শিরোনামঃ-

» মে দিবসের মর্মবাণী, শ্রমিক মালিক ঐক্য জানি, ন্যূনতম বেতন পাচ্ছে না শ্রমিক

প্রকাশিত: ০২. মে. ২০১৬ | সোমবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসাবে পালন করছে; এ উপলক্ষে রোববার সাধারণ ছুটি।

সারাদেশে শ্রমিক সংগঠনগুলোর নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের রক্তস্নাত ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহের দিন মে দিবস। এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘মে দিবসের মর্মবাণী, শ্রমিক মালিক ঐক্য জানি।’

১৮৯০ সাল থেকে সারাবিশ্বে শ্রমিক সংহতির আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে মে মাসের ১ তারিখে ‘মে দিবস’ পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা আলাদা বাণী দিয়েছেন।

কল-কারখানার পাশাপাশি সব সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এদিন বন্ধ রয়েছে।

সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র, টেলিভিশন ও বেতারে সম্প্রচার করা হচ্ছে মে দিবসের তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে হে মার্কেটের শ্রমিকরা শ্রমের ন্যায্য মূল্য এবং ৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ করার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে।

আন্দোলন দমনে সেদিন শ্রমিকদের ওপর গুলি চালানো হয়। ১০ শ্রমিকের আত্মত্যাগে গড়ে ওঠে বিক্ষোভ। প্রবল জনমতের মুখে যুক্তরাষ্ট্র সরকার শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়।

১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সের প্যারিসে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর শ্রমিকদের সংগ্রামী ঐক্যের অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশেও প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। তবে দেশের বেশির ভাগ শ্রমজীবী এখনও জীবনযাত্রার ন্যূনতম চাহিদা পূরণে উপযুক্ত মজুরি পান না। সরকারি জরিপ বলছে, একজন গৃহকর্মীর দৈনিক আয় গড়ে ৯০ টাকা।

দেশে প্রায় ২০ লাখ গৃহ শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের মধ্যে অনেকে আবার বেতন পান না।

গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত বিবিএসের জরিপ বলছে, মিস্ত্রি বা যন্ত্রী হিসেবে যারা কাজ করেন, তাদের গড় বেতন ১২ হাজার টাকা। সেবা ও বিক্রয়কর্মীরা সাড়ে ১১ হাজার এবং কৃষি ও মৎস্যের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ৮ হাজার ৯০০ টাকা বেতন পান।

এ ছাড়া দারোয়ান, নির্মাণশ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও কুলি গড়ে ৮ হাজার ২০০ টাকা বেতন পান। আর অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত রিকশাচালক, গৃহকর্মী, নির্মাণশ্রমিক, নাপিত, ফেরিওয়ালা, ফুটপাতের হকারসহ অন্যদের আয় বা মজুরি আরও কম। গৃহকর্মীর দৈনিক গড় আয় সবচেয়ে কম।

প্রবীণ শ্রমিকনেতা এবং বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীরা যে মজুরি পান, তা অপর্যাপ্ত। বেশির ভাগই স্বামী ও স্ত্রী মিলে কাজ করে কোনোমতে টিকে থাকছেন। কেউবা ঋণের দায়ে জর্জরিত হচ্ছেন।

এই শ্রেণির মানুষ জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে বড় ধরনের আপস করছেন। শ্রমিকনেতারা বলছেন, মাসে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা মজুরি না দিলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে টিকে থাকা অসম্ভব।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৫ সালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে মাসে গড় বেতন বা মজুরি ছিল ১১ হাজার ৪৯৩ টাকা।

তবে এই গড় বেতনের মধ্যে ৩ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পাওয়া চাকরিজীবী রয়েছেন।

সরকারি হিসাবে দেশে এখন মোট শ্রমজীবী ও কর্মজীবীর সংখ্যা ৫ কোটি ৮৭ লাখ। প্রতিবছর ২০ লাখ নতুন শ্রমশক্তি যুক্ত হচ্ছে।

গত বছর প্রকাশিত বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫ বছরের ওপরে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার। এর বাইরে আংশিক কর্মসংস্থানে রয়েছে ২৩ লাখ। সব মিলিয়ে দেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় ৪৯ লাখ।

বেকাররা যেমন ভালো নেই, তেমনি কর্মজীবী অনেকে যে বেতন পান, তা দিয়ে নিজের ও পরিবারের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে পারেন না। এমনকি নিয়োগপত্র ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য হন অনেকেই।

বিবিএসের হিসাবে মাত্র ২৮ শতাংশের নিয়োগপত্র রয়েছে, বাকি প্রায় সবাই মৌখিক চুক্তিতে কাজ করছেন। তবে অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ২১ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানোর ফলে তারা কিছুটা স্বস্তিতে আছেন।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব এস এম জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রী পয়লা মে শ্রমিক সমাবেশে মজুরি কমিশন ঘোষণা করবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বনিম্ন মূল বেতন ১০ হাজার টাকা চাই, যা এখন আছে ৪ হাজার ১৫০ টাকা।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত শ্রমিকদের জন্য মজুরি কমিশন গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে।

সরকারি হিসাবে মোট শ্রমশক্তির ১২ দশমিক ৬ শতাংশ রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে। ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ রয়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বেশির ভাগই কৃষিতে নিয়োজিত।

তৈরি পোশাক খাতের একজন শ্রমিকের ন্যূনতম বেতন এখন ৫ হাজার ৩০০ টাকা। পোশাকশ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন ন্যূনতম মজুরি ১৫ হাজার টাকা করার দাবিতে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। এই খাতে শ্রমিকের সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে আনুষ্ঠানিক ৪২টি খাত রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত খাত ৫ বছর পর কমিশন গঠন করে। এর বাইরে অন্য খাতগুলো চাহিদা জানালে তা নিম্নতম মজুরি বোর্ডে পাঠানো হয়।

বোর্ড শ্রমিক ও মালিক প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতা সাপেক্ষে মজুরি নির্ধারণ করে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি চা-বাগান শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। চামড়াসহ কয়েকটি খাতে আলাপ-আলোচনা চলছে। এসব খাত থেকে চাহিদা এলে মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি নিম্নতম মজুরি বোর্ডে পাঠানো হবে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৭৪৪ বার

Share Button

Callender

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930