শিরোনামঃ-

» সিলেটে শ্রদ্ধা ভলোবাসায় সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণ

প্রকাশিত: ১০. জুলাই. ২০২৪ | বুধবার

স্টাফ রিপোর্টারঃ

সিলেটে শ্রদ্ধা ভলোবাসায় বিশ্ব বরণ্য কূটনীতিবিদ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার প্রয়াত হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি ও শ্রদ্ধা ভালোবাসায় সিলেটে তাকে স্মরণ করা হয়েছে।

বরেণ্য এ ব্যাক্তির ২৩তম মৃত্যুবার্ষিক উপলক্ষে আজ বুধবার সকাল থেকে দিনব্যাপী ঢাকা ও সিলেটে রাজনৈতিক, সামাজিক পারিবারিক ও স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

কর্মসূচীর মধ্যে সিলেটে মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কবরে ফাতেহা পাঠ ও কবর জিয়ারত, খতমে কোরআন, আলোচনাসভা, মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও দুস্থ ও অসহায় মানুষের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে খাদ্য বিতরণ করা হয়।

দুপুরে মরহুমের কবরে হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ,সিলেট সদরবাসী বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

বাদ জোহর সিলেটে দরগাহ মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে সিলেটের বিশিষ্টজনরা অংশনেন।

এসময় হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর স্মৃতি ও কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ সিলেটের আহবায়ক ও সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল খালিক, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সুজাত আলী রফিক, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক মকসুদ আহমদ মকসুদ, হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর পরিবারের সদস্য মাশহুন নোমান রশীদ চৌধুরী, এফবিসিসিআই এর পরিচালক ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, ক্রীড়া সংগঠক এ এইচ এম মালিক ইমন প্রমুখ।

উল্লেখ্য হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী ২০০১ সালের ১০ জুলাই তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯২৮ সালের ১১ নভেম্বর সিলেট শহরের দরগা গেইটস্থ রশিদ মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আব্দুর রশিদ চৌধুরী ছিলেন, অবিভক্ত ভারতের কেন্দ্রীয় বিধান সভার সদস্য এবং মাতা সিরাজুন নেছা চৌধুরী পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য । মরহুম স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ছিলেন একাধারে কুটনীতিক, আমলা ও রাজনীতিক। তিনি ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন।

কূটনীতিক হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১-৭২ সালে দিল্লিতে বাংলাদেশ মিশনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি অসীম সাহসিকতা দেখিয়ে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠন এবং স্বীকৃতি আদায়ে ৪০টির বেশি দেশের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে অন্তত ৩৪টি দেশের স্বীকৃতি আদায়ে সক্ষম হয়েছিলেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে কূটনৈতিক অঙ্গনে অসামান্য অবদান রাখেন সিলেটের বনেদি পরিবারের সন্তান হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। ওই সময় তিনি নয়াদিল্লিস্থ বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হিসেবে ভারতের সংসদ অধিবেশনে ভাষণ দেন।

বাংলাদেশি হিসেবে একমাত্র তিনিই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার গৌরব অর্জন করেছিলেন।

তিনি ১৯৭২ সালে জার্মানীতে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। এছাড়া সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং ভ্যাটিকানেও একই পদে অধিষ্টিত ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তিসংস্থা এবং জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থার প্রথম স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের সময় সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া আশ্রয়হীন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জার্মানিতে নিজ বাসায় আশ্রয় দিয়ে তাদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ গ্রহন করেন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী।

এ কারণে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর ওপর ক্ষিপ্ত হয় বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। তাঁকে ওএসডি করে দেশে নিয়ে আসা হয়।

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ‘কলেজ অব উইলিয়াম এন্ড মেরি’ থেকে ১৯৮৪ সালে ‘মাহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরস্কার’ লাভ করেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করে।

স্বাধীনতা পরবর্তীতে তিনি একাধারে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রদূত, পররাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং সবশেষে মহান জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন।

জাতীয় উন্নয়নের পাশাপাশি সিলেটের উন্নয়নে তিনি ছিলেন এক নিবেদিতপ্রাণ ব্যাক্তি।

জীবদ্দশায় তিনি সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং দৃষ্টিনন্দন সিলেট রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ সহ সিলেটে অসংখ্য রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। তার অবদানের কথা সিলেটবাসী এখনও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।

আধুনিক সিলেট বিনির্মানের একজন রূপকার হিসেবে তাঁকে সিলেটের মানুষ আখ্যায়িত করে থাকেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণ করলে জাতীয় সংসদের স্পিকার মনোনীত হন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এবং ২০০১ সালের ১০ জুলাই স্পিকার থাকাকালীন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করার মধ্য দিয়ে সেখানে চির নিদ্রায় শায়িত রয়েছেন জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তান। দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও কল্যাণে হুমায়ূন রশীদ চৌূরীর অবদানকে দেশ ও জাতি যুগে যুগে শ্রদ্ধাভরে স্মরন রাখবে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ১৬৬ বার

Share Button

Callender

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031