শিরোনামঃ-

» সরকারি বাহিনীর নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদে সিলেটে ‘গানমিছিল’

প্রকাশিত: ৩১. জুলাই. ২০২৪ | বুধবার

ডেস্ক নিউজঃ

সরকারি বাহিনীর নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদে সিলেটে ‘গানমিছিল’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা চারটায় সিলেট নগরীর চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদমিনার প্রাঙ্গণ থেকে গানমিছিল শুরু হয়ে নগরীর জিন্দাবাবাজার সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এই গান মিছিলের আয়োজক ছিল সিলেটের নাট্যসংগঠন নগরনাট, নাগরিক সংগঠন দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা ও সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন। বেলা চারটায় এই গান মিছিলের আয়োজক নগরনাটের কার্যনিবাহী সদস্য অরূপ বাউলের কণ্ঠে ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা কারো দানে পাওয়া নয়’ গান দিয়ে শুরু হয় গানমিছিল।

এতে অংশগ্রহণ করেন, সিলেটের নাট্য, সাংস্কৃতিক কর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মিছিলের অগ্রভাগে সিলেটের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা নেতৃত্ব দেন।

দেশে চলমান এই হত্যা, অবিচারের প্রতিবাদে এই গানমিছিলে গান পরিবেশন করেন নগরনাটের কার্যনিবাহী সদস্য উজ্জ্বল চক্রবর্তী, সদস্য আঁখি, স্বর্ণা, তন্বী, শাওন, রাজন, দেবর্ষি , রাজ, রাজ্যেশ্বরী, তিন্নিসহ সিলেটের সাংস্কৃতিক কর্মীরা। ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে এসে শেষ হয় গানমিছিল। গানের মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগানও দেন সিলেটের সাংস্কৃতিকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

গানমিছিল শেষে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে সামনে সমাবেশে কর্মসূচির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য দেন সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম।

তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র বিক্ষোভ দমনের নামে দেশে স্মরণকালের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হয়েছে। যা আমাদের মানবিক চেতনাকে ক্ষুব্ধ করেছে। সরকারের ব্যর্থতা, উষ্কানি ও নৃশংসতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র প্রত্যক্ষ করে সারাদেশের মানুষের মত আমরা স্তম্ভিত, ব্যথিত ও সংক্ষুব্ধ। মানুষ হিসেবে বিবেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সেই তাড়না থেকে এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে আমাদের স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করতে পথে নেমেছি।

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো সাধারণ মানুষের উপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়নি। আজকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উপর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, কোটা বিরোধী আন্দোলনের জন্য হেলিকপ্টার, সাজোয় যান থেকে গুলি করা হয়। পুলিশ মিছিলের সামন পিছন থেকে গুলি করেছে। ২১১ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ৪৫ শতাংশই শিক্ষার্থী। বয়সের হিসাবে শতকারা ৭৫ ভাগ অল্প বয়সী। এই যে নিরীহ শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হয়েছে আমরা মনে করি এটা রাষ্ট্রীয় গণহত্যা। এই গণহত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত আমরা চাই। এবং তদন্তের মাধ্যমে প্রতিটি হত্যার আলাদা আইন প্রক্রিয়া বিচার হবে এটা আমাদের মুখ্য দাবী। আজকে দেশে সংবিধান বিরোধী যে কার্যকলাপ হচ্ছে যেমন নিরাপত্তার নামে ডিবি অফিসে তুলে নেওয়া আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। যেখানে হাইকোর্ট বলেছে এটা জাতির সাথে মশকারা করা হচ্ছে। যে দেশের হাইকোর্ট সরকারের এসব কর্মকাণ্ডকে মশকরা বলছে সেখানে রাষ্ট্র অনবরত এসব কাজ অব্যাহত রাখছে। তাই আমরা মনে করি সরকার একের পর এক সংবিধান লঙ্ঘন করছে এর জন্য তাঁদেরও বিচার হওয়া দরকার। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এদেশের প্রতিটি নাগরিকের অবাদে চলাফেরার অধিকার আছে। কিন্তু আজকে কারফিউ দেওয়া হয়েছে। সান্ধ্য আইনের মত কালো আইন দিয়ে তাঁরা আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করছে। এটাও সংবিধান বিরোধী। তাই আমাদের দাবী এই সংবিধান বিরোধী কার্যকলাপের বিচার হোক।

সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবু বলেন, সারা দেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নানা শ্রেণী পেশার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই মানুষ হত্যার প্রতিবাদে আজ এই কর্মসূচী করেছি। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এরকম হত্যাযজ্ঞ আর কখনো হয়নি। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবীর সাথে সংহতি জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই আন্দোলন থেকে যদি মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয় আমরা এরও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং আন্দোলন থেকে যাঁরা সরকারি বেসরকারি স্থাপনা ভাংচুর করেছে তারও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু যেকোনো কারণে একটি স্বাধীন দেশে নির্বিচারে হত্যা করা চলতে পারে না। তাই এসব হত্যাকাণ্ডের আমরা বিচার দাবী করছি।

নগরনাটের কার্যনিবাহী সদস্য অরূপ বাউল বলেন, যেকোনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই দেশে হত্যাকাণ্ড করা হয়। কারণ বিচার নেই এই দেশে। চলমান এই ছাত্রদের আন্দোলনে শিশু, যুবক, বৃদ্ধ, ছাত্র, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবীসহ সব ধরনের মানুষকে হত্যা হয়েছে। আমরা মনে করি এই নির্বিচারে হত্যার দায় সরকারি বাহিনীর। আমরা যেহেতু সংস্কৃতি কর্মী তাই আমরা গানে গানে সরকারের এই হত্যাযজ্ঞের বিচার চেয়েছি রাজপথে।

সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের সভাপতি ডা শাহজামান চৌধুরী বাহার, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সিলেট বিভাগীয় সভাপতি সৈয়দা শিরিন আক্তার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. দিলারা রহমান, রাজনৈতিক সংগঠক এডভোকেট আনসার খান, উজ্জ্বল রায় ও রেজাউল কিবরিয়া, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাবেক সভাপতি মনির হেলাল, আইনজীবি অরূপ শ্যাম বাপ্পি ও জাকিয়া জালাল, দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা-র সমন্বয়ক দেবাশীষ দেবু, নাট্যকর্মী উজ্জ্বল চক্রবর্তী, নাহিদ পারভেজ, বাপ্পী ত্রিবেদী, রাজিব রাসেল, দেবুজ্যেতি দেবু , মলয় চক্রবর্তী, রিপন চৌধুরী, নয়ন নিমু, নির্বাণ জনি, স্থপতি প্রসেনজিৎ রুদ্র, আয়কর উপদেষ্টা মুখলেছুর রহমান, যুব ইউনিয়নের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিউর রাফু, সাবেক ছাত্রনেতা, খালেদ মুরশিদ মুন্না, কিবরিয়া চৌধুরী সুমন ও শহীদুজ্জান পাপলু, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আবাসিক কর্মকর্তা রোমেনা বেগম রোজী, শিশু কিশোর সংগঠন উষা’র পরিচালক নিঘাত সাদিয়া।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ২১৯ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930