শিরোনামঃ-

» সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: ১৪. সেপ্টেম্বর. ২০২৪ | শনিবার

সিলেট জেলা বিএনপি নেতা পাপলুর ভূমি দস্যুতা ও সিরিজ মামলাবাজির শিকার ব্যবসায়ী মাছুম

নিউজ ডেস্কঃ

সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলুর দ্বারা শাহপরান রয়েল সিটি প্রাঃ লিঃ এর ভূমি হারিয়ে এবং একের পর এক মামলার শিকার হয়ে চরম নির্যাতিত হয়েছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ১নং মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের মন্দিরখলা গ্রামের বাসিন্দা ও রয়েল সিটির পরিচালক নিরীহ ব্যবসায়ী আলী আশরাফ খান মাছুম। চলতি বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বলবান হয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে বিএনপি নেতা পাপলু এসব অপকর্ম করেছেন বলে সিলেট প্রেসক্লাবের এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী মাছুম।

তিনি জানান, গত ৫ আগষ্ট পট-পরিবর্তন পরবর্তী অবস্থায় সিলেটের আদালত ও বিভিন্ন থানায় সিদ্দিকুর রহমান পাপলুর প্ররোচনায় এ পর্যন্ত ৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২ টায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান শাহপরান থানার খাদিমপাড়া ৩নং রোডস্থ শাহপরান রয়েল সিটি প্রাঃ লিঃ যার রেজেস্ট্রেশন নম্বর সি-৬৪২১৪ এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৬ সালের ১৬ অক্টোবর। এরপর থেকে সুন্দরভাবে আমারা আমাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাদের কোম্পানীর নামে ১৯/১০/২০০৬ ইংরেজি তারিখে ১৫,২৩২ নং দলিলে ৫ একর ৫০ শতক ভূমি রেজিস্ট্রি করা হয় যার মৌজা- বহর, জেএলনং ৭০ এবং দাগ নং-৩৫৬১। উক্ত ভূমির পাশে শাহ আশরাফ হোসেন গং ৭ জনের মালিকানাধীন দখলবিহীন কিছু জায়গা ছিল। শাহ আশরাফ হোসেন সম্পর্কে সিদ্দিকুর রহমান পাপলুর চাচাত বোনজামাই। তৎকালীন ছাত্রদল নেতা সিদ্দিকুর রহমান পাপলু তার বাহিনী নিয়ে এ দখলবিহীন ভূমি এবং একই সাথে আমাদের কোম্পানীর সাইড অফিসও দখল নিতে হামলা চালান এবং নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেন।। এরুপ পরিস্থিতিতে পরবর্তীতে ২০০৭ সালে আপস মীমাংসায় আশরাফ হোসেন এর সাথে একটি চুক্তির মাধ্যমে এই দখলবিহীন ভূমি কোম্পানীর সাথে একীভূত করা হয়। এভাবেই আজ থেকে প্রায় ১৭ বছর পূর্বে তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও বর্তমান জেলা বিএনপি নেতা সিদ্দিকুর রহমান পাপলুর সাথে আমার পরিচয় হয়।’

