেটাম দেয়ার পর সেলিম আহমদ ফলিক ৩১ মে ১৪ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। বাকি টাকার তিনটি চেক দিয়েছেন।

২৫, ২৭ ও ৩০ জুন ওই তিনটি চেক দিয়ে টাকা উত্তোলনের সময় রয়েছে।

এছাড়া সংগঠনের ২৬ মাসের ব্যাংক স্ট্যাটমেন্টও চেয়েছেন শ্রমিকরা ।

এদিকে মঙ্গলবার (২ জুন) দুপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সহ সভাপতি ও সিলেট সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন সড়ক পরিবহণ শ্রমিকরা।

ফলিকের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ও সঠিক হিসাব দিতে না পারায় তার বিরুদ্ধে শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছেন।

দুপুর ১টার দিকে পুরাতন রেল স্টেশন সংলগ্ন বাবনা পয়েন্টে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন শ্রমিকরা এবং ফলিকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে শ্লোগান দিতে থাকেন।

জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের কয়েকদিন আগে সেলিম আহমদ ফলিকের কাছে গিয়ে করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের ঈদের খাদ্যসামগ্রী উপহার দেয়ার দাবী জানান শ্রমিক নেতা জসিম উদ্দিন।

এক্ষেত্রে শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের টাকা থেকে এই খাদ্যসামগ্রী উপহার দেয়ার প্রস্তাব দেন জসিম।

তখন ফলিক তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন এবং তহবিলের এক টাকাও তিনি এই বাবদ খরচ করবেন না বলে জানিয়ে দেন। তখন থেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন শ্রমিকরা।

এরপর শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফলিকের কাছে কল্যাণ তহবিলের হিসাব চাইলে আড়াই কোটি টাকার মধ্যে তিনি মাত্র ৪১ লাখ টাকার হিসাব দেন। এর প্রতিবাদে আজ আন্দোলনের ডাক দেন শ্রমিকরা।

মিতালী শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মিলাদ আহমদ রিয়াদ জানান, শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের প্রায় আড়াই কোটি টাকা থাকার কথা।

কিন্তু সেলিম আহমদ ফলিক আমাদের হিসাব দিয়েছেন মাত্র ৪১ লাখ টাকার। বাকি ২ কোটি টাকা তিনি আত্মসাত করেছেন।

শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের পুরো টাকার হিসাব না দিলে তাকে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।

এই টাকা দিয়ে তিনি এক ছেলেকে আমেরিকা পাঠিয়েছেন এবং বোনের বিয়েতে খরচ করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এদিকে, শ্রমিকদের আন্দোলনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছেছে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ।

এ ব্যপারে সিলেট সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিকের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৭০১ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930