নিউজ ডেস্কঃ

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রবিবার (৪ আগস্ট) থেকে অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু করবে।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে এই সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তাঁরা। আন্দোলনে রবিবার থেকে সারাদেশে কী চলবে, কী চলবে না- কী খোলা থাকবে, কী থাকবে না- তা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে শনিবার (৩ আগস্ট)।

আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ শনিবার বিকালে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে বলেন- অসহযোগ আন্দোলনের সময় হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, জরুরি পরিবহন সেবা (ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন), অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন, জরুরি ইন্টারনেট-সেবা, জরুরি ত্রাণসহায়তা ও এ খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিবহন সেবা চালু থাকবে।

তবে বাংলাদেশের কোন নাগরিক কোন কর বা খাজনা দেবেন না। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল সহ কোন ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না।

সবধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও কলকারখানা বন্ধ থাকবে। কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোন ধরনের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবেন না। সব ধরনের সরকারি সভা-সেমিনার ও আয়োজন বর্জন করবেন। বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোন ধরনের পণ্য খালাস করবেন না।’

আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ‘দেশের কোন কলকারখানা চলবে না, গার্মেন্টসকর্মী ভাই-বোনেরা কাজে যাবেন না। গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। শ্রমিকেরা কেউ কাজে যাবেন না। জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রবিবার ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে পুলিশ সদস্যরা রুটিন দায়িত্ব ছাড়া কোন ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু থানা-পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন দায়িত্ব পালন করবে।

বিজিবি ও নৌবাহিনী ছাড়া অন্যান্য বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের বাইরে দায়িত্ব পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও উপকূলীয় এলাকায় থাকবে।’

আসিফ বলেন, ‘আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না। জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না। দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, তার জন্য সব অফশোর লেনদেন বন্ধ থাকবে।

বিলাসদ্রব্যের দোকান, শোরুম, বিপণিবিতান, হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানপাট বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।’

এদিকে, সিলেটে এই আন্দোলন নিয়ে জনসাধারণের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ২০ দিন ধরে চলা বিক্ষোভ-আন্দোলনে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে সিলেট। এই পর্যন্ত আন্দোলনে সিলেটের দুজন মারা গেছেন। একজন সাংবাদিক ও অপরজন বিদ্যুৎ কর্মকর্তা।

বিদ্যুৎ কর্মকর্তা যুবক শুক্রবার হবিগঞ্জে সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে গুলিবিদ্ধি হয়ে মারা গেছেন। এ অবস্থায় অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে সিলেটের খেঁটে খাওয়া মানুষ আরও বিপদে পড়বেন বলে তাঁদের মন্তব্য।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক সাংবাদিক-কে বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী অসহযোগ আন্দোলন পালনে আমরা রবিবার সকাল থেকেই সড়কে থাকবো।

জরুরি সেবার যানবাহন ছাড়া আর সরকারি-বেসরকারি কোন যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না। যেকোন পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।’

সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ময়নুল ইসলাম সাংবাদিক-কে বলেন, ‘আমাদের গণপরিবহন শ্রমিকরা পরিস্থিতি দেখে যানবাহন নিয়ে বের হবে।

সড়কে বেরিয়ে যদি জীবন হুমকির পড়ে তবে গণপরিবহন বন্ধই রাখতে হবে। আর যদি চলাচলের পরিবেশ থাকে তবে গাড়ি নিয়ে সড়কে বের হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কোন নির্দেশনা আমাদের দেওয়া হয়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হবে।’