তিনি বলেন, ‘শাহপরানে আমাদের কোম্পানীর জায়গার পাশে ফাতেমা বেগমের মালিকানাধীন ৩৬৪ শতক ভূমি বহর মৌজার জেল এল নং- ৭০, দাগ নং ৩৫৬১ ও ৩৫৫৬। ফাতেমা বেগমের পক্ষে আম-মোক্তার নিযুক্ত হইয়া সিদ্দিকুর রহমান পাপলু ১০/০৬/২০১৩ইং তারিখে ৬০২৬ নং বায়নামাপত্রের মাধ্যমে এ ভূমি ৫০ লক্ষ টাকা মূল্য সাব্যস্ত করিয়া বিভিন্ন তারিখে মোট ৪৩ লক্ষ টাকা নেয়ার পরে তিনি আমাকে দখল সমঝাইয়া দেন। কিন্তু অবশিষ্ট ৭ লক্ষ টাকা দিয়ে আমি ভূমি রেজিস্ট্রি করে দিতে বললেও তিনি বিভিন্ন কৌশলে এড়িয়ে যান। উক্ত ভূমিতে আমি সর্বমোট ২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে মাটি ভরাট, ভবন নির্মাণসহ নানান কাজ করাই। পরবর্তীতে তিনি ভূমি রেজিস্ট্রি করার বিনিময়ে আমার কাছে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন ও দখল নিতে উদ্যত হইলে গত ১৯/০৯/২০১৯ তারিখে সিলেট জেলা অতিরক্তি মেজিস্ট্রেট অদালতে ১৪৫ ধারায় মামলা দায়ের করি, যার নং-৩৪/১৯। এ ঘটনা সুরহা না হওয়ায় এবং আমাকে পনুঃ হুমকি ও চাঁদা চাওয়ায় আমি ২০২১ সালের ২১ আগস্ট শাহপরান থানায় জিডি করি যার নং- ১০১৯ এবং এসএমপি পুলিশ কমিশনার বরাবরে অভিযোগ দায়ের করি। পরবর্তীতে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে ২৯/০৮/২০২১ তারিখে আমি চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী পাপলুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করি, যার নং-শাহপরান থানা মামলা নং ২৫২/২০২১ইং। উক্ত মামলা সিআইডি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে আমার পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করে ১৬/৬/২০২২ ইং তারিখে। এ ঘটানায় ক্ষিপ্ত হয়ে সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে সিরিজ মামলা দায়ের করা শুরু করে। ২০২২ সালের ৩ জুলাই সিলেটের অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করে যার নং-৫২০। একই দিনে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করে সে, যার নং শাহপরান (রহ.) সিআর মামলা নাং ১৯১/২০২২ইং। পরবর্তীতে সে ১৪/০৮/২০২২ইং তারিখে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে অপর একটি মামলা দায়ের করে, যার নং- ১৯৪/২০২২। সে মামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং শাহপরান রয়েল সিটি প্রাঃ লিঃ এর ভূমি দখলের পায়তারা করে আসছিল। আমাদের কোম্পানীর নামীয় বহর মৌজার জেল এল নং ৭০, দাগ নং ৩৫৪৫ এর ৫ একর ৮৩ শতক ভূমি সিদ্দিকুর রহমান পাপলু ও আব্দুল হালিম চৌধুরী সেটেলমেন্ট অফিসের কিছু অসৎ অফিসার ও কর্মকর্তার সহযোগিতায় জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের নামে রেকর্ড করে নেয়। এছাড়াও বহর মৌজার জেল এল নং ৭০, দাগ নং ৪০৩১ এর ১ একর ২৯ শতক ভূমি ও সিদ্দিকুর রহমান পাপলু তাহার নামে রেকর্ড করান। প্রকল্পের ভূমি হতে প্রায় ২ কোটি টাকার মাটি পাপলু ও তাহার বাহিনী মিলে নিয়ে যায়। অথচ সিদ্দিকুর রহমান পাপলু শাহপরান রয়েল সিটি (প্রাঃ) (লিঃ) কোম্পানীর কোনো পরিচালক থাকা দূরের কথা কোনো সদস্যপদ তার নাই।’

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে বিএনপি নেতা সিদ্দিকুর রহমান পাপলু শাহপরান রয়েল সিটি প্রাঃ লিঃ এর ভূমি দখল করেছেন অভিযোগ করে ব্যবসায়ী মাছুম বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই থেকে আমাদের দেশের সাহসী ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা বৈষম্যময় কোটা পদ্ধতির সংস্কারের জন্য আন্দোলন শুরু করে। পরবর্তীতে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত শক্তির কাছে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের এ সুযোগ হাতছাড়া করেনি সুযোগসন্ধানী সিদ্দিকুর রহমান পাপলু। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে সে চলতি বছরের ৮ আগস্ট সে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে স্বশস্ত্র হয়ে শাহপরান রয়েল সিটি প্রাঃ লিঃ এর ভূমি দখলে হামলা চালায়। হামলা চালিয়ে সে কোম্পানীর চৌকিদার লুকু মিয়াকে মারধর করে ও তার জিনিসপত্র ভাংচুর করে এবং তাকে তার পরিবারসহ প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়ে কোম্পানীর দখলীয় ঘর থেকে বের করে দেয়। আমি এ ঘটনার পরে থানার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেনাবাহিনীর কাছে বারবার অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তৃু কোন প্রতিকার পাইনি। বিএনপি নেতা পাপলু কোম্পানীর জায়গা দখল করেই সে ক্ষান্ত হয়নি, পরবর্তীতে পাপলু বাহিনীর ১০-১২ জন লোক আখতার ও আমিনের নেতৃত্বে কোম্পানীর চৌকিধারকে ১৭ আগস্ট জোরপূর্বক সাদা স্ট্যাম্পে ও সাদা কাগজে টিপসই নেন। ১৮ আগস্ট শাহপরান রহ. থানায় এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করি। কিন্তু অদ্যবদি পর্যন্ত এ অভিযোগে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গত ৩০/০৮/২০২৪ইং তারিখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা পরিচয়ে আমাকে ফোন (০১৭১৭ ৭০৭৫২৪) দিয়ে উনার সাথে দেখা করার কথা জানান। আমি সিলেটের বাহিরে থাকার কারনে তার সাথে দেখা করতে পারিনি। পরে সিলেট আসলে গত ০৮/০৯/২০২৪ইং তারিখে আবারো ঐ কর্মকর্তা আমাকে ফোন দিয়ে চৌহাট্টা পয়েন্টে দেখা করার কথা জানান। ঐ সময় তিনি আমার প্রকল্পে না যাওয়ার হুমকি প্রদান করেন এবং প্রকল্পে গেলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি জানান। ’

