শিরোনামঃ-

» বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলা কমিটির উদ্যোগে কমরেড ডা. বীরেন্দ্র চন্দ্র দেব স্মরণে শোকসভা

প্রকাশিত: ১৭. আগস্ট. ২০২৪ | শনিবার

নিউজ ডেস্কঃ

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলা কমিটির উদ্যোগে কমরেড ডাঃ বীরেন্দ্র চন্দ্র দেব স্মরণে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (১৭ আগস্ট) বিকেল ৪টায় কবি নজরুল একাডেমিতে এ শোকসভার আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড সৈয়দ ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক কমরেড খায়রুল হাছানের সঞ্চালনায় শোকসভার শুরুতেই কমরেডের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

এরপর দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন এবং উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী সিলেট জেলার শিল্পীরা কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল পরিবেশন করেন।

আলোচনা সভার শুরুতে কমরেড ডা. বীরেন্দ্র চন্দ্র দেবের জীবনী পাঠ করেন, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল মিন্টু।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি কমরেড খন্দকার লুৎফুর রহমান।

বিশেষ অতিথি পার্টির কেন্দ্রীয় সংগঠক ও হবিগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড পীযুষ চক্রবর্তী, ডা. বীরেন্দ্র চন্দ্র দেব এর পুত্র ডা. বিপ্লব দেব, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সিলেট জেলার সম্পাদক কমরেড আনোয়ার হোসেন সুমন, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি পরিষদ সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল হাসান চৌধুরী, এডভোকেট শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলেন, কমরেড ডা. বীরেন্দ্র চন্দ্র দেব ১৯৫১ সালের ২১ জানুয়ারি হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বারীন্দ্র চন্দ্র দেব এবং মাতার নাম রাজমোহিনী দেব।

চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। কমরেড বীরেন্দ্র চন্দ্র দেব প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন, কাকাইলছেও গ্রামের চৌধুরী বাড়ির (শ্যামপুর) পাঠশালায়। ১৯৬৬ সালে মামার বাড়িতে থেকে বিঢ়াটের এ.বি.সি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন।

১৯৬৭ সালে হবিগঞ্জের বৃন্দাবন কলেজে ভর্তি হন। কলেজে পড়াকালীন সময়ে তিনি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সংস্পর্শে আসেন। তখন থেকেই তিনি একটি শোষণহীন সমাজ বিনির্মাণের সংগ্রামী পথযাত্রায় অংশীদার হয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে সবার অলক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্পে চলে যান। ট্রেনিং নিয়ে দেশে আসার পর দুর্ভাগ্যবশত কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। ১৯৭৫ সালে তিনি আজমিরীগঞ্জে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি গঠন করেন।

ক্ষেতমজুর সমিতির মাধ্যমে ভূমিহীন কৃষকদের নিয়ে স্থানীয়ভাবে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। তখন থেকেই তিনি সরাসরি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে যুক্ত হন। এই সংগ্রামী নেতা ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং এক পর্যায়ে কারাবরণ করেন।

পেশাগত কারণে ১৯৯৫ সালে তিনি সিলেট চলে আসেন। প্রগতিমনস্ক মানুষ হিসেবে এখানে তিনি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠির সাথে যুক্ত হয়ে নিবেদিতপ্রাণ সদস্য হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেটে কমিউনিস্ট পার্টির স্থানীয় কমিটির সাথে তাঁর যোগাযোগ স্থাপিত হয় এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে থাকেন। ২০১২ সালে তিনি সিলেট জেলার কমিউনিস্ট পার্টির সাথে পূর্ণাঙ্গ ও আনুষ্ঠানিক ভাবে যুক্ত হন। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে পার্টির আন্দোলন সংগ্রামে তিনি সর্বদাই ছিলেন অগ্রবর্তী।

পার্টির অবশ্যপালনীয় কতিপয় কর্তব্য সম্পাদনে তিনি ছিলেন আদর্শস্থানীয়। তিনি সকল সভা সমাবেশে সময়মতো উপস্থিত হওয়া, মাঠের আন্দোলন সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ, সদস্য সংগ্রহ, পার্টির পত্রিকা ও ডায়েরি সংগ্রহ ও প্রচার, পাঠচক্র পরিচালনা, সবার সাথে হৃদ্যতা পূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।

তিনি দীর্ঘদিন সিলেট জেলা কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাঁর এ শূণ্যতা পূরণ হবার নয়। তাঁর নিজ এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে তিনি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

তিনি ভূমিহীন মানুষের ভূমির ব্যবস্থা করা, অসচ্ছল ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, শীতার্থ মানুষের মাঝে বস্ত্র বিতরণ, মেধাবী ও অসচ্ছল ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতেন। গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার ব্যাপারে তিনি সজাগ দৃষ্টি রাখতেন। মেয়েরা যাতে নির্বিঘ্নে স্কুলে যাতায়াত করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

এলাকার কলেরা রোগীদের সেবা করে ও মৃতদেহ সৎকার করে তিনি উজ্জ্বল মানবিক দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। নিজ এলাকায় থাকাকালীন তিনি প্রায়ই বিভিন্ন মনীষীদের জন্মদিন উদযাপন, জাতীয় দিবস পালন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। বই পড়া, সংগ্রহ করা ও বিতরণ করা ছিল তাঁর অন্যতম শখ।

তাঁর দাদু ও দিদিমার নামে নিজ বাসায় প্রতিষ্ঠা করেন, বামাচরণ-বিমলা স্মৃতি পাঠাগার যেখানে এক হাজারেরও বেশি বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে।

পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন স্বনামধন্য হোমিও চিকিৎসক। মির্জাজাঙ্গল, সিলেটে অবস্থিত স্বামী বিবেকান্দ হোমিও হলের তিনি স্বত্ত্বাধিকারী। প্রতি সপ্তাহে তাঁর উদ্যোগে হোমিও চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর আলোচনার আয়োজন করা হত। এতে নবীন প্রবীণ অনেকেই যোগদান করতেন।

তিনি বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এবং সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে সফলতার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে গেছেন। হোমিওপ্যাথি পরিষদের বিভিন্ন সভা সেমিনারে তিনি একজন সুবক্তা হিসেবে সমাদৃত ছিলেন। ২০২০ সালে মার্চ মাসে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়।

এ সময় তিনি মাঝে মাঝে রোগী দেখতেন। এক সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।

১৬ জুন ২০২৪ তৃতীয় বারের মত ভারতের বেলুড়ে চিকিৎসার জন্য যান এবং ২৭ জুন ফিরে আসেন কিন্তু শারীরিক অবস্থার আর উন্নতি হয়নি।

১৫ জুলাই ২০২৪ বিকাল ৪.৪০ মিনিটে সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে তিনি চিরবিদায় নেন। মৃত্যুকালে এক ছেলে দুই মেয়ে নাতি নাতনি আত্মীয় স্বজন সহ অসংখ্য গুণগ্রাহি রেখে গেছেন। লাল সালাম কমরেড ডাঃ বীরেন্দ্র চন্দ্র দেব।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৩৫ বার

Share Button

Callender

September 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30