শিরোনামঃ-

» কবি নির্মলেন্দু গুণকে লেখা শেখ হাসিনার অসাধারণ ও দুর্লভ চিঠি!

প্রকাশিত: ০৪. মে. ২০১৬ | বুধবার

সিলেট বাংলা নিউজ বিনোদন ডেস্কঃ কোন এক প্রেক্ষিতে কবি নির্মলেন্দু গুণকে একটি অসাধারণ চিঠি লিখেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৮৮ সালের লেখা সেই চিঠি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
বন্ধুবরেষু গুণ,
আপনার অনুরোধে কিছু ছবি পাঠালাম। তবে আমার একটা অনুরোধ রাখবেন। ‘ত্রাণ বিতরণ করছি’ এ ধরনের কোনো ছবি ছাপাবেন না। মানুষের দুর্দশার ছবি যত পারেন ছাপান। আমার ধারণা এ ধরনের অর্থাৎ ত্রাণ বিতরণের ছবি টেলিভিশন ও খবরের কাগজে দেখে দেখে মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে গেছে।
ওরা গরিব, কিন্তু সেটা কি ওদের অপরাধ? একশ্রেণি যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ না করত তাহলে এরা কি গরিব হতো? কার ধন কাকে বিলাচ্ছে? যা কিছু আছে সকলে মিলে ভাগ করে ভোগ করলে একের কাছে অপরের হাত পাতার প্রয়োজন হতো না, ওদেরই সম্পদ লুট করে সম্পদশালী হয়ে আবার ওদেরই দুর্দশার সুযোগ নিয়ে সাহায্য দানের নামে হাতে তুলে দিয়ে ছবি ছাপিয়ে ব্যক্তিগত ইমেজ অথবা প্রতিষ্ঠা লাভের প্রয়াস আমি মানসিকভাবে কিছুতেই মেনে নিতে পারি না, আমার বিবেকে বাধে। তবুও অনেক সময় পারিপার্শ্বিক চাপে পড়ে অনেক কিছুই করতে হয়। আমিও করি।
বিবেকের টুঁটি চেপে ধরে অনেক সময় সমাজ রক্ষার তাগিদে, সাথীদের অনুরোধ বা অপরের মান রক্ষার জন্য এ ধরনের কাজ বা ছবি তুলতে হয় বৈকি। তবে যে যাই দান করুক না কেন, বিলি করুক না কেন, এটা তো ওই গরিব মানুষগুলোর অধিকার, তাদেরই প্রাপ্য।
ক্ষমতার দাপটে কেড়ে নেওয়া ওদেরই সম্পদ অথবা ওদের পেটের ক্ষুধা দেখিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে ভিক্ষে এনে এদের দান করা। এখানে ‘ক্রেডিট’ নেওয়ার সুযোগ কোথায়? এই ‘ক্রেডিট’ নিতে যাওয়াটা কি দুর্বলতা নয়? আত্মপ্রবঞ্চনা নয়?
কতকাল আর বিবেককে ফাঁকি দেবে? এই গরিব মানুষগুলোর মুখের গ্রাস কেড়ে খেয়ে আবার এদেরই হাতে ভিক্ষে তুলে দিয়ে ছবি ছাপিয়ে ইমেজ তৈরির পদ্ধতি আমি পছন্দ করি না।
আমি মনে করি যা দান করব তা নীরবে করব, গোপনে করব। কারণ এটা লজ্জার ব্যাপার, গর্ব করার ব্যাপার মোটেই নয়। গর্ব করার মতো কাজ হতো যদি এই সমাজটাকে ভেঙে নতুন সমাজ গড়া যেত। গর্ব করার মতো হতো যদি একখানা কাঙালের হাতও সাহায্যের জন্য বাড়িয়ে না দিত। ফুটপাথে কঙ্কালসার দেহ নিয়ে ভিক্ষের হাত না বাড়াতে সেটাই গর্ব করার মতো হতো। যে স্বপ্ন আমার বাবা দেখেছিলেন, সে দিন কবে আসবে?
আমার অনুরোধ আপনার কাছে, সেই ছবি ছাপাবেন না যে ছবি হাত বাড়িয়েছে সাহায্য চেয়ে আর সেই হাতে কিছু তুলে দিচ্ছি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে। অনেকেই তুলে থাকেন। আমার বড় অপরাধী মনে হয় নিজেকে। লজ্জা হয় গরিব মানুষদের কাছে মুখ দেখাতে। আমরা সমাজে বাস করি। দু’বেলা পেট পুরে খেতে পারি। ভালোভাবে বাঁচতে পারি। কিন্তু ওরা কি পাচ্ছে? ওদের নিয়ে এ ধরনের উপহাস করা কেন? ওরা বরদাশত করবে না একদিন জেগে উঠবেই— সেদিন কেউ রেহাই পাবে না।
আমার অনুরোধ আশা করি রাখবেন।
শুভেচ্ছান্তে—
শেখ হাসিনা
০৯/১০/৮৮”

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৭১২ বার

Share Button

Callender

December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031