ভূমি দখলের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে একের পর এক মামলাবাজির শিকার হচ্ছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমি কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী বা সমর্থক নই। কিন্তু আমাদের কোম্পানী শাহপরান রয়েল সিটি প্রাঃ লিঃ এর ভূমি দখলের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে মামলাবাজ সিদ্দিকুর রহমান পাপলু আমাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বানিয়ে আমাকে বেশ কয়েকটি মামলায় ফাসিয়েছে। যে মামলাগুলোর বাদী দক্ষিণ সুরমা কলেজের শিক্ষার্থী (১) সাজন আহমদ সাজু (২৫), পিতা- মোঃ জমির আহমদ, সাং- মিতালী ৫৮/বি, খারপাড়া, বাহারপাড়া, সিলেট কর্তৃক গত ২০ আগস্ট সিলেট অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন আদালতের মাধ্যমে সিলেট কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। (২) জুবের আহমদ, পিতা- সিরাজুল ইসলাম কর্তৃক ২১ আগস্ট সিলেট মেট্রোপলিটন ১ম ও দ্রুত বিচার আদালতে দায়ের করা মামলা, (৩) মোঃ জুবেল আহমদ স্বপন, পিতা- রফিকুল ইসলাম, সাং- ১৪৯ নবারুন, সোনারপাড়া, সিলেট কর্তৃক অতিক্তি চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে সিলেট কোতোয়ালী মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলা, (৪) রুবেল আহমদ (৩৫), পিতা আজিজুর রহমান এর মাধ্যমে কোতোয়ালী মডেল থানায় দায়েরকৃত বিস্ফোরক আইনে মামলা নং ৩৮২, তারিখ ২৬/৮/২৪ইং- এ আমাকে ১৯ নম্বর আসামী হিসেবে ফাসানো হয়েছে। এছাড়া কোতোয়ালী মডেল থানায় (৫) মাহবুব হোসাইন, পিতা মাহমুদ হোসেন কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা নং ৩৯৬, তাং ৩০/৮/২০২৪ এ আমাকে ২৩ নম্বর আসামী করা হয়েছে। (৬) আলাল আহমদ, পিতা হাবিব উল্লাহ কর্তৃক ৩ সেপ্টেম্বর দায়েরকৃত মামলা নং-৪০৫, (৭) সওদাগর আহমদ, পিতা বেলাল মিয়া কর্তৃক ৫ সেপ্টেম্বর শাহপরান থানায় দায়েরকৃত মামলা নং-২২১, এছাড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলুর নির্দেশে আমাকে সিরিজ মামলায় ফাসানোর অংশ হিসেবে এয়ারপোর্ট থানায় (৮) এম এ হাসান সাগর, পিতা এম এ কুদ্দুস এর দ্বারা দায়ের করা মামলা নং ৭৩ নং এ আসামী করা হয়েছে। একজন নিরীহ ব্যবসায়ী হয়ে এতগুলো রাজনৈতিক মামলায় আসামী হয়ে আমি বিস্মিত। আমি ও আমার পরিবারের কেউ কোনোকালে রাজনীতির সাতে জড়িত না থাকলেও কেবলমাত্র বিএনপি নেতা সিদ্দিকুর রহমান পাপলু’র ভূমি দখলের প্রতিপক্ষ হওয়ায় আমাকে ফাঁসাতে ও আমার কোম্পানীর ভূমি দখল করতে একের পর এক সিরিজ মামলায় আমার নাম যুক্ত করা হয়েছে। নিরীহ কোনো লোককে মামলায় না জড়াতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশ থাকার পরও অনৈতিক ফায়দা হাসিলে সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু কর্তৃক দল হিসেবে বিএনপির সুনাম ও গ্রহনযোগ্যতা বিনষ্ঠ করছে।’

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী আলী আশরাফ খান মাছুম শাহপরান রয়েল সিটি প্রাঃ লিঃ এর ভূমি দখলমুক্তসহ সকল অন্যায়ের বিচার, ব্যক্তিগত স্বার্থহাসিলের জন্য দায়েরকৃত সকল মামলা থেকে অব্যাহতি এবং সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু ও তার বাহিনীকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

fbt

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৬৩ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930